ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শহরে বাড়ছে যানজট, যেখানে-সেখানে স্ট্যান্ড

যাত্রীবিমুখ টার্মিনাল এখন বাসের গ্যারেজ

প্রকাশিত: ০৪:২০, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

যাত্রীবিমুখ টার্মিনাল এখন  বাসের গ্যারেজ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী নগরীর যানজট নিরসনে ২০১১ সালে নওদাপাড়ায় নির্মাণ করা হয় রাজশাহী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালটি। সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই টার্মিনাল থেকে যাত্রী নিয়ে বাস ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা ব্যবহৃত হচ্ছে শুধু বাস রাখার গ্যারেজ হিসেবে। কারণ নগরীর অদূরে হওয়ায় এবং টার্মিনালের দুরবস্থার কারণে যাত্রীরা যান না সেখানে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই যাত্রীমুখী হয়নি বিশাল টার্মিনালটি। সব সুযোগ সুবিধা থাকলেও শুধু নগরীর অদূরে টার্মিনালটি হওয়ায় শুরু থেকেই বিমুখ যাত্রীরা। ফলে টার্মিনালটি এখন শুধু ব্যবহৃত হচ্ছে বাস রাখার গ্যারেজ হিসেবে। শহরে যানজট বৃদ্ধির এটিও একটি বড় কারণ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর না রাখার কারণে সেই বাস টার্মিনালটির এখন বেহাল দশা। সামান্য বৃষ্টিতে প্রবেশপথে জমে পানি। ভারি বর্ষণে এক হাঁটু। নগরীর নওদাপাড়ায় নির্মিত সাত কোটি টাকার এই টার্মিনালটির এমন অবস্থার কারণে অধিকাংশ বাস থাকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে। অনেক চালক বাস নিয়ে ওই মুখো হন না বৃষ্টি হলে। গত বুধবার নগরীর নওদাপাড়া বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশপথে বৃষ্টির পানি জমা হয়ে আছে। ভেতরে এলোমেলো বাসের অবস্থান। যাত্রীদের আনাগোনা নেই। এর মাঝে নতুন করে কিছু বাস প্রবেশ করছে, আবার কিছু বাইরে বের হচ্ছে। তবে কোন বাসেই যাত্রী নেই। সেখানে টিকেট কাউন্টারগুলোও ফাঁকা। ওই বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীহীন কয়েকটি বাসের চালকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এই টার্মিনালটি তারা ব্যবহার করেন গ্যারেজ হিসেবে। সময় হলে টার্মিনাল ছেড়ে মূল শহরের চিহ্নিত পয়েন্টগুলোতে গিয়ে যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন। এই বাস টার্মিনাল হওয়ার পরও এখানে কেন যাত্রী তোলা হয় না এমন প্রশ্নে তারা বলেন, যাত্রীরা এখানে আসতে চায় না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সহ-সভাপতি মুনজুর রহমান পিটার বলেন, ‘রাজশাহী থেকে জেলার পুঠিয়া উপজেলা যেতে বাস ভাড়া ২০ টাকা। আর রাজশাহী শহর থেকে নওদাপাড়া বাস টার্মিনালে যেতেই ভাড়া লাগে ২০ টাকা। আবার অটোরিক্সা, সিএনজি ও ইমা রাজশাহীর কোর্ট থেকে সরাসরি পুঠিয়া, গোদাগাড়ী, নওগাঁ চলে যাচ্ছে। সাধারণ যাত্রী কেন পকেটের টাকা খরচ করে ওই টার্মিনালে যাবে। তিনি বলেন, আমরা বারবার প্রশাসনকে অনুরোধ করে বলেছি প্রধান সড়কে তিন চাকার যান বন্ধ করতে। তাদের শহরে মধ্যে রাখতে। এ বিষয়গুলো সমাধান আগে হওয়া প্রয়োজন। আর তখনই যাত্রী ও বাস এমনিতেই টার্মিনালমুখী হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর যানজট নিরসনে ও যাত্রীদের উন্নত সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০১১ সালে নওদাপাড়ায় বিশাল জায়গা নিয়ে নির্মাণ করা হয় আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালটি। প্রায় সোয়া সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই টার্মিনাল শুরু থেকেই কোনই কাজে আসছে না। ফলে নগরের যত্রতত্র গড়ে উঠেছে বাস কাউন্টার। এতে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে যেমন যানজট বাড়ছে তেমনি বাড়ছে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। এদিকে নিয়মের তোয়াক্ক না করে টার্মিনালের যথাযথ ব্যবহার না করে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পয়েন্ট টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে ফুটপাথ ও সড়ক দখল করে এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে যাত্রী তোলার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাস দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। তৈরি করা হয়েছে টিকেট কাউন্টার। এ কারণে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সবসময় যানজট লেগেই থাকছে। নগরীতে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। নগরীর ভদ্রার মোড়, তালাইমারী মোড়, বিন্দুর মোড় ও গ্রেটাররোড রেল ভবনের মূল প্রবেশ পথে গড়ে তোলা হয়েছে অলিখিত বাস কাউন্টার। এছাড়া নগরীর বন্ধগেট বাইপাসের মোড় ও বিনোদপুর মোড়ের রয়েছে বাসের টিকেট কাউন্টার। নগরীর ভদ্রা এলাকার বাসিন্দা জিয়াউর রহমান বলেন, এলাকাটি আবাসিক। এর বাইরে রয়েছে স্কুল ও কলেজ। অথচ ভদ্রা মোড়েই বসান হয়েছে অলিখিত বাসস্ট্যান্ড। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এখানে যানজট লেগেই থাকে। ফলে সেখানে বাস টার্মিনালের কারণে প্রায় ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটতেই আছে। কয়েকজনের প্রাণহানিও ঘটেছে এখানে। বাস টার্মিনাল হওয়ার পরও এখানে কেন যাত্রী তোলা হয় না এমন প্রশ্নে বাসের চালকরা বলেন, টার্মিনালটি শহর থেকে দূরে হওয়ায় যাত্রীরা এখানে আসতে চায় না। তাই এই টার্মিনালটি এখন বাস-ট্রাকের গ্যারেজ ও বছরে বাস শ্রমিক ইউনিয়নের মেলা বসানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
×