ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন থেকে পালাতে বিএনপির নাশকতার ছক ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  নির্বাচন থেকে পালাতে বিএনপির নাশকতার ছক ॥ কাদের

রাজন ভট্টাচার্য/তাহমিন হক ববি, উত্তরাঞ্চল থেকে ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, উত্তরাঞ্চলে আওয়ামী লীগের ট্রেনযাত্রায় জনগণের বিপুল সাড়া বিএনপিকে আবারও বুঝিয়ে দিয়েছে, আগামী নির্বাচনে জয় পাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের ক্ষমতায় আসারও আর কোন সম্ভাবনা নেই। তাই নির্বাচনে হেরে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে তারা এখন নির্বাচন থেকে পালাতে নাশকতার ছক আঁকছে। রবিবার নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। আগের দিন শনিবার উত্তরাঞ্চল অভিমুখে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ট্রেনযাত্রায় ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনযোগে নীলফামারী আসেন তিনি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে এই ট্রেনযাত্রার পথে টাঙ্গাইল থেকে শুরু করে বিভিন্ন রেলস্টেশনে ১২টি পথসভা এবং সর্বশেষ নীলফামারীতে দলীয় কর্মীসভায় বক্তব্য রাখেন ওবায়দুল কাদের। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও মানুষের উপস্থিতিতে এসব সভায় আওয়ামী লীগ নেতারা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে নৌকার পক্ষে মানুষের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন। একই সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের আগামী নির্বাচনের প্রস্ততি নেয়ার নির্দেশনাও দেন। সেখান থেকে বিমানযোগে ঢাকা ফেরার পথে বরিবার সকালে ওই সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে হেরে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে বিএনপির এখন টার্গেট হচ্ছে নির্বাচন থেকে কীভাবে পালিয়ে যাওয়া যায়। নির্বাচন থেকে পালাতে তারা সেই নাশকতার ষড়যন্ত্র করছে। পালাতে হলে নাশকতা ও সহিংসতা ছাড়া তাদের আর উপায় নেই। নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে কোন অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মাত্র দেড় থেকে দু’মাস বাকি। এ সময়ে দেশে কোন অস্থিরতা আছে? কোন অশান্তি আছে? আমাদের প্রতিপক্ষের বিষোদ্গারের মধ্যে অশান্তি আর অস্থিরতা বিরাজ করছে। কিন্তু দেশের জনগণের মধ্যে কোন অস্থিরতা নেই। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন হবে না- বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, শনিবার আওয়ামী লীগের ট্রেনযাত্রায় যে জনস্রোত, তা তো দশ বছরেও বিএনপি মাঠে নামাতে পারেনি। ১০ বছরে দশ মিনিটও তারা রাস্তায় নামেনি। খালেদা জিয়া যখন জেলের বাইরে ছিলেন, তখনও তার ডাকে মানুষ সাড়া দেয়নি। তাই বিএনপি বিরোধী দল হওয়ারও যোগ্যতা হারিয়েছে। এদেশে কোন ব্যর্থ বিরোধী দলের নাম নিতে হলে বিএনপিকে চিরকাল এদেশের মানুষ মনে রাখবে। আন্দোলনের সক্ষমতা তারা দেখাতে পারেনি। কাজেই বিএনপির আন্দোলনের হুমকি তর্জন গর্জন ছাড়া আর কিছুই নয়। কাদের বলেন, আন্দোলনের ডাক দিয়ে এই দলের নেতাদের কয়েকজন এখন পল্টনের অফিসে বসে সারাদিন ফেসবুকিং করেন। আর বেশিরভাগই এসি রুমে বসে হিন্দী সিরিয়াল দেখেন। ১০ বছরে তারা মাঠে নামতে পারেনি, আগামীতেও পারবে না। বিএনপির আন্দোলন মাঠে না থাকলেও মিডিয়ায় আছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই কারণেই তারা শিক্ষার্থী আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনে ভর করার চেষ্টা করেছে। তবে সব জায়গাতেই তারা ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে- এমন তথ্যও সরকারের কাছে রয়েছে। তারা দেশ-বিদেশে বসে নাশকতা কীভাবে করা যায়, সেই পরিকল্পনা করছে। গতকালের ট্রেন যাত্রায় পথসভার উপস্থিতি দেখে তারা তো বুঝতে পেরেছে এদেশে বিএনপি ও তাদের দোসরদের নির্বাচনে জয়লাভ করা সম্ভব নয়। আগামী নির্বাচনের আগে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠন সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের কার্যপরিধি, আকার ও গঠন সবই সংবিধানে বলা আছে। এই সরকার গঠন প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তিনিই জানেন, কবে, কখন ও কীভাবে এই সরকার গঠন হবে। তবে, গতবার এই সরকারের আকার সংক্ষিপ্ত হয়েছে, এবারও সেটাই হবে বলে আমার ধারণা। আর বিএনপিসহ যেসব দলের সংসদে প্রতিনিধি নেই, তারা এই সরকারে আসতে পারবে না। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ট্রেনযাত্রায় বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে সন্তোষ জানিয়ে তিনি বলেন, এত মানুষ আসবেন, তা তিনি নিজেও কল্পনা করেননি। টাঙ্গাইল থেকে নীলফামারী যে বিপুল জনস্রোত, তার সবাই কী আওয়ামী লীগ করেন? আর এত সুশৃঙ্খলাবদ্ধ সমাবেশ, কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা নেই, সিঙ্গেল ইনসিডেন্সও নেই। নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন, কিন্তু কোন টুঁ শব্দ হয়নি। কোথাও কোন মারামারি ও হাতাহাতি হয়নি। বিপরীতে বিএনপির সমাবেশ মানেই নেতাকর্মীদের হাতাহাতি, মারামারি ও বিশৃঙ্খলা বলে মন্তব্য করেন তিনি। দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের উদ্যোগ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, কিছু কিছু এলাকায় দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসন করা হয়েছে। কিছু জায়গায় প্রকাশ্যে সতর্ক করা হয়েছে, কিছু জায়গায় নেতাদের ট্রেনে ডেকে এনেও সতর্ক করা হয়েছে। তিনি জানান, পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে পদ্মা সেতুর স্প্যান বসাতে সমস্যা দেখা দেয়ায় এই সেতুর কাজ শেষ করতে বিলম্বিত হতে পারে। আগামী অক্টোবরে দেশের প্রথম ছয় লেনের এক্সপ্রেস ওয়ে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়ে উ™ে^াধন করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
×