ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৩০ নভেম্বর ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

আহা, আনিসুল হক! আহারে! এভাবে চলে গেলেন আপনি? বিশ্বাস হয় না। অথচ চলে যাওয়ার আজ এক বছর পূর্ণ হলো! এই ঢাকার জন্য কথা বলার লোক অনেক আছে। কাজের লোকের অভাব। সে অভাব আপনি দূর করেছিলেন। প্রত্যাশার চেয়েও বেশি পেয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নাগরিকরা। কিন্তু আরও অনেক কিছু তো বাকি ছিল করার। সব ফেলে চলে গেলেন। কেন? আপনার মতো কর্মোদ্যমী সাহসী সৎ একজন নগর পিতা আর কি পাওয়া যাবে? হ্যাঁ, দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে। যতদিন যাচ্ছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে শূন্যতা। আজ শুক্রবার ৩০ নবেম্বর সাবেক মেয়র আনিসুল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছরের ২৯ জুলাই সুস্থ সবল হাসিখুশি মানুষটি লন্ডনে যান। ব্যক্তিগত সফর। আর ফেরেননি। তার নিথর দেহ দেশে আসে। জানা যায়, হঠাৎই মস্তিষ্কের রক্তনালীর প্রদাহ ধরা পড়লে ১৩ আগস্ট তাকে সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পর থেকে অপেক্ষা আর অপেক্ষা শুধু। কিন্তু আর ওঠে দাঁড়াতে পারেননি তিনি। এর আগে আনিসুল হক ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। উত্তর ঢাকার উন্নয়নে যুগান্তকারী অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তিনি। এভাবে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন। মানুষ যখন তাকে ঘিরে নতুন নতুন সব স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ঠিক তখন চিরবিদায় নেন আনিসুল হক। ঢাকার জন্য এর চেয়ে মন্দের আর কী হতে পারে? রাজনীতির আলোচনায় আসা যাক। সারাদেশের মতো শহর ঢাকাও নির্বাচন নিয়ে মেতেছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন ঘিরেই সব জল্পনা-কল্পনা। বরাবরের মতো এবারও অজস্র প্রার্থী। সবারই চরিত্র ‘ফুলের মতো পবিত্র।’ শুধু ঢাকাতেই পাওয়া গেছে এমন ‘উন্নত’ চরিত্রের ২১৩ জনকে। মাত্র ১৫টি আসনের বিপরীতে এই বিপুল সংখ্যক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বুধবার ছিল শেষ দিন। শেষদিনে সেগুনবাগিচার ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে এসে মনোনয়নপত্র জমা দেন তারা। সবচেয়ে বেশি ২৭টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ঢাকা-১৭ আসনে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ঢাকা-৮ এ। অন্য এলাকাগুলোতেও প্রার্থী গুনে শেষ করা যাচ্ছে না। আহা, নির্বাচন এলে মানুষ কত সেবামুখী হয়ে যায়! জনগণের ভাল করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। দেখতে ভাল লাগে। ভালই লাগছে। কিন্তু বাস্তবতা কী? ঢাকার জীবন মান উন্নয়নে এদের কয়জন বিগত দিনে কী ভূমিকা রেখেছেন? ব্যক্তিগত জীবনে তারা কতটা সৎ? কয়জনের পাশে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা আছে? তারা মানুষের কোন কোন ভাল করেছেন? কবে করেছেন? প্রমাণ পাওয়া যায়? নাকি এ কামড়াকামড়ি শুধু ক্ষমতার জন্য? হ্যাঁ, এমন প্রশ্নও তোলা হচ্ছে। বারবার তোলা হচ্ছে। তবে ‘তোমার ভাই আমার ভাই’ স্লোগানে এত জোর যে, সব সময় কানে আসে না। প্রার্থীরাও শুধু নিজের কথাই বলে যান। বক্তৃতা করে বেড়ান। ভোটারের কথা শোনার সময় হয় না। এবার কি হবে? অন্য আলোচনা। প্রতিষ্ঠার ৩৮ বছর পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। মানুষ, সমাজ, দেশ ও শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে নাটকের সামগ্রিক দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ফেডারেশন গঠন করা হয়। ১৯৮০ সালের ২৯ নবেম্বর নাটকের মানুষেরা এ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেন। বিশেষ ওই দিনটি গ্রুপ থিয়েটার দিবস হিসেবে উদ্যাপন করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল সেই আনন্দঘন দিন। নানা আয়োজনে দিবসটি উদ্যাপন করেন নাট্যকর্মীরা। বিকেলে ঢাকার রাস্তায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। অগ্রভাগে ছিলেন ফেডারেশনের চেয়ারপার্সন লিয়াকত আলী লাকী, অভিনেতা ঝুনা চৌধুরী, পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ গিয়াস প্রমুখ। তরুণ নাট্যকর্মীদের নেচে গেয়ে সড়ক প্রদক্ষিণ করতে দেখা যায়। মহিলা সমিতি থেকে শুরু হয়ে শিল্পকলায় এসে শেষ হয় শোভাযাত্রা। বর্ণিল আয়োজনে ব্যস্ত রাস্তা ও আশপাশের এলাকায় প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মঞ্চনাটকে বিশেষ অবদানের জন্য রূপসজ্জা শিল্পী বঙ্গজিত দত্ত ও আলোকশিল্পী সিরাজুল ইসলামকে মরণোত্তর গ্রুপ থিয়েটার সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ সময় মঞ্চে ছিলেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, আতাউর রহমান, মামুনুর রশীদ, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, সারা যাকের প্রমুখ। অনুষ্ঠানে একক অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নাটক পরিবেশিত হয়। ছিল আবৃত্তি ও নৃত্যের পরিবেশনাও। জনপ্রিয় সঙ্গীত দল জলের গানের পরিবেশনার মধ্যদিয়ে শেষ হয় উদ্যাপন।
×