ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনের মাঠে ৩১ অবঃ সামরিক, বেসামরিক কর্মকর্তা

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২১ নভেম্বর ২০১৮

 নির্বাচনের মাঠে ৩১ অবঃ সামরিক, বেসামরিক কর্মকর্তা

ফিরোজ মান্না ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নেতাদের পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা বিভিন্ন দল থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সারা জীবন সরকারী চাকরি করে এখন তারা রাজনীতির মাঠে নেমেছেন। অবসরপ্রাপ্ত এমন ৩১ জন কর্মকর্তার নাম আলোচনায় উঠে এসেছে। এদের মধ্যে ২২ জন কর্মকর্তা বিভিন্ন দল থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। বাকিরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী যেসব সরকারী কর্মকর্তা চাকরি থেকে কমপক্ষে তিন বছর আগে অবসরে গেছেন, কেবল তারাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। এবার এই তিন বছরের বিধানও কমানোর চেষ্টা করেছিলেন একদল সরকারী কর্মকর্তা। যদিও শেষ পর্যন্ত তা সফল হননি। জানা গেছে, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে আটজন সচিব, দুজন আইজিপি, দুজন উপাচার্য, পাঁচজন সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, সাবেক কূটনীতিক, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও ইউজিসির বর্তমান একজন সদস্যও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আমলাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। কোন কোন আমলা আবার ক্ষমতাসীন দলের মিত্র জাতীয় পার্টির হয়েও নির্বাচনে অংশ নিতে চান। বিএনপিতেও বেশ কয়েকজন আমলা নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান যারা ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট ও মাধবপুর) আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব ছিলেন। হবিগঞ্জ-৪ আসনের বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের মাহবুব আলী। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও সাবেক সচিব নূর মোহাম্মদ কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। মাঠেও তিনি সভা সমাবেশ করে যাচ্ছেন। এই আসনের বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের মোঃ সোহরাব উদ্দিন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন চাঁদপুর-১ (কচুয়া) থেকে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। এই আসনের বর্তমান সাংসদ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। সিলেট-১ (সদর) আসনের বর্তমান সাংসদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও সাবেক আমলা। তবে তিনি এরশাদের আমল থেকেই রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, এবার আর নির্বাচন করবেন না। এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে চান অর্থমন্ত্রীর ভাই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে এ মোমেন। একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইনও। তিনি দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য চিকিৎসক প্রাণ গোপাল দত্ত কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসন থেকে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এলাকায় সভা সমাবেশও চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএসএমএমইউর আরেক সাবেক উপাচার্য কামরুল হাসান খান টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) থেকে নির্বাচন করতে চান। তিনি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। এই আসনের বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের আমানুর রহমান খান, যিনি হত্যা মামলার আসামি হয়ে কারাগারে রয়েছেন। সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব ও বর্তমানে রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন ফরিদপুর-১ (আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী) আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে এই আসনের বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানও নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বর্তমান সদস্য অধ্যাপক এম শাহ্ নওয়াজ আলী রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষক এর আগে কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। বরগুনা-১ (বরগুনা সদর, আমতলী ও তালতলী) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুর রহমান। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক ছিলেন। সাবেক সচিব মোঃ রশিদুল আলম এবার কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফের ভাই। যদিও কুষ্টিয়ার এই আসনের বর্তমান সাংসদ হলেন ১৪ দলের শরিক জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। দিনাজপুর-৪ আসনের সাংসদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীও সাবেক কূটনীতিক। তিনি এবারও প্রার্থী। রংপুর-৫ আসনের বর্তমান সাংসদ এইচ এন আশিকুর রহমান, সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী নির্বাচন করতে চান। চাঁদপুর-৫ আসনের সাংসদ মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম ও কুমিল্লা-১ আসনের সাংসদ মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া এবারও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। বিএনপির মনোনয়ন চান যারা ॥ সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এস এম আবদুল হালিম বিএনপির হয়ে জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। তিনি দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সাবেক আইজিপি এম এ কাইয়ুম জামালপুর-১ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। সাবেক সচিব হায়দার আলী শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) থেকে, লে. কর্নেল (অব.) আবদুল লতিফ নওগাঁ-৫ (সদর) থেকে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) নাসিরউদ্দিন আহমেদ ফেনী-৩ থেকে, সাবেক সচিব মুশফিকুর রহমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া), সাবেক সচিব আবু হেনা রাজশাহী-৪ (বাগমারা), সাবেক সচিব খান মোহাম্মদ ইব্রাহীম হোসেন সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) ও মেজর (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুন সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসন থেকে বিএনপির ?মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী ঢাকা-১৭ (গুলশান-ক্যান্টনমেন্ট) থেকে বিএনপির মনোনয়নপত্র কিনেছেন। সাবেক সচিব ও এনবিআরের চেয়ারম্যান এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তারা সবাই নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী। জাতীয় পার্টি ॥ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এন এম নিয়াজ উদ্দিন মিয়া গাজীপুর-২ (সদর ও টঙ্গী) আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপত্র কিনেছেন। আলোচিত সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ফেনী-৩ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। তিনি প্রথমে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনলেও কয়েক দিনের মাথায় জাতীয় পার্টিতে যোগ ? দেন। জাতীয় পার্টি থেকে তার মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত।
×