স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বাংলাদেশে এলেই চট্টগ্রাম ছুটে আসেন খ্যাতিমান সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। সাহিত্যকর্ম ও দুই বাংলার মেলবন্ধন নিয়ে অতিবাহিত হয় আবেগঘন কিছু সময়। শুক্রবারও মেতে ওঠেন আলাপচারিতায়। তাঁর কথা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শ্রবণ করেন এই প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা। শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু হলে এই আলাপচারিতার আয়োজন করেন নগরীর সৃজনশীল পুস্তক বিপণি প্রতিষ্ঠান ‘বাতিঘর’। অনুষ্ঠান শুরু হয় সমরেশ মজুমদারেরই লেখা ‘জীবন যেন পদ্ম পাতার জল’ গানটি দিয়ে। এটি পরিবেশন করেন শিল্পী অনিন্দিতা। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন সাংবাদিক ও কবি বিশ্বজিৎ চৌধুরী।
বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক আবেগ, ব্যাপক আগ্রহ দুই বাংলার এই জনপ্রিয় সাহিত্যিকের। তিনি বলেন, এদেশের রাজনীতি ও মানুষের সংগ্রামের কথা অনেকেই লিখেছেন। কিন্তু মানুষের ব্যাপক পরিবর্তন শুরু হয় ১৯৪৭ সালের আগস্ট থেকে। এর আগেও হতে পারে। ভাষা আন্দোলন মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছে, সেটি হতে পারে। শেখ সাহেবের আন্দোলনও হতে পারে। এর বাইরেও আরেকটা জাগরণ আমি দেখতে পাই। সে জাগরণের গল্প লেখার খুব ইচ্ছে। সাহিত্যের জনপ্রিয়তা বা দীর্ঘজীবী হওয়া প্রসঙ্গে সমরেশ মজুমদার বলেন, ৫০ বছর পেরিয়ে গেলে চিরকালের সাহিত্য বলা হয়, কালোত্তীর্ণ উপন্যাস বলা হয়। ‘পথের পাঁচালী’ লেখার যোগ্যতা আমার নেই। এখনকার ছেলেমেয়েরা ‘দেবদাস’কে বড় মাপের উপন্যাস মনে করে না। ‘চিলেকোঠার সেপাই’ উচ্চমানের উপন্যাস হলেও জনপ্রিয় কি?
আলাপচারিতায় সমরেশ মজুমদার ফিরে যান সেই কালজয়ী রবীন্দ্রনাথে। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গানগুলো আমার কাছে মন্ত্রের মতো। ঈশ্বরের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই। কিন্তু আমার মনে দুঃখ পেলেই রবীন্দ্রনাথের গান শুনি। আবার মন ভাল হলেও রবীন্দ্রনাথের গান শুনি। এতে মন আরও ভাল হয়ে যায়। স্মৃতিচারণে উঠে আসে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ। বললেন, ঢাকায় এলেই হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কথা হতো। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত একত্রে থাকতাম। রাত ১২টার পর সে অন্য সঙ্গীদের চলে যেতে বলত। এরপর শুধু আমার সঙ্গে কথা চলত। তার বাসায়, নুহাশ পল্লীতে এবং আমেরিকার বিভিন্ন শহরে আমরা অনেক কথা বলেছি। দৃষ্টিনন্দন চা বাগানের কথা উঠে আসে সমরেশ মজুমদারের আলোচনায়। তিনি বলেন, বছরে অন্তত দু’বার চা বাগানে না গেলে দম বন্ধ হয়ে আসে। ঢাকায় প্রথম আসার স্মৃতিচারণ করে বলেন, প্রথমে আসা হয়েছিল ১৯৮৭ সালে। এরপর থেকে ঢাকার প্রতি আকর্ষণবোধ আরও বাড়ে। চট্টগ্রামের প্রতিও আকর্ষণের কথা জানান। উল্লেখ করেন পাঠকদের ভালবাসার প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, এখানে আসতে পেরেছি শুধু পাঠকদের ভালবাসায়। বাতিঘরের স্বত্বাধিকারী দীপঙ্কর দাশ বলেন, অসুস্থতা সত্ত্বেও আমাদের আমন্ত্রণে তিনি না করেননি। পাঠকের ভালবাসায় আজ তিনি এখানে উপস্থিত হয়েছেন। সঞ্চালক কবি বিশ্বজিৎ চৌধুরীও ছিলেন আবেগাপ্লুত। তিনি বলেন, সমরেশ মজুমদারের সাহিত্যচর্চার বয়স ৫০ পেরিয়েছে। তাঁর পাশে বসে কথা বলার সুযোগ পাওয়াটাও চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত তরুণ-তরুণী থেকে সকল বয়সের সাহিত্যপ্রেমীরা ছিলেন মনোমুগ্ধ শ্রোতা। অনেকেরই প্রশ্ন ছিল। একান্ত নিবিড় সান্নিধ্য পাওয়ার চেষ্টা ছিল ভক্ত ও পাঠকদের।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: