ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোস্ট ওয়ান্টেড মেজর জিয়া এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৩ অক্টোবর ২০১৮

মোস্ট ওয়ান্টেড মেজর জিয়া এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে বহুল আলোচিত ব্লগার, লেখক, প্রকাশক হত্যা ও সেনাবাহিনীতে ক্যু করার ব্যর্থ চেষ্টাকারী মেজর জিয়া। মোস্ট ওয়ান্টেড এই আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় ব্লগার, লেখক, প্রকাশকসহ বহু আলোচিত মামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হচ্ছে না। ফলে চার্জশীটও দাখিল করতে পারছে না তদন্তকারী সংস্থাগুলো। মেজর জিয়াসহ আরও কিছু আসামি গ্রেফতার না হওয়ার কারণে কলাবাগানে বাসায় ঢুকে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির খালাত ভাই ও ইউএসএআইডি কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারছে না তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সোমবার এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। আগামী ২৮ অক্টোবর নতুন তারিখ ধার্য করতে হয়েছে আদালতকে। সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম সারাফুজ্জামান আনসারী জুলহাজ মান্নান ও তনয় হত্যার নতুন তারিখ ধার্য করেন। সোমবার আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানে বাসায় ঢুকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয়কে হত্যা করে জঙ্গীরা। এ ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে দ্বিতীয় দফায় পাঁচদিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অন্যতম শীর্ষ পর্যায়ের নেতা শিহাবকে। শিহাব জানায়, তার কাজ ছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সিøপার সেলের সদস্যদের মধ্যে অস্ত্রগোলাবারুদ সরবরাহ করা। অস্ত্রগোলাবারুদ সরবরাহ করার সুবাদে প্রতিটি হত্যাকা-ের আগে কাকে হত্যা করা হবে সে তা জানত। শিহাব ঢাকায় অভিজিৎ রায়, ব্লগার নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন, সিলেটে অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা, মোহাম্মদপুরে শুদ্ধস্বর প্রকাশনীতে হামলা করে তিনজনকে হত্যা চেষ্টা এবং সর্বশেষ কলাবাগানে দুইজনকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাটি আগে থেকেই জানত। পুরো হত্যাকা-টি পরিচালিত হতো মেজর জিয়ার নির্দেশে। মেজর জিয়া নির্দেশ দেয়ার পর শিহাব সিøপার সেলের জঙ্গীদের কাছে অস্ত্রগোলাবারুদ সরবরাহ করত। মেজর জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ থাকার সূত্রধরে শিহাবের সঙ্গে সারাদেশে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অপারেশনাল ইউনিটে থাকা সব জঙ্গীর পরিচয় ছিল। সর্বশেষ ঢাকা মহানগর পুলিশ ২০১৬ সালের ১৯ মে যে ছয় জঙ্গীর ছবি প্রকাশ করে তাদের ধরিয়ে দিতে ১৮ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণাও করেছিল, সেই ছয়জনের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। পুরস্কার ঘোষিত ছয় জঙ্গীর মধ্যে শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে শরিফ ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদী-১ ও সেলিম ওরফে ইকবাল ওরফে মামুন ওরফে হাদী-২ কে ধরিয়ে দিতে ৫ লাখ টাকা করে দশ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। অপর চারজন সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আব্দুস সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে সালমান ওরফে সাদ, শিহাব ওরফে সুমন ওরফে সাইফুল ও সাজ্জাদ ওরফে সজিব ওরফে সিয়াম ওরফে শামসকে ধরিয়ে দিতে প্রত্যেকের জন্য ২ লাখ টাকা করে ৮ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। পুরস্কার ঘোষিত ছয় জঙ্গীর সঙ্গেই পলাতক মেজর জিয়ার সরাসরি যোগাযোগ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। মেজর জিয়ার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে বাংলাদেশে সব ব্লগার, লেখক, প্রকাশক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তবে মেজর জিয়া ছাড়াও আরও কয়েকজন এর সঙ্গে জড়িত। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, মেজর জিয়া গ্রেফতার হলে বাংলাদেশের অনেক হত্যা রহস্যের প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হতো। বিশেষ করে এখন পর্যন্ত জঙ্গীদের হাতে হত্যাকা-ের শিকার হওয়া অধিকাংশ ঘটনার রহস্যের কিনারা হতো। মেজর জিয়ার কারণে অনেক হত্যাকা-ের পূর্র্ণাঙ্গ তদন্ত সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বারবার আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করতে হচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও ডিবি পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের। শুধু তাই নয়, যুবকদের বিপথে নেয়ার পেছনে প্রকৃতপক্ষে কারা জড়িত, কিভাবে যুবকদের বিপথগামী আদ্যোপান্তও জানা যাবে। তাকে গ্রেফতারে চেষ্টা অব্যাহত আছে।
×