ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

জর্দানে নারী কর্মীদের বাজার ফের খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২ নভেম্বর ২০১৮

জর্দানে নারী কর্মীদের বাজার ফের খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা

ফিরোজ মান্না ॥ জর্দানে বাংলাদেশ থেকে নারীকর্মী নিয়োগের আবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গত মার্চে দেশটির কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে নারীকর্মী নিয়োগ স্থগিত করেছিল। পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটিতে ২০০০ সাল থেকে নারীকর্মী নিয়োগ শুরু হয়। ৫০ হাজারের ওপরে নারীকর্মী দেশটিতে বর্তমানে কর্মরত। জর্দানের শ্রমমন্ত্রী আলী আল ঘাজ্জাউই ঘোষণা দিয়েছিলেন, শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বর্তমানে জর্দানের নিয়োগকর্তারা আপাতত বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী নিয়োগ করতে পারবেন না। এ ঘোষণার পর থেকে দেশটিতে নারীকর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। তবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনার পর আবার বাজারটি খোলার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জর্দানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ বাজার খুলে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, জর্দান নারী গৃহকর্মী নিয়োগের সবচেয়ে বড় বাজার। সৌদি আরবের পরেই জর্দানে নারীকর্মীর বাজার সৃষ্টি হয় ২০০০ সালে। পরে কিছু দিন বাজারটি বন্ধ থাকার পর আবার ২০১১ সালে বাজারটি খুলে দেয়া হয়। এরপর বাজারটিতে পর্যায়ক্রমে ৫০ হাজারের বেশি নারীকর্মী চাকরি নিয়ে যান। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের নারীকর্মীদের ওপর মানসিক ও দৈহিক নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায় দেশটিতে। বহু নারীকর্মী নানা ধরনের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গৃহকর্তার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে আশ্রয় নেন। নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে জর্দান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দেন। এরপর থেকেই বাংলাদেশ থেকে নারীকর্মী নিয়োগ কমতে থাকে। গত সপ্তাহে শ্রম মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে নারীকর্মী নিয়োগ স্থগিত ঘোষণা করেছে। জর্দানের শ্রম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জর্দানে কাজ করতে আসা প্রতিটি কর্মীর কোন প্রকার অপরাধমূলক অভিযোগ রয়েছে কিনা এই বিষয়ে সঠিক তথ্য জানাতে হবে। এমনকি প্রতিটি কর্মীর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট দিতে হবে। দেশটির এমন সিদ্ধান্তের পর অন্য দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশ সিদ্ধান্তটির ইতিবাচক সারা দেয়। এরপরও বাংলাদেশ থেকেই কর্মী নিয়োগ স্থগিত করা হলো। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটিতে নারী কর্মীদের ওপর মানসিক ও দৈহিক নির্যাতনের বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার কয়েক দিনের মাথায় এমন একটি ঘোষণা এলো। কর্মী নিয়োগ বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস জর্দান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, গৃহকর্মী নিয়োগ আবার খুলে দেবে দেশটি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জর্দান বাংলাদেশের অন্যতম শ্রম বাজার। এই বাজারে বর্তমানে ৫০ হাজারের বেশি নারীকর্মী কাজ করছেন। বাজারটি দীর্ঘ ছয় বছর বন্ধ ছিল। বোয়েসলের মাধ্যমে প্রথমে জর্দানে কর্মী নিয়োগ শুরু হয়। পরে অবশ্য বিভিন্ন জনশক্তি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খুব কম খরচে জর্দানে নারীকর্মী নিয়োগ শুরু হয়েছে। বিপুলসংখ্যক নারীকর্মী নিয়োগের জন্য সরকার জর্দানে নতুন দূতাবাস স্থাপন করেছে। বাজারটি বন্ধের পর দূতাবাসের পক্ষ থেকে দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করা হয়েছে। বর্তমানে কর্তৃপক্ষ কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আশা করা যাচ্ছে, বাজারটি আবার খুলে যাবে। বোয়েসলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নারীকর্মী নিয়োগের বিষয়ে কাগজপত্র তৈরি করতে ১০ হাজার টাকা করে খরচ নেয়া হয়। এই খরচের বাইরে আর কোন খরচ নেই। উড়োজাহাজের টিকেট জর্দানের কোম্পানিগুলোই দিয়েছে। পরে কর্মী নিয়োগের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কয়েকটি জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা হয়। ২০১১ সাল থেকে দেশটিতে পুরোদমে গৃহকর্মী নিয়োগ হচ্ছিল। গত বছরই জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ও বোয়েসলের মাধ্যমে ২৭ হাজার ৯১১ নারীকর্মী জর্দানে চাকরি নিয়ে গেছেন। জর্দানে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোই ‘প্লেন ফেয়ার’ দিয়েছে। এত কম খরচে ভাল বেতনে একজন শ্রমিক বিদেশ যাওয়ার ইতিহাস এটাই প্রথম ছিল। জর্দান সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি চুক্তির মাধ্যমে দেশটিতে গৃহকর্মী নিয়োগ শুরু হয়। এই চুক্তির পর সরকার জর্দানে বোয়েসলের মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। বোয়েসলের মাধ্যমে একজন কর্মী জর্দানে যেতে পারলে তিন বছরে ওই কর্মী ভাল পরিমাণ টাকা নিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন। বেশি টাকা দিয়ে গেলে তাকে খরচের টাকা তুলতেই এক থেকে দেড় বছর লেগে যায়। পরে ওই কর্মীকে এক প্রকার খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়। তখন দেশে ফিরে সে আর টাকার অভাবে কিছু করতে পারে না।
×