ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা

লৌহপ্রাচীর- না কচুপাতার পানি

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২০ অক্টোবর ২০১৮

লৌহপ্রাচীর- না কচুপাতার  পানি

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ জাতীয় একাদশ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ততই উত্তাপ সৃষ্টির চেষ্টার আলামত পাওয়া যাচ্ছে। এই নির্বাচন কেন্দ্র করে কি ঘটতে যাচ্ছে- তার স্পষ্ট না হলেও অশুভ শক্তি যে ভর করছে তা সুস্পষ্ট। শান্তিকামী সাধারণ মানুষের মনে ব্যাপক শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে এই বলে যে, উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত এ দেশটিতে নির্বাচন কেন্দ্রিক ভয়ানক ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা রচিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা ঐক্যবদ্ধ যে হচ্ছে তা স্পষ্ট দৃশ্যমান। জামায়াত-শিবির, জঙ্গী সংগঠনসহ মৌলবাদী শক্তি রক্ত ঝরিয়েও ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। জঙ্গীবাদে জড়িতদের মদদ দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টাও নস্যাত হয়েছে। দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি এসব ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত হয়ে নিজেদেরকে ক্রমাগতভাবে ডাউনগ্রেডেড করেছে। ক্ষমতায় আরোহণের পথ তাদের জন্য দিনে দিনে হয়ে গেছে বন্ধুর। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন শীর্ষ আলোচনায় আগামী সংসদ নির্বাচন। সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে, ধোঁকা দিয়ে পথ চলায় অগ্রসর হতে গিয়ে পুঁতিময় গন্ধ ছড়াচ্ছে। মূলত এ কারণেই ষড়যন্ত্রের পথই বেছে নেয়া হয়েছে বলে শান্তিকামী মানুষের মনে এমন ধারণা ইতোমধ্যে প্রোথিত হয়েছে। রচিত নীলনক্সা ও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যেসব মুখ দেখা যাচ্ছে তাদের তৎপরতা সেই ‘মীরজাফর’-এর ভূমিকার মতই প্রতীয়মান। এই মীরজাফরের চক্র বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজ উদ্দৌলার পতন ঘটিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংস কায়দায় হত্যা করেছে। জাতীয় চার নেতাকে হত্যার জন্য জেলখানার দুয়ার খুলে দেয়ার ঘটনা রয়েছে। এই মীরজাফররা বঙ্গবন্ধুর তনয়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও দফায় দফায় হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু অদৃষ্ট ছিল প্রতিকূলে। ফলে ব্যর্থ হয়েছে ষড়যন্ত্র। সেই মীরজাফরদের ষড়যন্ত্রের দিন একেবারে শেষ না হলেও শক্তি সামর্থ্যে একেবারে ক্ষয়িষ্ণু। কেননা, জনগণের সমর্থন ছাড়া ষড়যন্ত্র নিয়ে টিকে থাকা যে সম্ভব নয় তা ইতিহাস প্রমাণিত। বর্তমানে এসব ষড়যন্ত্রকারীর সকল অপতৎপরতা জনগণের কাছে পরিষ্কার। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মীরজাফরের পদাঙ্ক অনুসারীরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের জালও বিস্তৃত হয়েছে। অপতৎপরতা চলছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শক্তির বিরুদ্ধে কথিত লৌহ প্রাচীর সৃষ্টি করার। লৌহ প্রাচীর-লৌহ পর্দা যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষয়টি কচুপাতার পানি বলেই আখ্যায়িত হয়েছে। যা টোকা দিলেই ছিটকে পড়বে। এদেশে নির্বাচন মানে উল্লাসমুখর পরিবেশ এবং এর বিপরীতে রয়েছে ষড়যন্ত্রকারীদের উত্তাপ সৃষ্টির অপচেষ্টা। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ ততই উন্মোচিত হচ্ছে। নানা অপকর্মের জের হিসেবে অন্যতম বিরোধী দল বিএনপির শক্তি নড়বড়ে অবস্থানে। এ দলটির সমর্থন যে নেই তা নয়। কিন্তু যেহেতু মাথায় পচন ধরেছে এবং যা ক্রমশ নিম্নাঙ্গমুখী সেক্ষেত্রে এ দলটি ষড়যন্ত্রকারী শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। এ শক্তির নেপথ্যের ভূমিকায় রয়েছে পাকিপ্রেমীসহ দেশী-বিদেশী দুষ্টু চক্রের হিংস্র তৎপরতা। আলোচিত হচ্ছে নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে রয়েছেন যে ড. কামাল হোসেন তিনি ব্যবহৃত হচ্ছেন রীতিমতো ভিলেন হিসেবে। অল্প কিছুদিন আগেও যাদের সঙ্গে এই ড. কামাল হোসেনের সখ্য ও ঐক্যের বন্ধন ছিল তারাই ঐক্যফ্রন্টকে ষড়যন্ত্রকারী আখ্যা দিয়ে বিকল্প ধারা, ন্যাপ ও এনডিপির সমন্বয়ে আরেকটি জোট বাঁধার ঘোষণা দিয়েছে ইতোমধ্যে। এ জোটের নেতৃত্বে আসছেন সাবেক এক রাষ্ট্রপতি। ঐক্যফ্রন্টের নেতাও অতীতে আওয়ামী লীগ সরকারেরই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে স্বাদ নিয়েছেন। রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই বলে একটি কথা রয়েছে এরই অনুসরণে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা শক্তি থেকে ছিটকে পড়া ষড়যন্ত্রকারীরা জোট বেঁধেছে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা বাস্তবায়ন নিয়ে অগ্রসরমান বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার গত প্রায় এক দশক ধরে অতীতের কলঙ্কজনক বহু অধ্যায়ের কবর রচনা করতে সক্ষম হয়েছে, যা এদেশের ইতিহাসে চির অম্লান হয়ে থাকবে। আলোচিত হচ্ছে যত ঈর্ষা, ক্ষোভ, বেদনা, জ্বালা-যন্ত্রণা, না পাওয়ার যাতনা ইত্যাদিই তো ষড়যন্ত্রের মূলে নিহীত। নচেত ড. কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তির সঙ্গে হাত মেলায় এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না রাজনীতি সচেতন মহলগুলো। রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত হচ্ছে, জনগণের আস্থা যেখানে রাজনীতির মূল শক্তি-সেখানে নীতিহীন মূল্যবোধ বিবর্জিতদের নিয়ে গড়া কথিত ঐক্যজোট মূলত ষড়যন্ত্রকারীদের ছাতার নিচে এক হওয়ারই জোট। যুগে যুগে সব সময় কোন না কোনভাবে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। এরা কখনও সফল আবার কখনও ব্যর্থ। আবার যে সফলতা তা হয়েছে সাময়িক। এদের খোলস উন্মোচিত হওয়ার পর স্থান হয়েছে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে। আলোচিত হচ্ছে এদেশে মূলত দুটি শক্তি রাজনীতিতে সক্রিয়। এর একটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সহমত পোষণকারীদের নিয়ে গড়া জোট। আরেকটি হচ্ছে এন্টি আওয়ামী লীগারদের এক কাতারে গিয়ে ষড়যন্ত্রের পথে এগোনো। মহান মুক্তিযুদ্ধেও এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু প্রিয় স্বাধীনতাকামীদের সশস্ত্র লড়াই বলীদান ও মা-বোনদের পবিত্র ইজ্জতের বিনিময়ে জন্ম নিয়েছে লাল সবুজের পতাকা এ দেশ। অনুরূপভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে লৌহ পর্দা বা প্রাচীর সৃষ্টির চেষ্টায় এখন লিপ্ত হতে দেখা যাচ্ছে ষড়যন্ত্রকারী চক্রের সদস্যদের। এরা সংখ্যায় হাতেগোনা। এদের সমর্থকরাও বিব্রত ও বিভ্রান্ত। আওয়ামী লীগ নাম শুনলেই যারা নাকে রুমাল ধরতে তৎপর হয় মূলত এরাই ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে যে হাত মেলাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থান এতই মজবুত যে এ দলের মার্কাটি ভোটার মহলের জন্য যথেষ্ট। অর্থাৎ মার্কাই মূল নিয়ামক শক্তি হিসেবে এখনও বড় ধরনের কাজ করছে। এই মার্কার বিপরীতে কথিত শক্তি পর্বের যতই আগমন ঘটুক না কেন, ফলাফল যে খুব বেশি অনুকূলে আসবে তা বিশ্বাসে আসে না সাধারণ মহলে। তবে অতীতে এদেশের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ছিটকে পড়া বিএনপিতে যে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে এতে কোন সন্দেহ নেই। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই তো অন্য দলছুট, বিশ্বাসঘাতক চক্র এবং স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও জঙ্গীবাদে জড়িতদের বলয়ে নিজেদের স্থান দিয়েছে। রাজনৈতিক মহলে আলোচিত হচ্ছে, নতুন প্রজন্মের বড় একটি অংশ ভোটার হয়ে এসব ষড়যন্ত্রকারীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরা মিথ্যা ইতিহাসের বিরুদ্ধে অনঢ় অবস্থান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের নীলনক্সা বাস্তবায়নে বড় ধরনের যে হোঁচট খাবে তা এদেশের জন্য রচিত হবে নতুন আরেক ইতিহাস- এমন ধারণা নিয়েই রাজনৈতিক অঙ্গন জল্পনাকল্পনায় ভরপুর।
×