ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুই প্রধানমন্ত্রী কাল ভিডিও কনফারেন্সে নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করবেন

এবার ভারত থেকে জ্বালানি তেল আসবে পাইপলাইনে

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  এবার ভারত থেকে জ্বালানি তেল আসবে পাইপলাইনে

রশিদ মামুন ॥ ভারত থেকে জ¦ালানি তেল আমদানির পাইপলাইন নির্মাণ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। আগামীকাল মঙ্গলবার দিল্লী এবং ঢাকার মধ্যে ভিডিও সংলাপে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে এক সপ্তাহের ব্যবধানে এটি দ্বিতীয় ভিডিও সংলাপ। সম্প্রতি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি উদ্বোধন করেন। একই সঙ্গে গত সপ্তাহের মতো এবারও রেলওয়ের কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধন করা হবে। জ¦ালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্র জানায়, দিল্লীর স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে চারটা এবং ঢাকার স্থানীয় সময় ৫টায় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী সংলাপে মিলিত হবেন। পিপিসি সূত্র বলছে, ভারতের অনুদানে ৫২০ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। এজন্য সীমান্ত এলাকা থেকে পার্বতীপুর তেল ডিপো পর্যন্ত ১২৫ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানোর জমি অধিগ্রহণ করে দিতে হবে। ভারত এই প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করবে এবং পাইপলাইন নির্মাণ করে দেবে। বার্ষিক ১০ লাখ মেট্রিক টন পরিবহন ক্ষমতার এই পাইপলাইন দিয়ে শুধু দেশের উত্তরাঞ্চলের চাহিদা মেটানোর মতো ভারত থেকে ডিজেল আমদানি করা হবে। ভারত ২০০০ সালে আসামের নুমালিগড়ে তেল পরিশোধনাগার গড়ে তোলে। এই পরিশোধনাগারের মালিকানার সিংহভাগ রয়েছে ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের হাতে। এককভাবে ভারতের রাষ্ট্রীয় এই সংস্থা পরিশোধনাগারের ৬১ দশমিক ৬৫ ভাগ শেয়ারের মালিক। বাকি ৩৯ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে আসাম সরকারের হাতে রয়েছে ১২ দশমিক ৩৫ শতাংশ আর অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের হাতে রয়েছে ২৬ ভাগ শেয়ার। ভারতের রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সরকার থেকে সরকার ক্রয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডিজেল আমদানি করা হবে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) চেয়ারম্যান মোঃ আকরাম-আল-হোসেন বলেন, পাইপলাইনের ক্ষমতা বেশি হলেও আমরা আমাদের চাহিদা মাফিক তেল আনব। তিনি জানান, ১৫ বছর মেয়াদী চুক্তির প্রথম তিন বছর আড়াই লাখ মেট্রিক টন পরের তিন বছর তিন লাখ মেট্রিক টন, পরবর্তী চার বছর (৭ম থেকে ১০ম বছর) পর্যন্ত আসবে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন এবং পরবর্তী পাঁচ বছর (১১তম থেকে ১৫তম) আসবে চার লাখ মেট্রিক টন করে। পাইপলাইন নির্মাণে আমাদের কি লাভ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এখন তেল আমদানিতে প্রতি ব্যারেলে ৩ দশমিক ১৫ ডলার প্রিমিয়াম দিতে হয়। এটাকে বহির্নোঙ্গর থেকে চট্টগ্রাম সেখান থেকে খুলনার দৌলতপুর পর্যন্ত নিতে হয়। এরপর রেলওয়েতে করে পার্বতীপুর পর্যন্ত নিতে আমাদের ব্যারেল প্রতি সাড়ে সাত ডলার খরচ হয়। আবার ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতেও খরচ হয়। এর বিপরীতে ভারতকে আমাদের ব্যারেল প্রতি সাড়ে পাঁচ ডলার প্রিমিয়াম দিতে হবে। আমরা হিসেব করে দেখেছি আমাদের ব্যারেল প্রতি এক দশমিক ৮৭ ডলার সাশ্রয় হবে। যাতে আমাদের বছরে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। চুক্তির ১৫ বছরজুড়ে এই সাশ্রয়ের পরিমাণ প্রায় ১৮০ কোটি টাকার মতো। এখন তেল পরিবহনে যে ঝামেলা তা থেকে মুক্তি মিলবে বলে তিনি আশা করেন। পাইপলাইনের ১৩০ কিলোমিটারের মধ্যে জিরো পয়েন্টে মিটার বসানো হবে। সেখানে দুই দেশই মিটারে তেলের সরবরাহ এবং গ্রহণের পরিমাণ দেখতে পারবে। ভারত বাংলাদেশের মধ্যে এর আগে বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। আর এখন তেল পরিবহনে পাইপলাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জ¦ালানি তেলের বেশিরভাগই চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশে আনা হয়। দেশের বার্ষিক জ¦ালানি চাহিদা প্রায় ৬০ লাখ মেট্রিক টনের মধ্যে ১৫ লাখ মেট্রিক টন দেশে পরিশোধন করা হয়। অবশিষ্ট পরিশোধিত তেল আমদানি করে বিপিসি। দুই দেশের সরকারী পর্যায়ে চুক্তির পর ২০১৬ সালের ১৯ জুন ভারত থেকে প্রথম ট্রেনে করে জ¦ালানি তেল আসে। তখন উভয় দেশ জ¦ালানির পরিবহন ব্যয় কমাতে পাইপলাইন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
×