ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অক্টোবরে বড় আন্দোলন কর্মসূচীর প্রস্তুতি বিএনপির

প্রকাশিত: ০৫:১১, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  অক্টোবরে বড় আন্দোলন কর্মসূচীর প্রস্তুতি  বিএনপির

শরীফুল ইসলাম ॥ রাজপথে তেমন কোন কর্মসূচী না থাকলেও তলে তলে কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অক্টোবরে বড় ধরনের আন্দোলন কর্মসূচী নিয়ে রাজপথে নামার ছক কষছে দলটি। এ জন্য দেশ-বিদেশে বিএনপির সব ইউনিটকে সক্রিয় করার কৌশল নেয়া হয়েছে। সূত্র মতে, দীর্ঘদিন থেকেই বিএনপির সিনিয়র নেতাদের ওপর লন্ডন থেকে চাপ আসছে কঠোর আন্দোলনের। তৃণমূল নেতাকর্মীরাও কঠোর আন্দোলনের পক্ষে চাপ দিয়ে আসছে। কিন্তু কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এখনই কঠোর আন্দোলনে না গিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে আন্দোলন চাঙ্গার পক্ষে মত দিয়েছেন। তারই নির্দেশক্রমে অক্টোবরে বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিট কমিটিতে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে বিএনপির যেসব ইউনিট রয়েছে তাদেরও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। জানা যায় এ মাসের শেষদিক থেকে ধাপে ধাপে রাজপথে কর্মসূচী বাড়ানোর চেষ্টা করবে বিএনপি। প্রথমে খালেদা জিয়ার কারামুক্তির জন্য আন্দোলন শুরু করে পরে সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য কিছু দাবি আদায়ের পক্ষে আন্দোলন জোরদারের চেষ্টা করবে। বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার শর্ত হিসেবে ইতোমধ্যেই সরকারের কাছে দাবিগুলো পেশ করেছে বিএনপি। এগুলো হচ্ছে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংসদ ভেঙ্গে দেয়া, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন ইত্যাদি। এছাড়া দফায় দফায় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেও বিএনপি নেতারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বেশ কিছু দাবি-দাওয়া পেশ করেছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের আমলে তারা আন্দোলন করে এখন পর্যন্ত কোন সুবিধা না পেলেও শেষ দিকে গিয়ে তারা এ সরকারকে বড় ধরনের চাপে ফেলে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতে চায়। যেভাবে ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে আন্দোলনে তেমন সুবিধা আদায় করতে না পারলেও শেষ দিকে জামায়াতকে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করে রাজপথে আন্দোলন চাঙ্গা করেছিল। এবারও নির্বাচনের আগে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার চেষ্টা চলছে। কোন কারণে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য না করতে পারলেও ২০ দলীয় জোট শরিকদের নিয়েই বিএনপি রাজপথ কাঁপাতে চায়। যেভাবে ’১৩ সালের শেষদিকে জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলন করেছিল। নেতাকর্মীদের ধীরে ধীরে আন্দোলনমুখী করতে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি ও কারাগারে আদালত স্থানান্তরের প্রতিবাদে ইতোমধ্যেই তিন দিনের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে বিএনপি। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে আজ ৮ সেপ্টেম্বর সারাদেশে সব মহানগর ও জেলায় প্রতিবাদ সমাবেশ, ১০ সেপ্টেম্বর বেলা এগারোটা থেকে বারোটা পর্যন্ত সব মহানগর ও জেলায় মানববন্ধন এবং বারো সেপ্টেম্বর রাজধানীসহ সারাদেশে সকাল দশটা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত প্রতীকী অনশন পালন। এ ইস্যুতে এ মাসের শেষের দিকে তুলনামূলক আরও কঠোর কর্মসূচী দেয়ার সিদ্ধান্তও নিয়ে রেখেছে দলটি। এ ছাড়া অক্টোবরের শুরু থেকেই কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়ে সম্প্রতি দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে তফসিল ঘোষণার পর প্রতিদিন যাতে রাজপথে কর্মসূচী থাকে সে ধরনের একটি ছক করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, অক্টোবরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ও ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন এমনটি ধরে নিয়েই বিএনপি আন্দোলন কর্মসূচীসহ যাবতীয় ছক কষছে। এসব কর্মসূচী প্রণয়নের ক্ষেত্রে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, লন্ডনপ্রবাসী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের থিঙ্কট্যাঙ্কের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শ নেয়া হচ্ছে। সূত্র মতে, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরই বিএনপির একটি অংশ কঠোর আন্দোলন শুরুর পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু খালেদার মুক্তির দাবিতে কৌশলগত কারণে তিনি নিজেই কঠোর আন্দোলন চাননি। কারাবন্দী হওয়ার পর বিভিন্ন সময় তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া আত্মীয় স্বজন, দলের নেতা ও আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাতকালে তিনি এ বিষয়ে তার অবস্থান পরিষ্কার করেন। আর এ কারণেই খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে একটি পক্ষের কঠোর আন্দোলনের চাপ থাকলেও বিএনপি আইনী লড়াইয়ের পাশাপাশি দায়সারা আন্দোলন কর্মসূচী পালন করে। জানা যায়, খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর ৭ মাস পার হলেও তার মুক্তির জন্য দলের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কঠোর কোন কর্মসূচী পালন না করায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। দলের লন্ডনপ্রবাসী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও কঠোর আন্দোলনের পক্ষে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতকালে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তখন খালেদা জিয়া নির্বাচনের আগেই সমমনা দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলন চাঙ্গা করতে বলেছেন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম না করলে এমন আন্দোলন হবে যাতে সরকার তা করতে বাধ্য হয়। অপর এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ বলেছেন, আইনী প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। আর সংসদ নির্বাচনের আগে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে যাতে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এদিকে অক্টোবরে বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার পাশাপাশি খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কূটনীতিক তৎপরতাও জোরদার করছে বিএনপি। ক’দিন পর পর বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে ঢাকায় কর্মরত কূটনীতিকদের জড়ো করে তাদের সহযোগিতা চায় দলটি। শুধু তাই নয় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ দলের ক’জন সিনিয়র নেতা বিদেশী কূটনীতিকদের অফিস ও বাসায় গিয়েও লবিং করছেন। এ ছাড়া লন্ডন ও ওয়াশিংটনসহ বিভিন্ন দেশে বিএনপির যে ইউনিট রয়েছে সেসব ইউনিট কমিটির নেতারাও নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে।
×