ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে ভাল অবস্থানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ব্যস্ত মামলায়

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৭ অক্টোবর ২০১৮

 যশোরে ভাল অবস্থানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ব্যস্ত মামলায়

সাজেদ রহমান, যশোর/ আবুল হোসেন, বেনাপোল/ কবির হোসেন, কেশবপুর থেকে ॥ যশোরের ছয় আসনে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ইতোমধ্যে গ্রামগুলোর ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে সভাসমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে দলে কোন্দল কমেনি। এক সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করতে পারেনি আওয়ামী লীগের নেতারা। বিভিন্ন আসনে দলের একাধিক নেতা গণসংযোগ করছেন আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে। তবে মুখে বলছেন, প্রধানমন্ত্রী যাকেই নৌকা প্রতীক দেবেন, তার পক্ষে কাজ করবেন তারা। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর সেটা কতটুকু কার্যকর হয় এখন সেটাই দেখার বিষয়। অন্যদিকে দল গোছানো দূরে থাক, মামলায় বির্পযস্ত বিএনপি-জামায়াত জোট। প্রতি উপজেলায় শত শত নেতাকর্মীরা নাশকতা মামলা মাথায় নিয়ে আদালতের বারান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কোন সভা-সমাবেশও তারা করতে পারছেন না। যশোর-১ (শার্শা) আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন। বিগত ১০ বছরে এলাকায় তিনি উন্নয়ন করেছেন। নিজ নির্বাচন এলাকায় তিনি একটি জুট মিল করেছেন। সেখানে প্রায় ৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এর বেশির ভাগই মহিলা শ্রমিক। ফলে তার একটা ফল তিনি পাবেন এমনটা দাবি করেন তার অনুসারি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে এখানে আওয়ামী লীগের থেকে এবার মনোনয়ন চাইবেন আরও ২ জন। এরা হলো- সাবেক আইজিপি ও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সদস্য আবদুল মাবুদ পিপিএম এবং বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটন। আব্দুল মাবুদ ইতোমধ্যে এলাকায় গণসংযোগ করছেন। বিভিন্ন বাজারে এবং ইউনিয়নে অনুষ্ঠান করছেন। তার দাবি তিনি সাড়া পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে। অন্যদিকে বেনাপোল পৌরসভার মেয়র এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন ৫/৬ বছর ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপকে সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগ করছেন। স্থানীয় এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের সঙ্গে তার তীব্র বিরোধ। রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয় এমন অনুষ্ঠানগুলো দুই নেতা আলাদাভাবে পালন করেন। অন্যদিকে এখানে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা অসংখ্য মামলা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এখানে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, উপজেলা বিএনপি সভাপতি খায়রুজ্জামান মধু, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান জহির, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মহসীন কবির। যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনের বর্তমান এমপি এ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম। আবারও মনোনয়ন পাবেন এমন আশায় তিনি গণসংযোগ করছেন। এলাকার রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি উন্নয়ন করেছেন। এই আসনের দুই উপজেলাতে আওয়ামী লীগের কোন্দল তীব্র। এবার এখানে মনোনয়ন চাইবেন চৌগাছা থেকে মেজর জেনারেল (অব) ডাক্তার নাছির, সাবেক বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন। এমপি মনিরের বিরুদ্ধে তিনজনই মাঠে আছেন অনেক দিন ধরে। অন্যদিকে চৌগাছা উপজেলার চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম হাবিবুর রহমানও মনোনয়ন চাইবেন। দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন চলতি মাসে চৌগাছার এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবন উদ্বোধন করতে গিয়ে ছাত্রীদের কাছ থেকে ফুলের মালা গলায় নেয়ার দৃশ্যের ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় তার অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখানে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, চৌগাছা বিএনপির সভাপতি জহিরুল ইসলাম, ঝিকরগাছা বিএনপি মোর্তজা এলাহী টিপু, ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা নাজমুল মুন্নী। জামায়াতের নেতাকর্মীরা এখানে গা ঢাকা দিয়ে আছেন। যশোর-৩ (সদর) আসন থেকেই জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাই খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। এই আসনের বর্তমান এমপি কাজী নাবিল আহমেদ। তিনি এবার মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া মনোনয়ন চাইবেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন চাকলাদার। তিনি এলাকায় থেকে আওয়ামী লীগকে গুছিয়ে রেখেছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাবি তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিলে সবচেয়ে ভাল হবে এবং দলীয় প্রার্থী জয়ী হবে। এখানে আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী। বিএনপির এখানে একক প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী ও স্থায়ী কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তার পুত্র বিএনপি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত প্রার্থী হতে পারেন। তবে যশোর সদরের বিএনপির নেতাকর্মীরা মামলায় জর্জরিত। শত শত নেতাকর্মী গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর এবং সদরের বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনের বর্তমান এমপি রণজিৎ রায়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় কারাগারে আটক আমজাদ রাজাকারের পক্ষে প্রকাশ্যে সমর্থন নেয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার উপর ক্ষুব্ধ। গত মাসে তার এলাকার নেতারা ঢাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলন করে জামায়াত-বিএনপিকে পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য তাকে অভিযুক্ত করেন। এই আসনে রণজিৎ রায় ছাড়াও এবার মনোনয়ন চাইবেন সাবেক হুইপ অধ্যক্ষ শেখ আব্দুল ওহাব, অভয়নগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এনামুল হক বাবুল, যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রয়াত শাহ হাদীউজ্জামানের জ্যেষ্ঠ পুত্র উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীর, নাজমুল ইসলাম কাজল। দলীয় নেতাকর্মীরা এখানে চায় নতুন মুখ। তাদের বক্তব্য অনেক এমপি দেখলাম। কর্মীদের জন্য কেউ কিছু করেনি। এবার চায় নতুন মুখ। তাকে আমরা ভোট দেব। এই আসনে অন্য দলের আরও বেশ কয়েকজন মনোনয়ন চাইবেন। এরা হলেনÑ অভয়নগর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল (অব) সাব্বির আহমেদ, যশোর জেলা নবগঠিত জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম জহির, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাঘারপাড়া থানা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য ফারাজী মতিয়ার রহমান। এখানে বিএনপির শত শত নেতাকর্মী মামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনের বর্তমান এমপি স্বপন ভট্টচার্য। স্বতন্ত্র নির্বাচনে দাঁড়িয়ে তিনি নৌকা মার্কার প্রার্থী এ্যাডভোকেট খান টিপু সুলতানকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। স্বপন ভট্টাচার্যকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও পরে আবার ফিরিয়ে নেয়া হয়। এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে এখানে এবার আরও মনোনয়ন চাইবেন স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, মণিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু, জেলা যুবলীগের সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, প্রয়াত সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট খান টিপু সুলতানের স্ত্রী জেসমিন আরা। তারা এলাকায় গণসংযোগ করছেন এবং দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। দলীয় নেতাকর্মীরা এখানে নতুন মুখ চায়। তাদের বক্তব্য; জামায়াত বিএনপির সঙ্গে যাদের যোগাযোগ, এমন নেতাকে মনোনয়ন দিলে এই আসন হারাবে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে এখানে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী হওয়ার জন্য মাঠে রয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল এবং ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা মুফতি ওয়াক্কাস। মুফতি ওয়াক্কাস এই আসনে দুই বার এমপি ছিলেন। তবে বিএনপি নেতাদের দাবি এখানে ইসলামী ঐক্যজোটের ভোটের চেয়ে বিএনপির ভোট বেশি। তাই প্রার্থী করতে তবে বিএনপি থেকে। যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের বর্তমান এমপি ইসমাত আরা সাদেক। তিনি প্রয়াত শিক্ষামন্ত্রী এএস এইচ কে সাদেকের স্ত্রী। বর্তমান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে নিয়োজিত। তার স্বামীর সময়ে অজপাড়াগাঁয়ের কেশবপুরে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। তিনি ছাড়াও এবার এই আসনে আওয়ামী লীগের আরও মনোনয়ন চাইবেন কেশবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এইচএম আমির হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম রুহুল আমিন, জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ কাজী রফিকুল ইসলাম। এছাড়া এ্যাডভোকেট হোসাইন মোহাম্মদ ইসলাম এবং শেখ রফিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রচারাভিযান চালাচ্ছেন। আর বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে সভাসমাবেশ ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ, যশোর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মজিদপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু বকর আবু, কেন্দ্রীয় নেতা অমলেন্দু দাস অপু ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানও বিএনপির প্রার্থী হতে চান বলে প্রচার করছেন। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে উপজেলা সভাপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ প্রার্থিতা পেতে চেষ্টা ও গণসংযোগ করছেন। জাতীয় পার্টির অপর প্রার্থী সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ রানা জোটের সমর্থনে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে মোঃ মোক্তার আলী নির্বাচনী প্রচার করছেন।
×