ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

আইডিবির রিজিওনাল হাবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

মিয়ানমারকে চাপ দিতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ চান প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  মিয়ানমারকে চাপ দিতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ চান প্রধানমন্ত্রী

বিডিনিউজ ॥ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার চুক্তি কার্যকরে মিয়ানমারকে বাধ্য করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ‘সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ’ চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসন ব্লুতে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের রিজিওনাল হাবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিল মানবিক কারণে। কিন্তু মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে হবে। ‘বাংলাদেশ অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে একটি মানবিক সঙ্কট মোকাবেলা করছে। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়ে তাদের প্রবেশ করতে দিয়েছে। ‘নিজস্ব সম্পদ, বাস্তুসংস্থান ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে জানা সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অনুপ্রবেশ করতে দিয়েছে। এখন আমরা তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চাই।’ মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে গতবছর অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আর গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও গত দশ মাসে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। সম্প্রতি ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে আলোচনায় মিয়ানমার কখনও আপত্তি করে না। কিন্তু বাস্তবতা হল- তারা বলে, কিন্তু করে না। এ কারণে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আইডিবির অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সুনির্দিষ্ট কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করার জন্য আইডিবিকে আমি সুদৃঢ়ভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।’ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করার জন্য ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের সভাপতির প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব প্রশমন এবং অভিযোজনের জন্য ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কর্মকৌশল ও কর্মপরিকল্পনার আওতায় বেশকিছু কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। নিজস্ব অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন খাতে বিনিয়োগের চাহিদা, বর্তমান অবস্থা ও ঘাটতি পর্যালোচনা করতে বাংলাদেশ একটি কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (২০১৬-২০২১) তৈরি করেছে, যা বাস্তবায়নে মোট ১১.৭ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। আইডিবির কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে এ পর্যন্ত ৪.৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। অর্থাৎ আরও সাত বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি পূরণে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।’ ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বন্দর এম এইচ হাজ্জার এবং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও উপস্থিত ছিলেন এডিবির রিজিওনাল হাবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। ঢাকায় এই রিজিওনাল হাব চালু করায় আইডিবিকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি সদর-দফতর থেকে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণের অংশ। এর ফলে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ ও আইডিবির অন্যান্য আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম আরও দক্ষ, উন্নত ও গতিশীল হবে।’ অন্যতম উন্নয়ন-সহযোগী আইডিবির কাছ থেকে গত চার দশকে বাংলাদেশের ২২ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার বিষয়টি স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকায় নতুন অফিস স্থাপন বাংলাদেশের সঙ্গে আইডিবির সম্পর্ক সুসংহত এবং অংশীদারিত্ব সুদৃঢ় করার একটি ধাপ বলেই আমি মনে করি।’
×