ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশীয় শিল্প শক্তিশালী করার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ২৯ অক্টোবর ২০১৮

দেশীয় শিল্প শক্তিশালী  করার উদ্যোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশীয় শিল্প শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ‘গাজী ওয়্যারস লিমিটেডকে শক্তিশালী ও আধুনিকীকরণ’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত এই কারখানাটিকে আধুনিক, শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত করে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা, ৫০ বছরের বেশি পুরাতন মেশিনারিজ প্রতিস্থাপন করে পরিবেশবান্ধব সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন মেশিনারি ডিজেল জেনারেটর ব্যবহারের মাধ্যমে কারখানার উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমানো, পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি ও অপচয় কম করে অধিকতর লাভজনক করা হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যেই প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ সমাপ্ত করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশন (বিএসইসি)। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গাজী ওয়্যারস লিমিটেড বাংলাদেশে প্রথম ও সর্ববৃহৎ উৎকৃষ্ট মানের সুপার এনামেল কপার ওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। ১৯৬৬ সালে ব্যক্তি মালিকানায় জাপানের ফুরুকাওয়া ইলেকট্রিক কোম্পানির কারিগরি সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটিকে সরকার ১৯৭২ সালে অধিগ্রহণ করে। প্রতিষ্ঠানটি ব্রিটিশ ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে মূলত তিন ধরনের কপার ওয়্যার যথা, সুপার এনামেল, এনিল্ড এবং হার্ডড্রন বেয়ার কপার ওয়্যার প্রস্তুত থাকে ও ১০০ ভাগ কন্ডাকটিভিটি গুণসম্পন্ন ৮ কিলোমিটার ডায়াবিশিষ্ট ইলেক্ট্রলাইটিক কপার রড আমদানি করে, যার বিশুদ্ধতা ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। উৎপাদিত সুপার এনামেল কপার ওয়্যার দিয়ে বিভিন্ন ট্রান্সফারমার ও মোটরের কয়েল সংযোজিত হয়। তাই এই ট্রান্সফরমার ও মোটর সহজে পোড়ে না। এ কপার ওয়্যার বিদ্যুত সাশ্রয়ী ও দীর্ঘস্থায়ী হয়, মেরামত খরচ ও মেশিন ব্রেক-ডাউন টাইম কম হয় এবং বিদ্যুতের সিস্টেম লস বহুলাংশে কম হয়। এই প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুত ব্যবহার ও উৎপাদন খরচ কম, উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক ঝুঁকি দূরীকরণের জন্য বিএসইসি কর্তৃক গাজী ওয়্যারস লিমিটেডের নিজস্ব জায়গায় বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়। এই প্রকল্পটির ওপর ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রথম প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসির সুপারিশ অনুযায়ী নির্মিতব্য ভবনের নক্সা স্থাপত্য অধিদফতর প্রস্তুতকরণের প্রেক্ষিতে নির্মাণ কাজের আওতা বৃদ্ধি এবং কাজের প্রাক্কলন প্রণয়নে গণপূর্ত অধিদফতরের রেট সিডিউল-২০১৮ অনুসরণ করায় এ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এছাড়া মেশিনারিজ ও ইকুইপমেন্ট খাতটি পুনর্গঠন করায় কিছু নতুন অংশের অন্তর্ভুক্তি ও কয়েকটি অংশের ব্যয় বৃদ্ধিসহ সার্বিকভাবে ৮৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে পুনর্গঠিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটির ওপর গত ১৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয়বার পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সুপারিশ অনুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে মোট ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটির পুনর্গঠিত ডিপিপি গত ২৬ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ২টি এনামেলিং মেশিন, ৩টি ড্রইং মেশিন, ১টি প্লাস্টিক ইনজেকশন মোর্ডিং মেশিন, ২টি বাট ওয়েল্ডিং মেশিন, ১টি এয়ার কম্প্রেসর, ১টি জেনারেটর, একটি ডাবল কেবিন পিক আপ, ১টি জিপ, একটি ১ হাজার কেভিএ সাবস্টেশন, একটি ৩৩/১১ কেভি এক্সপ্রেস লাইন এবং ৩ হাজার ২৪৫ বর্গমিটার কারখানা ভবন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট স্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে একনেকের জন্য তৈরি সার-সংক্ষেপে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে গাজী ওয়্যারস লিমিটেডের বিদ্যমান কারখানাতে পুরাতন মেশিনারিজ প্রতিস্থাপন করে পরিবেশবান্ধব সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন মেশিনারিজ স্থাপন ও ডিজেল জেনারেটর ব্যবহার করা হবে। ফলে কারখানাটির উৎপাদিত পণ্যেও উৎপাদন ব্যয় কম, পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি ও অপচয় কমিয়ে কারখানাটিকে অধিকতর লাভজনক করে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
×