ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর দু’প্রান্তে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 পদ্মা সেতুর  দু’প্রান্তে  বঙ্গবন্ধুর  ম্যুরাল  হচ্ছে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর দু’প্রান্তে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল হচ্ছে। তাই ম্যুরাল তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বুধবার শিল্পী আবুল হাসিমের নেতৃত্বে একটি টিম ম্যুরাল সেতু প্রকল্প ঘুরে গেছেন। দায়িত্বশীলরা জানিয়েছে, শীঘ্রই এই ম্যুরাল তৈরির কাজ শুরু হবে। সেতু চালুর আগেই এই কাজ সম্পন্ন করার টার্গেট নিয়ে কাজ শুরু হচ্ছে। এদিকে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে পুরোদমে। ঈদের ছুটিতে যাওয়া কর্মীরা এসে যোগদানের পর কাজের গতি আরও বেড়েছে। নদীতে এ পর্যন্ত ১৬৯টি পাইল বসেছে। আরও ১১টি পাইলের বটম সেকশন হয়েছে। এদিকে স্প্যান বসানোর জন্য খুঁটিও তৈরি হতে চলেছে। ৭ সেপ্টেম্বর আরও একটি স্প্যান নদীপথে এসে পৌঁছার কথা রয়েছে। দু’পারে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সেতুর (ভায়াডাক্ট) কাজেও এখন বিশেষ গতি। এই সংযোগ সেতুর ৩৬৫টি পাইলই বসে গেছে। এই পাইলের ওপর হচ্ছে ক্যাপ। ক্যাপের উপরে বসছে খুঁটি। দিনরাত এই কাজ চলছে এখন। খুব সহজেই সেতুর অবয়ব প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। সেখানে হ্যামার ছাড়াও ভারি ভারি নানা রকমের যন্ত্রপাতির ব্যবহারে ছন্দে ছন্দে শব্দ ভেসে আসছে। এদিকে মূল সেতু ছাড়াও নদী শাসনসহ অন্যান্য কাজও এগিয়ে চলেছে। পদ্মার মূল চ্যানেল জাজিরার দিকে ধাবিত হচ্ছে ॥ পদ্মার মূল চ্যানেল ভেঙ্গে জাজিরার দিকে ধাবিত হচ্ছে। আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে এই ভাঙ্গন আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই এখানে নদী শাসনের কজে বেশি অগ্রসর হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়াও জাজিরা প্রান্তে ব্লক তৈরি হচ্ছে। এবং ব্লক কিছু স্লোপে ফেলা হচ্ছে। কাঁঠাবাড়ির উজানের স্লোপে এই সিসি ব্লক ডাম্পিং হচ্ছে। আগামী শুষ্ক মৌসুমেও জাজিরা প্রান্তে নদী শাসনের কাজ চলবে। তবে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর/ অক্টোবরে মাওয়ায় নদী শাসনের কাজ ব্যাপকভাবে চালু হবে। উচ্চ ক্ষমতার আরও ড্রেজার দিয়ে এই প্রান্তে কাজ শুরু করা হবে। এদিকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ লাখ ব্লক তৈরি করা হয়েছে বলে সূত্রটি জানায়। পদ্মা সেতুর নদী শাসনের অগ্রগতি এখন ৪৩ শতাংশ। তবে এই সময়ে এর অগ্রগতি থাকার কথা ছিল ৮৮ শতাংশ। পদ্মার বৈচিত্র্যতাসহ নানা কারণে এটি পিছিয়ে আছে। কিন্তু দায়িত্বশীলরা জানিয়েছে, নদী শাসন পিছিয়ে থাকলেও এটি যথাযথভাবে নদী শাসনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী শরফুল ইসলাম বলেন, বর্ষা মৌসুমে ৩টি উচ্চ ক্ষমতার ড্রেজার জাজিরা প্রান্তে এখন কাজ করছে। পদ্মা সেতুর দু’থানা হস্তান্তর হয়নি ॥ পদ্মা সেতুর দু’থানা ভবন হস্তান্তর হয়নি। প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু কর্তৃপক্ষ ভবন দুটি নির্মাণ করেছে। গত এপ্রিল মাসে এই দুই ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী রজব আলী। তিনি জানান, ছয় তলা ফাউন্ডেশনের ওপর চার তলা করে নান্দনিক ডিজাইনে পদ্মার দু’প্রান্তে অর্থাৎ মাওয়া ও জাজিরায় থানা ভবন দুটি নির্মাণ হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ভবনের সব কাজ একেবারেই সম্পন্ন। শুধু হস্তান্তরের অপেক্ষায়। এই ভবন দুটি সংশ্লিষ্ট পুলিশের কাছে হস্তান্তর হবে। পুলিশের নামেই বিদ্যুত সংযোগ প্রদান করা হবে। তাই কর্তৃপক্ষই বিদ্যুত সংযোগের আবেদন করে পল্লী বিদ্যুত সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। এদিকে মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুত সমিতির জিএম মোঃ মোবারকউল্লাহ জানান, বিদ্যুত সংযোগ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে ভবনের ভেতরের ওয়ারিংসহ কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এগুলো সম্পন্ন হলেও সংযোগ দেয়া যাবে। তিনি বলেন, এই বিষয়ে থানা কর্তৃপক্ষের বরাবর অর্থ বরাদ্দসহ অফিসিয়ালি কিছু সমস্যা আছে বলে মনে হচ্ছে। তাই বিলম্ব হচ্ছে। পদ্মা সেতুর দু’পারের দুই থানা চালু করা যাচ্ছে না জনবলের অভাবে। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, জনবলের পদ সৃষ্টির জন্য পুলিশের সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে যাবতীয় তথ্যাদি তুলে পত্র প্রেরণ করা হয়। সূত্রটি জানিয়েছে- মন্ত্রণালয় থেকে তা নাকচ করা হয়। তাই আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় থানা দুটি চালু করতে বিলম্ব হচ্ছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সহযোগিতা নিয়ে আবার ফাইল প্রেরণ করা হয়েছে। একজন এএসপিসহ দুই থানার জন্য ৮০ জনবলের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম জানান, দ্রুত এই থানা দুটি চালু করা না হলে দু’পারের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণও কঠিন হবে। কারণ পদ্মা সেতুকে ঘিরে দু’পারের চিত্র পাল্টে গেছে। নতুন নগরী হতে যাচ্ছে। দেশী-বিদেশী বহু লোকের এখন বসবাস এখানে। নতুন নতুন স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। নতুন বাজার বসেছে। জীবনযাত্রা পাল্টে যাচ্ছে। এছাড়া ব্যবহার করা না হলে সুন্দর এই ভবন দুটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পদ্মা সেতুর এ্যাপ্রোচ সংরক্ষণে ঠিকাদার ॥ পদ্মা সেতুর দু’পারের এ্যাপ্রোচ সড়ক সম্পন্ন হয়ে গেছে। মাওয়া প্রান্তে মূল এ্যাপ্রোচ সড়ক রয়েছে ১.৬৭ কিলোমিটার এবং জাজিরা প্রান্তে রয়েছে ১০.৫৭। সড়ক এখন হস্তান্তরের অপেক্ষায়। এছাড়া সেতুর দু’প্রান্তে দুটি টোল প্লাজার কাজও সম্পন্ন হয়ে গেছে। পদ্মা সেতুর এ্যাপ্রোচ সংরক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হচ্ছে এখন। পদ্মা সেতুর সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী রজব আলী জানান, এই এ্যাপ্রোচ সড়ক আগামী দুই বছর অপারেশন এ্যান্ড ম্যান্টেন্যান্স করবে একটি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে এখন। এই অপারেটর নিয়োগ সম্পন্ন হলেই প্রায় ১২ কিলোমিটার মূল এ্যাপ্রোচ হস্তান্তর সম্পন্ন হবে। তিনি জানান, এই মূল এ্যাপ্রোচ ছাড়াও দু’পারে রয়েছে প্রায় ১২ কিলোমিটার সার্ভিস রোড এবং কানেকটিং রোড রয়েছে। এগুলো সবই সম্পন্ন এখন। এছাড়া দু’পারে ৩টি সার্ভিস এরিয়ার কাজও সম্পন্ন হয়েছে আরও আগে। যার একটি মাওয়া প্রান্তের জসলদিয়ায়। অপর দুটি জাজিরা প্রান্তে। সেখানে এখন লোকজন বসবাস করছে।
×