ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

নাগরিক সংলাপ

স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কয়েকজনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১১ নভেম্বর ২০১৮

স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কয়েকজনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কয়েকজনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছে। এই শক্তি সম্পর্কে জাতিকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ৭১ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ ও জাতীয় নির্বাচন ২০১৮’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপের আয়োজন করে। নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের পর ঢাকায় এই সংলাপের আয়োজন করেছে। সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের ভাইস চেয়ারম্যান আবু ওসমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংলাপে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের টাস্ট্রি ড. সারওয়ার আলী, ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহফুজা খানম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, অধ্যাপক আবদুস সালাম খান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর, মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশিম ভুঁইয়া, নুরুল আনোয়ার, ড. মনসুর আহমেদ, নাট্যব্যক্তিত্ব ম হামিদ, লায়লা হাসান, সংগঠনের মহাসচিব হারুন হাবীব প্রমুখ। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মেজর জেনারেল (অব) মোহাম্মদ আলী সিকদার। অর্থনীতিবিদ কাজী খলিকুজ্জমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিতো পরিচিত। তাদেরই ক্ষমতায় রাখতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে। এ জন্য তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আছে বলে কোনভাবেই আত্মতুষ্টিতে থাকা যাবে না। আত্মতুষ্টির ফল হয় গাফিলতি। এতে অন্যরা সযোগ পেয়ে যেতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের টাস্ট্রি ড. সারওয়ার আলী বলেন, একটা দুর্ভাগা দেশে আমরা বসবাস করছি। বঙ্গবন্ধুর মূল লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশ হবে, কিন্তু সেই স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ হয়েছে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে। এখন আবার স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কয়েকজনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছে। এই শক্তি সম্পর্কে সজাগ থাকা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, যে গণতন্ত্রের জন্য আমরা লড়াই করেছি সেখানে প্রতি ৫ বছর পর পর দেশবাসীর মধ্যে অশনিসংকেত নেমে আসে। কারণ নির্বাচন আমাদের দুর্ভাগ্য। জনগণকে অনিশ্চয়তা ও আতঙ্কের মধ্য পড়তে হয়। উন্নত দেশগুলোর আলোকে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা যেতে পারে। ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহফুজা খানম বলেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে। নয়তো এবারের নির্বাচন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির জন্য কঠিন হয়ে উঠতে পারে। তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা প্রতিষ্ঠিত। বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী সব কাজে তা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি দুই হাজারেরও বেশি মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছেন। এখন সেই দলের হয়ে জোট করে ড. কামাল হোসেন সংবিধান সমুন্নত রাখার কথা বলছেন। যার সাত দফা দাবির প্রথমটিই হচ্ছে হাইকোর্ট যাকে দ- দিয়েছে সেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনা। জনগণকে এ সব যড়যন্ত্রের বিষয়ে জানাতে হবে। যাতে নির্বাচনে তারা কোনো ভুল না করে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী পক্ষকে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করতে ড.কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে মন্তব্য করে ড. আ আ ম স আরেফীন সিদ্দিক বলেন, ঐক্যফ্রন্টের নেতারা নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করছেন। এখন দরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মধ্যে সর্বত্র ঐক্য দরকার। বিশেষ করে শেখ হাসিনার সরকারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমাদের কর্তব্য। সাবেক উপাচার্য আনোয়ার হোসেন বলেন, নির্বাচন নিয়ে যে শঙ্কা ছিল তা সংলাপের মধ্য দিয়ে কেটে গেছে। কিন্তু এখন সংকট যেটা দেখা দিয়েছে বিএনপির সঙ্গে দেশের সুশীল সমাজ অর্থাৎ ড. কামালসহ অনেকেই যুক্ত হয়েছেন। এ অবস্থায় নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে আরও সতর্ক হতে হবে। তিনি আরও বলেন, ড. কামাল- কাদের সিদ্দিকীকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের শক্তি বলেই এখন আর মনে করি না। তারা রাজাকারেরও অধম। জনগণকে এই বার্তা দিতে হবে কেন মুক্তিযুদ্ধের শক্তির জয় প্রয়োজন। অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, রাজনীতির মধ্য যারা সুশীল বলে পরিচিত ছিল বিশেষ করে ড. কামাল হোসেন, আ স ম রব তারাই এখন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিকে আশ্রয় দিয়েছে। এতে প্রায় নিঃশেষ হয়ে যাওয়া শক্তি তারা ফিরে পেয়েছে। তাদের আসল চরিত্র প্রকাশ পাবে যদি একাত্তরে চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধীদের তারা মনোনায়ন দেয়। নির্বাচন কমিশনও বলেছে, এক দলের প্রার্থী অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে। তাহলে কি দাঁড়াল জামায়াতের প্রার্থীরাও অন্য দলের হয়ে নির্বাচন করতে পারবে। এর বিরুদ্ধে অবশ্যই জনগণকে সোচ্চার হতে হবে। ইসির প্রতি দাবি করছি জামায়াত যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, সেই ব্যবস্থা অবিলম্বে করতে হবে। হারুণ হাবীব বলেন, নির্বাচন নিয়ে সারা দেশে এই ধরনের সংলাপ আয়োজন করা হবে। চট্টগ্রামের পর ঢাকায় এটি তাদের দ্বিতীয় সংলাপ। ভোটারদের সচেতন করতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
×