ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বল্পমেয়াদী বন্যার কবলে পড়তে যাচ্ছে দেশ

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

স্বল্পমেয়াদী বন্যার কবলে পড়তে যাচ্ছে দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এই সপ্তাহেই স্বল্পমেয়াদী বন্যার কবলে পড়তে যাচ্ছে দেশ। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে মূলত উজান থেকে নেমে আসা পানি এবং দেশে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে ইতোমধ্যে প্রধান প্রধান নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। তারা জানায় বন্যার প্রভাবে দেশের উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের নিম্ন এলাকা প্লাবিত হতে পারে। ইতোমধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং বগুড়া জেলায় বন্যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এসব এলাকার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, অসম ও পশ্চিমবঙ্গে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। উজান থেকে মেনে আসা এই পানির কারণে দেশের নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। অসম ও পশ্চিমবঙ্গে ভারি বৃষ্টিপাত আরও কয়েকদিন ধরে অব্যাহত থাকবে। উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণেই মূলত আগামী বুধবার পর্যন্ত দেশের সবগুলো নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। পানি বৃদ্ধির কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল-মধ্যাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা দেখা দেবে। তিনি উল্লেখ করেন দেশের ভেতরেও ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে দেশের ভারি বৃষ্টিপাত দেখা দিলে বন্যা পরিস্থিতি আরও ত্বরান্বিত হতে পারে। তিনি জানান, আগামী বুধবার পর্যন্ত দেশের সব নদীর পানি বাড়বে। তবে আগামী শনিবার থেকে নদ নদী থেকে পানি কমে যাবে। তবে তিনি বলেন, আশঙ্কা থাকলেও চীনের বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে দেশে কোন প্রভাব পড়েনি। গত সপ্তাহে চীনের বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট পানি ব্রহ্মপুত্র যমুনা হয়ে বাংলাদেশে বন্যা সৃষ্টি করতে পারে বলে দিল্লী থেকে ঢাকাকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে তখনি বলা হয়েছে চীনের নদীর পানিতে দেশে বন্যা কোন প্রভাব পড়বে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে তাদের পর্যবেক্ষাধীন সারাদেশের নদীগুলোর সমতল স্টেশনের মধ্যে সুরমা নদী কানাইঘাটে পানি বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া বাকি সব নদীর পানিই বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও নদীর পানি বাড়ছে। তারা জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গ-পদ্মা নদীর পানি সমতলে বাড়ছে যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীসমূহের পানিও বাড়ছে। এছাড়াও আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বগুড়া সিলেট সুনামগঞ্জ জেলাসমূহের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। ষড়ঋতুই এই দেশে আষাঢ়-শ্রাবণই বর্ষার আসল সময়। এই সময়ে মূলত প্রতি বছর মৌসুমি বন্যা দেখা দেয়। এবার বিভিন্ন কারণে মৌসুমি বন্যার দেখা মেলেনি। প্রকৃতি থেকে বর্ষাকালও বিদায় নিয়ে একমাস হতে চলল। শেষ সময়ে উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যার অবস্থা তৈরি হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে এবার প্রকৃতিতে মৌসুমি বায়ু অনেকটা আগেই জুনের এক তারিখে দেশের ভেতরে মৌসুমি প্রবেশ করে। কিন্তু পুরো বর্ষা জুড়েই মৌসুমি বায়ু পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের জন্য সক্রিয় হতে পারেনি। ফলে আষাঢ়-শ্রাবণে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন এবার সাগরে অব্যাহতভাবে লঘুচাপ সৃষ্টির কারণে দেশের ভেতরে বিস্তার থাকা মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হতে পারেনি। এ কারণে পুরো বর্ষায় তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। প্রকৃতি থেকে বর্ষা বিদায় নেয়ার প্রায় একমাস পর মৌসুমি বায়ু হঠাৎ সক্রিয় হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আগামী দুই থেকে তিনদিন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে। এই অবস্থায় দেশের নদ-নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেতে থাকবে। বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অফিসের সতর্কবার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে আজ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (৪৪-৮৮ মি.মি.) থেকে অতিভারি (৮৯ মি.মি.) বর্ষণ হতে পারে। তারা জানায়, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে অসম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে। এই অবস্থায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে। তারা জানায়, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে গত তিন-চার দিন থেকে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আগামী আরও দুইতিন দিন দেশে এই অবস্থা বিরাজ করছে। দীর্ঘাদন বৃষ্টিপাত না হলে খোদ রাজধানী ঢাকাতে গত কয়েকদিনে ভারি বৃষ্টিপাত দেখা মিলছে। পাশাপাশি সারাদেশেই কমবেশি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টির কারণে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
×