ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ থেকে ঘাঁটি উদ্ধার চায় বিএনপি, কৌশলী বিকল্প ধারা

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

   আওয়ামী লীগ থেকে ঘাঁটি উদ্ধার চায় বিএনপি, কৌশলী বিকল্প ধারা

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ থেকে ॥ সভ্যতার জনপদ মুন্সীগঞ্জের তিন আসনেই বইছে নির্বাচনের হাওয়া। উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের মাধ্যমেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তাদের দখলে থাকা জেলার তিন আসনেই বিজয় ধরে রাখতে চায়। বসে নেই বিএনপিও। সাংগঠনিকভাবে কিছুটা দুর্বল হলেও বিএনপি চাইছে তাদের হারানো আসনগুলো পুনরুদ্ধার করতে। বিকল্পধারাও কৌশলী চেষ্টা চালাবে বিজয়ী হতে। নানাভাবেই সম্ভাব্য সব দলের প্রার্থীই ভোটারদের মন জয় করতে প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পদ্মা, মেঘনা, ইছামতি, ধলেশ্বরী বিধৌত জ্ঞানীগুণীদের তীর্থভূমি মুন্সীগঞ্জে ২০০৮ সালে চার আসন ছিল। ১৯৭৯ সালের নির্বাচন পর থেকে দীর্ঘদিন এই জেলার সব আসনই হাতছাড়া ছিল আওয়ামী লীগের। শুধুমাত্র ১৯৮৬ সালে একটি আসন পায় আওয়ামী লীগ। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত একটানা চার আসনই ছিল বিএনপির দখলে। ২০০৮ সালে সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে তিন আসন করা হয়। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিন আসনেই আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে বিএনপির ঘাঁটিকে ম্লান করে দেয়। রূপান্তর হয় আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে। ১৯৯৬ সালে বেশি আসন পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও মুন্সীগঞ্জের চার আসনেই বিএনপি বিজয়ী হয়। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সুকুমার রঞ্জন ঘোষ প্রায় ৪০ হাজার ভোটে বিএনপির প্রার্থী জাতীয় পার্টির উপ-প্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে পরাজিত করে। মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি প্রায় ২০ হাজার ভোটে বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহাকে পরাজিত করেন। অপরদিকে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম ইদ্রিস আলী প্রায় ২২ হাজার ভোটের ব্যবধানে সাবেক তথ্যমন্ত্রী এম শামসুল ইসলামকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বিপুল ভোটে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রমকে পরাজিত করে তাক লাগিয়ে দেন। তবে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে সুকুমার রঞ্জন ঘোষ অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থীকে পরাজিত করেন। আওয়ামী লীগ ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড, বিদ্যুতায়ন, রাস্তাঘাট সংস্কার-মেরামতসহ উন্নয়ন কর্মকান্ডকে পুঁজি করে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তিন আসনেই ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সভা, সমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এবং এলাকায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরাও বসে নেই। বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে জেলা ও উপজেলা সদরে বিভিন্ন কর্মসূচীসহ নানাভাবে ভোটারদের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মুন্সীগঞ্জের কোন আসনই পুনঃবিন্যাস হয়নি। তাই এভাবেই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এ অঞ্চলে জামায়াতের অবস্থানই নেই। জেলায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কেন্দ্র করে জামায়াত অস্তিত্বহীন। এখানে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ছাড়াও জাতীয় পার্টির কিছু কার্যক্রম রয়েছে। তবে কার্যক্রম তেমন না থাকলেও বিকল্পধারা এখানে সক্রিয়। মুন্সীগঞ্জ-১ (শ্রীনগর-সিরাজদিখান) ॥ শ্রীনগর ও সিরাজদিখান উপজেলা নিয়ে গঠিত মুন্সীগঞ্জ-১ আসন। আসনটি বিএনপির দখলে থাকলেও ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনসংযোগের পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশার আশায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ও শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুকুমার রঞ্জন ঘোষ নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করেছেন। তিনি এই আসনে আবারও মনোনয়ন চাইবেন। তবে অসুস্থতার কারণে বছরের অনেকটা সময় তিনি এলাকায় অনুপস্থিত। সর্বশেষ তিনি গত ২৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় যোগ দেন এবং গত ২ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির পদ্মা সেতু পরিদর্শনকালে তিনি অংশ নেন। সিরাজদিখান আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দু’বারের উপজেলা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহম্মেদ তৃণমূলের নেতা হিসেবে নেতাকর্মীদের নিয়ে পুরো নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে সিরাজদিখান উপজেলায় প্রার্থী না থাকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরীও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এলাকায় বিভিন্ন কর্মকান্ড অংশ নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডাঃ বদিউজ্জামান ডাবলু নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপকভাবে কর্মকান্ডে যুক্ত হয়ে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম সারোয়ার কবির এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপক জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সরব উপস্থিতি ছাড়াও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকা ঘন ঘন জনসমাবেশ করছেন। সরকারের সাবেক সচিব শামসুল হক ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বন, পরিবেশ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মাকসুদ আলম ডাবলু সম্ভাব্য প্রার্থী জানান দিয়ে নানা কর্মকান্ডে অংশ নিয়ে চলেছেন। এদিকে বিএনপির অবস্থান নানা কারণে এখানে আলোচিত। সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বিএনপির এক সময়ের কান্ডারি অধ্যাপক ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তার পুত্র সাবেক সাংসদ মাহী বি চৌধুরী বিএনপি ছাড়ার পরে এখানে দলটি দুর্বল হয়ে পড়ে। বিএনপির গত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই শাহ মোয়াজ্জেমকে এলাকায় তেমন একটা দেখা যায়নি। তবে মমিন আলীর এলাকার নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচীসহ নানা অনুষ্ঠানে সরব উপস্থিতি রয়েছে। তিনি গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন। এর আগে বিএনপির আমলে উপ-নির্বাচনে মাহী বি চৌধুরীর সঙ্গে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তাই নানা কারণেই দীর্ঘদিন মাঠে থাকা মমিন আলী অগ্রগামী। মুন্সীগঞ্জের ছয় উপজেলার মধ্যে তিনিই একমাত্র বিএনপির উপজেলার চেয়ারম্যান, দাপটে দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপির আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ ঘন ঘন নানা কর্মকান্ডে অংশ নিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাপকভাবে জানান দিচ্ছেন। এছাড়াও বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরাফত আলী সপু। এছাড়া নিজের বাড়ি হওয়ায় এই আসনে সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বিকল্পধারা প্রধান অধ্যাপক ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তার পুত্র সাবেক সাংসদ মাহী বি চৌধুরী নানা কারণেই এবারও অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছেন। এই আসনে মাহী বি চৌধুরী আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা জানিয়েছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। মাহী বি চৌধুরী বলেছেন, জনগণ চাইলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে প্রার্থী হবেন তিনি। মাহী বি চৌধুরী কোন জোটের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলার কৌশল খুঁজছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। এই আসনে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ব্যক্তিগত আইনজীবী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ সিরাজুল ইসলাম। এই আসনের শ্রীনগর উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য কোন্দল রয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে। আর শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির দুই কমিটি। এক গ্রুপ অপর গ্রুপের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত করছে। তবে এই আসনের সিরাজদিখান উপজেলায় উভয় দলেই অপেক্ষাকৃত কোন্দল কম। মুন্সীগঞ্জ-২ (টঙ্গীবাড়ি-লৌহজং) ॥ পদ্মা তীরের দুই উপজেলা লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি নিয়ে মুন্সীগঞ্জ-২ আসন গঠিত। পরপর দুই বার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। তিনি ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য ছিলেন। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চলকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে পরিণত করতে কান্ডারির ভূমিকা পালন করেন। সংসদ সদস্য এমিলি মানুষের সঙ্গে ব্যাপক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। বিভিন্ন সামাজিক ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছাড়াও পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া এবং মানুষের খুব কাছাকাছি দীর্ঘদিন ধরে থাকায় তার বিশেষ ইমেজ তৈরি হয়েছে এখানে। দলমত নির্বিশেষে এখানে তার জনপ্রিয়তা ব্যাপক। পদ্মা সেতু বাস্তবায়নেও তার ভূমিকা অনেক। মাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিপুল পরিমাণ জমি অধিগ্রহণেও সাধারণের কোন রকম ক্ষোভ প্রকাশ হয়নি। তিনি প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে জমি মালিকদের ঘরে ঘরে গিয়েছেন। দলকে গুছিয়ে রাখার পাশাপাশি এলাকার জনগণের সুখ শান্তির জন্য ব্যাপক টেকসই উন্নয়নসহ সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন। তবে এবার আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন এ্যাটর্নি জেনারেল এ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম। তিনি এই আসনের বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন দলীয় মনোনয়নের আশায়। প্রায়ই তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ভোটারদের কাছে দোয়া চাইছেন। সরকারের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা এলাকায় ঘন ঘন এসে জনগণের কাছে নৌকায় ভোট চাইছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আরও রয়েছেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ঢালী মোয়াজ্জেম হোসেন, টঙ্গীবাড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার কাজী ওয়াহিদ এবং স্বাচিপের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ আবু ইউসুফ ফকির। এছাড়া দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ এই আসনে লৌহজং উপজেলার ঐতিহ্যবাহী খান বাড়ির সন্তান। দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও তিনি নির্বাচন করতে রাজি না হওয়ায় এই আসনে অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহা, সাবেক তথ্যমন্ত্রী এম শামসুল ইসলামের ছেলে ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম বাবু, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট মহসিন মিয়া, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আলী আজগর মল্লিক রিপন ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ। তারা প্রত্যেকেই সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে দলীয় ও সামজিক নানা কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন। এখানে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি কুতুবউদ্দিন আহম্মেদ ও সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ জামাল হোসেন। এই আসনেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে প্রকাশ্য কোন্দল লক্ষ্য করা গেছে। উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির কোন্দল চরমের পৌঁছেছে। মুন্সীগঞ্জ-৩ (মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া) ॥ ধলেশ্বরী ও পদ্মা তীরের মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা ও মেঘনা তীরের গজারিয়া উপজেলা নিয়ে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসন গঠিত। এই আসনে বিগত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস। সরকারী বেসরকারী কর্মসূচী ও কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ ছাড়াও তিনি এলাকায় ব্যাপক জনসংযোগ করে চলেছেন, অংশ নিচ্ছেন উন্নয়ন কর্মকান্ডে। নির্বাচনী এলাকায় তিনি এখনও শক্ত অবস্থানে। এই আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন- কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা এবং নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সভাপতি ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি। দ্বিতীয় দফায় সংরক্ষিত মহিলা সাংসদ হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তিনিও উন্নয়ন এবং সরকারী-বেসরকারী কর্মযজ্ঞে অংশ নিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। এছাড়া ২০০৮ সালে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সভাপতি ও সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব এম ইদ্রিস আলী জনসংযোগসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন। ২০০৮ সালে বিএনপির তথ্যমন্ত্রী এম শামসুল ইসলামকে পরাজিত করে আসনটি দীর্ঘদিন পর পুনরুদ্ধার করেছিলেন তিনি। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কয়েকটি বিষয় উত্থাপন করে তিনি নির্বাচন না করার ইচ্ছা প্রকাশ করে দলীয় সভানেত্রীকে পত্র দেন। তবে এবার তিনি আবার নির্বাচনের ইচ্ছা প্রকাশ করে কাজ করে যাচ্ছেন। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার দু’বারের চেয়ারম্যান ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আনিস-উজ-জামান এবারও সম্ভাব্য প্রার্থী। তিনি ২০০৮ সালের ৯ম সংসদ নির্বাচনে তৃণমূলের ভোটে প্রথম হয়েছিলেন। সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় আরও রয়েছেন তরুণ রাজনীতিক ও মুন্সীগঞ্জ পৌর মেয়র হাজী ফয়সাল বিপ্লব, গজারিয়া উপজেলার দু’বারের চেয়ারম্যান রেফায়েত উল্লাহ খান তোতা, গজারিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম ও মিরকাদিমের দু’বারের পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম শাহীন। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তারা নানা কর্মকা-ে অংশ নিয়ে চলেছেন। তবে এই আসনে আওয়ামী লীগের কোন্দল বেশি। অপরদিকে বিএনপির শক্ত প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এলজিইডি উপমন্ত্রী আলহাজ আব্দুল হাই। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি এই আসনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করে আসছিলেন। তবে ২০০৮ সালে মুন্সীগঞ্জের একটি আসন কমে যাওয়ায় তাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল ঢাকা-৪ শ্যামপুর আসনে। তবে তিনি আওয়ামী লীগের এ্যাডভোকেট সানজিদা খানমের সঙ্গে নির্বাচন করে পরাজিত হন। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের শক্ত প্রার্থী তিনি। তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতনও মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তিনি নানাভাবে অবস্থান জানান দিতে শুরু করেছেন। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাতেন ও জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক এএফএম আরিফউজ্জামান দিদার। এই দু’জনই নিজের অবস্থান তুলে ধরে প্রচার চালাচ্ছেন।
×