ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনৈতিক কূটনীতিতেই আমরা এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ২৩ নভেম্বর ২০১৮

অর্থনৈতিক কূটনীতিতেই আমরা এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার রাজনৈতিক কূটনীতির চেয়ে এখন অর্থনৈতিক কূটনীতিতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এক সময় আমাদের কূটনীতিটা রাজনৈতিক ছিল। এখন এটা হয়ে গিয়েছে অর্থনৈতিক অর্থাৎ অর্থনৈতিক কূটনীতিটাই আমরা এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০০৯ থেকে আমরা ক্ষমতায় আছি, প্রায় দশ বছরের কাছাকাছি হয়ে গেল। আমি আপনাদের (ব্যবসায়ী) কাছেই ছেড়ে দিচ্ছি, এই সময়ে আমরা কী করেছি তা আপনারাই বিচার করে দেখবেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়ার এ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোসিং শো’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, তাঁর সরকার পুনরায় নির্বাচিত হলে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আধুনিক ট্যানারি ও স্বতন্ত্র চামড়া শিল্প গড়ে তোলা হবে। চামড়া শিল্পের উন্নয়নে নেয়া বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন সামনে। যদি আসতে পারি তখন পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করব। যদি নাও আসতে পারি, এটা বলে গেলাম, আপনারা যারা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আপনারা করিয়ে (বাস্তবায়ন) নেবেন। সেটাও আমি চাই, যেই সরকারই আসুক। আমি এলে তো সুযোগ করেই দেব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক কূটনীতিক হিসেবে বিভিন্ন দেশে আমাদের এ্যাম্বাসেডর ও হাইকমিশনার যারা, তাদের একটা দায়িত্ব থাকবে যে, যে দেশেই থাকেন, সেই দেশে আমাদের পণ্যটা যেতে পারে, কোন পণ্যের মার্কেট আছে সেগুলো একটু খুঁজে বের করা, আলাপ-আলোচনা করা। কী ধরনের বিনিয়োগ বিদেশ থেকে আসতে পারে তা খুঁজে বের করা এবং সেভাবে উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শুভাশিস বসু, এফবিসিআই প্রেসিডেন্ট সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। এতে লেদার গুডস এ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারাস এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সফিউল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চামড়াজাত পণ্যের প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ব্যবসা করে না, ব্যবসা-বাণিজ্য করেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ব্যবসায়ীদের জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করা, সুযোগ তৈরি করা, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাজার খোঁজা, সেই অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন ও রফতানির ব্যবস্থা করা সরকারেরও দায়িত্ব। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার যেসব দিকে খেলায় রেখে দেশের শিল্পকে আরও উন্নত করতে কাজ করছে। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি যেন হয়, যাতে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ে এবং ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে দেশের ভেতরেই যেন নিজস্ব বাজার সৃষ্টি হতে পারে- সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েই অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী নবনির্মিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রত্যেকটিতে বিশেষ করে চামড়া শিল্পের জন্য একটি করে স্থান রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, সরকার সারাদেশে একশ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেখানে যাতে দেশী-বিদেশী সব ধরনের বিনিয়োগ হয়, সেদিকে নজর দেয়া হয়েছে। চামড়া শিল্প দেশের একটি বিরাট শিল্প। বাংলাদেশে এর বিরাট সম্ভাবনা আছে। সেদিকে নজর দিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। এর জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই শিল্পের জন্য সাভারে ট্যানারি করে দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে রাজশাহী ও চট্টগ্রামেও ট্যানারি করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশটা সুন্দর এবং এখানকার মানুষ সুন্দর কাজ করতে পারে। এদেশের মানুষ যে কোন কাজে খুব ভাল ফিনিশিং দিতে পারে। তাই আমরা চাই আমাদের দেশে আরও বেশি শিল্প গড়ে উঠুক। তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমি খুব খুশি। আসার আগে আমি নিশ্চিত করেছি যাতে আমার হাতে আমাদের দেশের তৈরি ব্যাগ থাকে। সেটা আমি সঙ্গে করে নিয়েই এসেছি। আমি যখন বিদেশে যাই সেখানেও এই ব্যাগ নিয়ে যাই। সবাইকে দেখিয়ে বলি, আমাদের দেশে এই জিনিস তৈরি হয়। জার্মান চ্যান্সেলর মার্কেলকে ওটা দেখিয়ে বলেছি, আপনাকে আমি গিফট দেব। আমি আমাদের ব্যবসায়ী সাইফুল সাহেবকে বলেছিলাম, কয়েকটা সুন্দর ব্যাগ বেছে দেবেন আমি আমার পক্ষ থেকে তাঁকে গিফট দেব। এটা জার্মান ব্র্যান্ড কিন্তু বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জায়গা এবং সবচেয়ে সুন্দর কাজ বাংলাদেশের মানুষ করতে পারে। আমাদের যারা লেবার, তাদের একটু ট্রেনিং দিলেই তারা খুব ভাল কাজ করতে পারে। বিশেষ করে নারীরা এ ব্যাপারে খুব পারদর্শী। তারা সুন্দর হাতের কাজ করে দিতে পারে। এভাবে আমরা ব্র্যান্ডকে আরও নতুন মানে সুন্দর একটা চেহারা দিতে পারি এবং সৌন্দর্য বাড়াতে পারি। কাজেই আমরা চাই আমাদের দেশে এই শিল্প আরও গড়ে উঠুক। দেশী-বিদেশী ব্র্যান্ড আসুক, বিনিয়োগ আসুক। এতে একদিকে যেমন আমাদের কর্মসংস্থান হবে। অপরদিকে যারা করবেন তারা খুব সস্তায় এখানে শ্রমিক পাবেন। সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানটা এমন, যেখান থেকে সারা পৃথিবীতে যোগাযোগ করা যেতে পারে। সেই সুযোগটা আমাদের রয়েছে। এই সুযোগ আরও বাড়াতে এরই মধ্যে কক্সবাজারে যে এয়ারপোর্ট করে দিচ্ছি তা আন্তর্জাতিক মানের এবং সেখানে যাতে সম্প্রসারিত এয়ারক্রাফট নামতে পারে সেটা মাথায় রেখে গড়ে তুলছি। যাতে করে বিদেশী ব্যবসায়ীরা আসতে পারেন। বাংলাদেশকে দেখতে পারেন, চিনতে পারেন, জানতে পারেন। কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতের ৮০ মাইল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পৃথিবীতে আর কোথাও নাই। একমাত্র বাংলাদেশে আছে। কাজেই এটাও উপভোগ করতে পারবেন তারা। সেই সঙ্গে আমরা দেশকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। দেশের উৎপাদন ও রফতানি বাড়ানোর দিকগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রফতানি বাণিজ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে আমি সবসময় মনে করি, আমাদের এক্সপোর্ট বাস্কেট বাড়াতে হবে।
×