ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

মানব পাচারের গডফাদার কলেজ শিক্ষক আছেম গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ২১ আগস্ট ২০১৮

 মানব পাচারের গডফাদার কলেজ শিক্ষক আছেম গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানবপাচারের মামলায় অবশেষে গ্রেফতার হলেন সেই গডফাদার তেজগাঁও কলেজের শিক্ষক মোহাম্মদ আছেম। এই শিক্ষক তার পিতা, মাতা ও ভাই এবং তার অফিসের কর্মচারীকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন মানবপাচারের বিশাল সিন্ডিকেট। পুরো পরিবারকে নিয়ে গড়ে তোলা সিন্ডিকেটটি হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। চক্রটির অন্তত ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার দালিলিক প্রমাণ মিলেছে। সোমবার সকালে রাজধানীর মালিবাগ সিআইডি সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন চাঞ্চল্যকর কাহিনীর জানালেন সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, ২০১৪ সালে চক্রটি সিরাজগঞ্জের মাসুদ নামের একজনকে মালয়েশিয়ায় পাচার করে। পাচারের পর ফোনে মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করা টাকার মধ্যে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা ইসলামী ব্যাংক মহাখালী শাখার মাধ্যমে দেয় মাসুদের পিতা। তারপরেও মাসুদকে মুক্তি দেয়নি চক্রটি। পরে মাসুদের পিতা এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত পায় সিআইডি। সেই মামলায় গত ১৯ আগস্ট কাওরান বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আছেমের পিতা আনোয়ার হোসেন ও বড় ভাই খোবায়েদ মালয়েশিয়া প্রবাসী। মা খাদিজা বেগম, আছেমের সহযোগী আরিফ, একরাম, ওসমান সারোয়ারের নামে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খুলে তাদের নামে মুক্তিপণের টাকা নিত। তারাও মানবপাচারে জড়িত। চক্রটি কক্সবাজার ও টেকনাফ দিয়ে সাগর পথে অবৈধভাবে শত শত মানুষকে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছে। মালয়েশিয়া পাঠানোর পর বিভিন্ন ব্যক্তিকে তারা আটকে রেখে নির্যাতন করে। নির্যাতনকালে চক্রটি নির্যাতিতদের বাংলাদেশে থাকা পরিবার ও আত্মীয়দের কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে টাকা দাবি করে। যাদের পরিবার মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হয় তাদের থাইল্যান্ডের জঙ্গলে মেরে ফেলা হতো। গ্রেফতারকৃত আছেম মুক্তিপণের টাকা তার আত্মীয়-স্বজন, মা ও নিজের এ্যাকাউন্টে জমা রাখে। সাগর পথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের গডফাদার আছেম। আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী কক্সবাজার সাগর চ্যানেল দিয়ে গত কয়েক বছরে হাজার হাজার মানুষকে মালয়েশিয়া পাচার করেছে। সাগর পথে মালয়েশিয়ার যাওয়ার সময় অনেক বাংলাদেশী মারাও গেছেন। এখনও অনেক মানুষ নিখোঁজ। তারা দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার-থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ায় সাগর পথে মানবপাচার করে মুক্তিপণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছে। চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে। আছেম ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সঙ্গে কাজ করছে। তার ছোট ভাই জাভেদ মোস্তফা মানবপাচারের জন্য দেশের গ্রাম পর্যায়ে দালাল নিয়োগ করে। গ্রাম থেকে আনা লোকজনকে তারা ট্রলারযোগে মালয়েশিয়ায় পাঠাত। আছেম মানবপাচারের টাকায় রাজধানীতে এসিএম কর্পোরেশন নামে একটি রিক্রটিং এজেন্সি খুলে। ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আরিফুজ্জামান আকন্দ ওরফে আরিফের নামে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট করে টাকা লেনদেন করত আছেম। মোল্যা নজরুল জানান, আছেম পাচারের টাকা দিয়ে টেকনাফে বাড়ি ও জমি কিনেছে। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লাতে একটি ছয়তলা বাড়ি বানিয়েছে। আছেম তেজগাঁও কলেজের বিবিএ বিভাগের প্রভাষক। গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার মৌলভীপাড়ায়। গত ৫ দিন আগে সিআইডি তাকে গ্রেফতার করেছিল। তিন দিনের মাথায় সে জামিনে বের হয়ে যায় বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
×