ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চৌগাছায় যুবক এনামুল কবিরের চমক

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৩ নভেম্বর ২০১৮

 চৌগাছায় যুবক এনামুল কবিরের চমক

যশোরের চৌগাছায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করে চাকরি না করে ড্রাগন ও পেয়ারার চাষ করে সাফল্য অর্জন করেছেন যুবক এনামুল কবির। বর্তমানে তিনি ৯ বিঘা জমিতে ড্রাগন, ২০ বিঘা জমিতে পেয়ারা ও ৩ বিঘা জমিতে শরিফা ফলের চাষ করেছেন। প্রতিটি ফলের বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রথম বছরেই তিনি প্রায় ৫০ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। উচ্চ ডিগ্রী অর্জন করে চাকরি না করে তিনি কৃষি কাজে মনোনিবেশ করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রতিদিনই কোন না কোন এলাকার মানুষ তার বাগান পরিদর্শনে ছুটে যান ভারতের গা ঘেঁষা গ্রাম উপজেলার তিলেকপুরে। এনামুল শিক্ষিত সব যুবকের কাছে অনুকরণীয় বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল। সূত্র জানায়, ভারত সীমান্তের গা ঘেঁষা গ্রামের বাসিন্দা একছের আলীর ছেলে এনামুল কবির জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রথম শ্রেণীতে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করে ঢাকায় মাল্টি ন্যাশন্যাল কোম্পানীর একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। সন্তোষজনক বেতন পাওয়ার পরও কোথায় যেন অতৃপ্তি অনুভব করতেন এনামুল। তিনি ভাবতে থাকেন চাকরি না করে নতুন কিছু করে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায় কি-না। যে ভাবনা সেই কাজ। চাকরি ছেড়ে তিনি চলে আসেন নিজ বাড়িতে। ২০১৫ সালে তিনি প্রথমে ২ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করেন। ২০১৬ সালে তা বৃদ্ধি করে ৯ বিঘা জমিতে দাঁড়ায়। এর সঙ্গে চাষ শুরু করেন পেয়ারার। বর্তমানে তিনি ৯ বিঘা জমিতে ড্রাগন, ২০ বিঘা জমিতে পেয়ারা ও ৩ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন শরিফা ফলের। স্থানীয়রা এই ফলকে মেওয়া ফল হিসেবে চেনেন। সম্প্রতি তিলেকপুর তার ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, এনামুল কবির জমিতে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ সময় কথা হয় এনামুল কবিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ ডিগ্রী অর্জন করে একটি ভাল চাকরিও পেয়েছিলাম কিন্তু সেখানে মনকে স্থির করতে পারেনি। বাড়িতে ফিরে এসে এই প্রজেক্ট করার সিদ্ধান্ত নিই। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে ২ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ দিয়ে আমার পথ চলা শুরু। এরপর আরও ৭ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছি। ড্রাগনের জমিতে মিশ্র চাষ হিসেবে করেছি পেয়ারা, লেবু ও মানকচু। এছাড়া শুধু পেয়ারার চাষ করেছি আরও ১১ বিঘা জমিতে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত তার ২২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু আয় হয়েছে তার দ্বিগুণ, গেল মৌসুম পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫২ লাখ টাকার ড্রাগন ও পেয়ারা বিক্রি করেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ড্রাগন আমাদের এলাকাতে একবারেই অপরিচিত একটি ফল। দেশের বাইরে পুষ্টি গুণে ভরা এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। একটি ড্রাগন গাছ ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চ হয়। ভরা মৌসুমে একটি গাছ থেকে ৭ থেকে ৮ কেজি ফল সংগ্রহ করা যায়। ২শ’ থেকে ৩৫০ টাকা দরে প্রতি কেজি ড্রাগন বিক্রি হয়। শুধু ফল বিক্রি না, ড্রাগনের কাটিং বিক্রি করে বছরে ২ থেকে ৩ লাখ আয় করা সম্ভব। ড্রাগনের চাষ মুলত এঁটেল, এঁটেল দোয়াশ মাটিতে ভাল হয়। এই ফলে পোকা মাকড়ের উপদ্রপ একে বারেই কম। ড্রাগন চাষ ব্যাপক লাভজনক হওয়ায় ইতোমধ্যে এলাকার অনেকেই ড্রাগন চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। এনামুল কবির আরও বলেন, বর্তমানে তার অধীনে ২৫ থেকে ৩০ জন মানুষ নির্ধারিত মজুরিতে কাজ করেন। তার প্রতি বছরে শ্রমিক খরচ বাবদ আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। -সাজেদ রহমান, যশোর থেকে
×