ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু বৃহস্পতিবার, প্রতিদিন যাবে দেড় শ’

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৩ নভেম্বর ২০১৮

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু বৃহস্পতিবার, প্রতিদিন যাবে দেড় শ’

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ প্রস্তুত বাংলাদেশ-মিয়ানমার উভয় পক্ষ। আজ থেকে মাত্র দুদিন পর ১৫ নবেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। টেকনাফের কেরুনতলীঘাট ও রোহিঙ্গাদের অবস্থানের জন্য নির্মিত ডরমিটরিও প্রস্তুত। ওপারে অনুরূপ অর্থাৎ মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপের অদূরে তাং ফো লে ওয়ে এবং নাকপোড়া গ্রামে তৈরি হয়েছে দুটি অভ্যর্থনা কেন্দ্র। কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম সোমবার বিকেলে জনকণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বৃহস্পতিবার থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে। প্রতিদিন দেড়শ’ রোহিঙ্গা যাবে মিয়ানমারে। মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী ড. উইন মিন্টও সংবাদ সম্মেলনে জানান দিয়েছেন, ১৫ নবেম্বর থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া রাখাইনের অধিবাসীদের প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে। মিয়ানমার এখন তাদের অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত, তবে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে। সীমান্তের ওপারে দুটি অভ্যর্থনা কেন্দ্রে ইতোমধ্যে সেনাসদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন হয়েছে। টহল দিতে শুরু করেছে সেনাবাহিনী। এক সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যাচাই- বাছাইকালে তাদের সম্পৃক্ততা থাকবে। যাতে কোন সন্ত্রাসী তাদের দেশে ঢুকতে না পারে। এছাড়া মিয়ানমার পক্ষ আরও জানিয়ে দিয়েছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হলে এর দায় বাংলাদেশের ওপর বর্তাবে। অনুরূপ বক্তব্য দিয়েছেন সে দেশের এনএলডি নেত্রী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আউং সান সুচিও। এ পারে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন দেড়শ করে রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মিয়ানমার। এ প্রক্রিয়ায় ধাপে ধাপে তালিকা অনুযায়ী ২২৬০ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে নেপিদো। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি দল সম্পৃক্ত থাকবে। শুরুতে কেরুনতলী ঘাট দিয়ে নৌপথে যাবে রোহিঙ্গারা। এরপর নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ট্রানজিট পয়েন্ট দিয়েও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে। এটি হবে স্থল সীমান্ত পথে। এ দুটি পথে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম চললে প্রতিদিন যাবে ৩শ’ রোহিঙ্গা। এ লক্ষ্যেই ওপারের তাং ফো লে ওয়ে ও নাকপোড়ায় দুটি অভ্যর্থনা কেন্দ্র প্রস্তুত করেছে মিয়ানমার। নৌপথে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যারা ফিরে যাবে তাদের স্থান হবে নাকপোড়া আর সড়ক পথে যারা যাবে তাদের নেয়া হবে তাং ফো লে ওয়ে কেন্দ্রে। পরবর্তীতে তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় নেয়া হবে। এছাড়া ঘুমধুম পয়েন্ট দিয়ে যেসব রোহিঙ্গা যাবে তাদের নেয়া হবে রাখাইনের ঢেকিবুনিয়ায়। ওপারের সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশ থেকে পরবর্তী সময় পর্যন্ত যেসব রোহিঙ্গা ফিরে যাবে তাদের রাখাইনের মংডু, রাচিদং, বুচিদংসহ উত্তর মংডুর বিভিন্ন স্থানে পুনর্বাসন করা হবে। ঘুমধুম পয়েন্ট দিয়ে যারা প্রত্যাবাসিত হবে তাদের যানবাহনযোগে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানো হবে। তালিকাভুক্ত এবং যাচাই-বাছাই শেষে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যাদের জন্য সিগন্যাল দেবে তাদের ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধিরা গন্তব্যে পৌঁছানোর প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত থাকবে। মূলত ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে সোপর্দ করা হবে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, রাখাইন থেকে পালিয়ে যাওয়া অধিবাসীদের মধ্যে যারা ফিরে আসবে তারা ৬ মাস পর নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবে। ওপারের সূত্রমতে, রোহিঙ্গাদের রেজিস্ট্রেশনসহ যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে নির্মিত প্রতিটি ট্রানজিট পয়েন্টে ৬২৫ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে রাখা যাবে। অভ্যর্থনা কেন্দ্রে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রত্যাবাসিত হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, শিশুদের টিকাদান, গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যসেবার কথাটিও জানানো হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যাবাসন শুরুর ধারাবাহিকতায় ধাপে ধাপে আট সহস্রাধিক রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে চাইছে নেপিদো। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন উপলক্ষে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) সুদাপাড়া এলাকা থেকে মংডু টাউনশিপ পর্যন্ত টহল দিতে শুরু করেছে। সোমবার থেকে সেখানে বিজিপির অতিরিক্ত সদস্য নিযুক্ত করা হয়েছে। ট্রানজিট পয়েন্টগুলোতে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মিয়ানমার পক্ষ ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী, বিজিপি ও প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত কর্মকর্তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয় নিয়ে কক্সবাজারের প্রশাসনও ব্যাপক তৎপর। পুলিশ, বিজিবি, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিরা স্ব স্ব কার্যক্রম নিয়ে প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। তবে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ১৬৫ এনজিওর মধ্যে কিছু সংস্থা প্রত্যাবাসন বানচালের অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে অনিবন্ধিত এনজিওকে রোহিঙ্গা আশ্রয় ক্যাম্পের কার্যক্রমে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। অথচ এরা সরকারী আদেশ না মেনে তাদের স্বার্থে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েকটি এনজিও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যুক্ত থেকে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গ্রুপ আল ইয়াকিন সদস্যদের উস্কে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
×