ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

আগামীকাল বরিশাল;###;সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবি ৩-এর পাতায়

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি চায় আসন পুনরুদ্ধার ॥ রাঙ্গামাটি

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৬ আগস্ট ২০১৮

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি চায় আসন পুনরুদ্ধার ॥ রাঙ্গামাটি

মোহাম্মদ আলী, রাঙ্গামাটি থেকে ॥ দেশের প্রাকৃতিক নৈসর্গিক জেলা হিসেবে পরিচিত পার্র্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলা। দেশের পূর্ব দক্ষিণ কোণে ভারতের মিজোরাম রাজ্য ও মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা অবস্থিত। কাপ্তাই হ্রদের ফটিক জল ও শ্যামল পাহাড়ের বনরাজি পরিবেষ্টিত এই জেলায় জাতীয় সংসদের একটি মাত্র আসন রয়েছে। সংসদের ২৯৯ এই আসনটি বরাবরই নৌকার ঘাঁটি হিসাবে খ্যাত। একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সারাদেশের মতো পাহাড়বেষ্টিত রাঙ্গামাটিতেও বইছে নির্বাচনী হাওয়া। ৬ হাজার ১১৬ দশমিক ১৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই জেলায় ভোটার সংখ্যা হলো ৪ লাখ ১৫ হাজার ৮৫০ জন। ১৯৯০, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দীপংকর তালুকদার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জেএসএস বিএনপিকে সর্মথন দেয়ায় সেইবার বিএনপি প্রার্থী মনি স্বপন দেওয়ান একবার নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের বিএনপিবিহীন নির্বাচনে জেএসএস প্রার্থী উষাতন তালুকদার ৯১ হাজার ৪৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম নৌকার প্রার্থী দীপংকর তালুকদার পান ৭৭ হাজার ৩৬০ ভোট। ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির আগে থেকেই পার্বত্য জনপদের এই মানুষগুলো নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা বরাবরই অবহেলিত পাহাড়ের শান্তি ও উন্নয়ন কামনা করেছেন। তিনি ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে পাহাড়ের দুই দশকের হানাহানি বন্ধ করে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেছেন। যা দেশবাসীসহ বিশ্ববাসীর কাছে নন্দিত হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে পার্বত্য অঞ্চলে ফিরে আসে শান্তির সুবাতাস। শান্তি চুক্তির পর থেকেই পাহাড়ে বিএনপির ঘাঁটি ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়। পার্বত্য তিন জেলাতেই নৌকার পালে হাওয়া লাগে এবং প্রতিটি নির্বাচনেই এলাকার মানুষ নৌকাকে বিজয়ী করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে কার্পণ্য করেননি। পার্বত্যবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী রাঙ্গামাটি সফরে এসে রাঙ্গামাটি মেডিক্যাল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ফলক উন্মোচন করেছেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠান দুটোর নির্মাণ কাজ পুরোদমে চলছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য দীপংকর তালুকদারের প্রচেষ্টায় বর্তমান সরকার রাঙ্গামাটি জেলায় ১০টি মেঘা প্রকল্প চালু করে এই জেলাকে উন্নয়নের স্রোতধারায় তুলে দিয়েছেন। এগুলো হলো ননিয়াচর ব্রিজ, সন্ত্রাস দমনের জন্য সীমান্ত সড়ক নির্মাণ, কাপ্তাই লেক ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ, ঠেগামুখ স্থলবন্দর নির্মাণ, দেশের একমাত্র উপত্যাকা সাজেক ভ্যালিতে নতুন থানা করে সড়কের কাজ সমাপ্ত করা, রাঙ্গামাটি বাঘাইছড়ি সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করা, বিদ্যুতের সাবস্টেশন করে জুরাইছড়ি ও বরকল উপজেলকে বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসা। এছাড়া রাঙ্গামাটি শহরে বড় দুটি ব্রিজ নির্মাণ করা। এসব বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করায় এবার জেলার ভোটাররা নৌকার দিকেই ঝুঁকে পড়েছে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আসনটি পুনরুদ্ধারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তথা পার্বত্য বিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দিনরাত জেলার ১০টি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। আপাতত একক প্রার্থী হিসেবে তাঁর নামই সর্বাগ্রে রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি অনেকটা নীরবে প্রচার চালালেও এই আসনের অপর শক্তিশালী দল জেএসএসও বসে নেই। বর্তমান সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদারও মাঠ দখল রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং তিন তিনবার এই আসন থেকে নির্বাচিত সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, বিএনপির এ্যাডভোকেট দিপেন দেওয়ান, লে. কর্নেল (অব.) মনিষ দেওয়ান ও জেএসএসের বর্তমান সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার । আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী দীপংকর তালুকদার হলেও কোন কারণে ব্যতিক্রম হলে সেক্ষেত্রে দলের সিনিয়র নেতা চিংকিউ রোজা অথবা নিখিল কুমার চাকমাও আসতে পারে বলে দলের ভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া বিএনপি সভাপতি শাহ আলম ও নাগরিক কমিটির সভাপতি তথা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গৌতম দেওয়ানের নামও বেশ শুনা যাচ্ছে। বিএনপি নির্বাচনে আসলে এই আসনটিতে ত্রিমুখী লড়াই হবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর আঞ্চলিক দল জেএসএস এই আসনটি ধরে রাখতে সব সময় মাঠে রয়েছে। সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার বেশিরভাগ সময়ই রাঙ্গামাটিতে থাকেন। তিনি ইতোমধ্যে কর্ণফুলী কাগজ কলটি চালু রাখার জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। রাঙ্গামাটির বিএনপি দ্বিধাবিভক্ত অবস্থায় রয়েছে। যার কারণে নির্বাচনী দৌড়ে বিএনপি একটু পিছিয়ে পড়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, রাঙ্গামাটিতে বর্তমান সরকার দেখার মতো প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ করেছে। আশা করি ভোটাররা এর মূল্যায়ন করবেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ মুছা মাতাব্বর বলেন, জেলায় আওয়ামী লীগ আগের চেয়ে অনেক সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী। তাই আশাকরি আগামী নির্বাচনে আমরা এই আসনটি আবারও প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে পারব। এদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী এ্যাডভোকেট দিপেন দেওয়ানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি জানান, দলের প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া তারা নির্বাচন বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাঁরা এই আসনে বিজয়ী হবেন বলে জানান। এই আসনটি পুনরুদ্ধার করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যকলাপে দলের কিছু নেতাকর্মী বিরাগভাজন হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের কিছু সুবিধাভোগী নেতাকর্মীর কারণে অনেক ত্যাগী নেতা নিক্রিয় হয়ে পড়েছেন। এরপরও আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার পাল্লাটা অনেক ভারী। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, পেশি শক্তির দাপট না হলে এবার তারা অবশ্যই জয় ছিনিয়ে আনতে পাড়বে। এবারের নির্বাচনে বিএনপি শক্ত প্রার্থী দিলে রাঙ্গামাটি আসনে ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে জেলার সচেতন মনে করেন। জেএসএস এই বিষয়ে তেমন কোন মতামত দিচ্ছে না। তারা সরকারের সঙ্গে লিয়াজো করে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।
×