ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

ধৃত খাটাশের স্থান হলো বঙ্গবন্ধু ইকো পার্কে

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৫ ডিসেম্বর ২০১৮

ধৃত খাটাশের স্থান হলো বঙ্গবন্ধু ইকো পার্কে

সমুদ্র হক, বগুড়া ॥ ‘খাটাশ’ নামটি অতি দুষ্টুমি ও শয়তানির প্রতীকী শব্দ হয়েছে বহু আগে। এই খাটাশ একটি প্রাণী। বিপন্নের খাতায় উঠেছে। এদের অনেক নাম। গন্ধগোকুল, বাঘশাইল্যা, ভোন্দর, সাইরেল। খাবার কলা পেয়ারা ফল ফলাদি, তালের রস। ফল না পেলে এরা গৃহস্থের বাড়িতে হানা দিয়ে মুরগি কবুতর ধরে খায়। তবে ফসলের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ, ইঁদুর, শামুক খেয়ে এরা কৃষককের উপকারও করে। এই প্রাণীর ইংরেজী নাম এশিয়ান পাম সিভিট। বিজ্ঞান নাম প্যারাডক্সুরাস হেমাফরোডিটাস। দেশের প্রতিটি এলাকায় এদের বাস। হালে বন জঙ্গল কমে যাওয়ায় এরা খাবারের সন্ধানে গ্রামে কৃষক ও গৃহস্থ বাড়িতে প্রবেশ করছে। এমনই এক গন্ধগোকুল সোমবার রাতে ধরা পড়েছে বগুড়ার গাবতলি উপজেলার চককাতুলি গ্রামের কৃষক আব্দুল মোমিনের বাড়িতে। তার ছেলে কলেজ শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন জানালেন, ক’দিন ধরে এই গন্ধগোকুলের আনাগোনা বেড়ে গিয়েছিল। রাতে ফাঁদে আটকা পড়েছে। গন্ধগোকুল আটকের বিষয়টি জেনে বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থীদের পরিবেশবাদী সংগঠন টিম ফর এনার্জি এ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট রিসার্চের (তীর) সভাপতি আরাফাত রহমান তার সদস্যদের নিয়ে ওই গ্রামে যান। তারপর গন্ধগোকুলকে রক্ষা করে বঙ্গবন্ধু ইকোপার্কে (সিরাজগঞ্জ) ছেড়ে দেয়ার উদ্যোগ নেন। তিনি ওই ইকোপার্কের দেখভালের দায়িত্ব পাবনা জেলা বন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপর মঙ্গলবার বিকেলে গন্ধগোকুলকে ইকো পার্কে নিয়ে যাওয়া হয়। এই প্রাণীর গায়ের গন্ধ পোলাও চালের মতো হওয়ার এর নাম শাইল্যা। শিকারি প্রাণী হওয়ায় গ্রামে বলা হয় বাঘশাইল্যা। তালের রস পান করে বলে এর আরেক নাম তাল খাটাশ। এরা নিশাচর। কখনও বলা হয় গাছ খাটাশ। এদের টাডি বিড়ালও বলা হয়। অন্ধকারে এরা অন্য প্রাণীর গায়ের গন্ধ শুঁকে চিনতে পারার অসাধারণ ক্ষমতা আছে। ইন্টারন্যশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন নেচারের (আইইউসিএন) বিবেচনায় বিশ্বের বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় উঠেছে এই গন্ধগোকুল। নানা রঙের গন্ধগোকুলের মধ্যে ধূসর ও কালো রঙের বেশি। অনেকটা শিয়াল আকৃতির। মাঝারি আকারের স্তন্যপায়ী এই প্রাণীর নাকের আগা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত ৯২ থেকে ১১৫ সেন্টিমিটার। এর মধ্যে লেজই ৪৪ থেকে ৫৫ সেন্টিমিটার। ওজন আড়াই কেজি থেকে ৫ কেজি। এরা গোট্টাগাট্টা। প্রজননের সময় এরা একাকী থাকে। ছানা প্রসব করার পর গাছের কুটুরিতে রাখে। ছয় মাসের মধ্যে ছানা সাবালক হয়। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, মালোয়েশিয়া, কম্বোডিয়া ও ফিলিপিন্সে এদের প্রাচীন আবাস।
×