ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তদন্ত কমিটি

রাজশাহীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রাজশাহীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়ম

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ পুঠিয়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর তৈরি করে দেয়ার নামে তালিকা তৈরির জন্য ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৩০০ পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা প্রথমে টাকা দেয়ার কথা বললেও এখন তাদের ঘর করে দিচ্ছে। এরই মধ্যে কারও কারও আঙ্গিনায় শুরু হয়েছে ঘর নির্মাণেরও কাজ। উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সরকারের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ‘যার জমি আছে ঘর নাই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ বাস্তবায়নে কোন ধরনের আর্থিক লেনদেনের সুযোগ নেই। আর ঘর পাওয়া পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারী তহবিল থেকে পাওয়া যাবে এক লাখ টাকা, এমনই প্রতিশ্রুতিতে স্থানীয় মেম্বারের হাতে দুই দফায় সাত হাজার ৬০০ টাকা তুলে দেন পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর ইউনিয়নের ক্ষুদ্র জামিরা গ্রামের মোসাজ্জেল হকের স্ত্রী চাঁনবানু। পরে তাকে জানানো হয় টাকা নয়, তার জমিতেই করে দেয়া হবে একটি ঘর। ইতোমধ্যেই তার ঘর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। চাঁনবানু জানান, স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার গিয়াস উদ্দিন ও ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মাহবুব হোসেন ঘর করার জন্য এক লাখ টাকা দেয়ার কথা বলে তার নাম লিখে নেন। এর পর তারা ১০ হাজার টাকা চান। এ সময় চার হাজার ৬০০ টাকা তার বাড়িতেই ছিল। আর তিন হাজার টাকা ধার করে নিয়ে এসে তাদের সাত হাজার ৬০০ টাকা দিয়েছি। বাকি দুই হাজার ৪০০ টাকা দিতে না পারায় তারা কয়েক বার অপমান করেছেন বলে জানান এই দুস্থ নারী। চাঁনবানুর মতো একই অবস্থা গ্রামের আরও অনেকের। উপজেলার ক্ষুদ্র জামিরা গ্রামের সানাউল্লাহর স্ত্রী লাইলী বেগম জানান, তার ঘর আছে। তবে সেটি অর্থের অভাবে সংস্কার করতে পারছি না। সরকার ঘর করার জন্য এক লাখ টাকা করে দেবে বলে তার কাছ থেকে ১০ হাজার ৬০০ টাকা নিয়েছেন স্থানীয় মেম্বার। মনে করেছিলাম সে টাকা দিয়ে বাড়ি সংস্কার করব। কিন্তু পরে জানতে পারলাম সরকার থেকে ঘর করে দেবে। তার বাড়ির আঙ্গিনায় একটি ঘর করে দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। একইভাবে ক্ষুদ্র জামিরা গ্রামের মৃত তসলেমের স্ত্রী সুকজানের কাছে ৯ হাজার ৬০০, তারিকুলের কাছে ১০ হাজার ৬০০, মৃত রঞ্জুর স্ত্রী জুথির কাছ থেকে পাঁচ হাজার, বাবর উদ্দিনের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের কাছ থেকে ১০ হাজার ৬০০, পশ্চিম জামিরার মৃত শাহীদুলের স্ত্রী রানীর কাছ থেকে ১১ হাজার, সাইফুল ইসলামের স্ত্রী হিরা বেগমের কাছ থেকে ১১ হাজার, আব্দুল কুদ্দুসের কাছ থেকে ১১ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। উপজেলার বেলপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান বদি বলেন, বেলপুকুর ইউনিয়নে বরাদ্দ এসেছে ১৮৮টি ঘর। এর তালিকা তৈরি করেছেন মেম্বার গিয়াস উদ্দিন ও মাহবুব হোসেন। তারাই তালিকা জমা দিয়েছেন। সে তালিকা আমাকে তারা দেখায়নি। আমিও শুনেছি প্রায় সবার কাছ থেকে গড়ে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নেয়া হয়েছে। তবে ঘর দিয়ে টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে মেম্বার মাহাবুল ইসলাম বলেন, আমরা শুধু তালিকা প্রস্তুত করে স্থানীয় এমপির কাছে দিয়েছি। এমপি ডিও লেটার দিয়ে বরাদ্দ নিয়ে এসেছেন। ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন বলেন, উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ সত্য নয়। বিরোধী পক্ষ তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কারও কাছ থেকে কোন টাকা নেয়া হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, সরকারের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ‘যার জমি আছে ঘর নাই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ ও যার কুড়ে ঘর আছে তার ঘর নির্মাণ’ এই দুই ক্যাটাগরিতে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ৩০৪টি ঘর নির্মাণের বরাদ্দ এসেছে। এর মধ্যে বেলপুকুর ইউনিয়নে ১৮৮টি, বানেশ^র ইউনিয়নে ৫৫টি ও জিউপাড়া ইউনিয়নে বরাদ্দ ৬১টি ঘর। প্রতিটি ঘর নির্মাণের জন্য এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ এসেছে। গত ১১ জুন প্রকল্প পরিচালক এ বরাদ্দ অনুমোদন করেন। ইতোমধ্যেই এসব ঘর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘উপকারভোগী দুস্থদের কাছ থেকে ঘর অথবা টাকা দেয়ার নাম করে অর্থ নেয়া হয়েছে এ ধরনের কয়েকটি অভিযোগ তার কাছে এসেছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করে দেয়া হয়েছে।
×