ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গ্রন্থ প্রদর্শনী ও একক বক্তৃতা

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১৩ আগস্ট ২০১৮

বাংলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গ্রন্থ প্রদর্শনী ও একক বক্তৃতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলছে জাতির জনককে হারানোর মাস আগস্ট। বারবার সামনে আসছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে স্বাধীনতার মহান স্থপতিকে জানানো হচ্ছে শ্রদ্ধাঞ্জলি। সেই ধারাবাহিকতায় জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত চারদিনের কর্মসূচীর সূচনা হলো রবিবার। এদিন বিকেলে একাডেমি প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গ্রন্থ প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মবিষয়ক দেশ-বিদেশের লেখকদের চার শতাধিক বই ও সংকলন। প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। এছাড়া বিকেলে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় বাঙালীর বঙ্গবন্ধু শীর্ষক একক বক্তৃতানুষ্ঠান। একক বক্তৃতা করেন কবি কামাল চৌধুরী। বঙ্গবন্ধু রচিত কারাগারের রোজনামচা গ্রন্থ থেকে পাঠ করেন এস এম মহসীন। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। বাঙালির বঙ্গবন্ধু শীর্ষক বক্তৃতায় কবি কামাল চৌধুরী বলেন, ভাষা আন্দোলনের কূলপল্লী স্রোত বাঙালীর স্বাধিকার আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। আর এই পর্বে মূল নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ একত্র হয়ে এক অখ- বাঙালী জাতিতে পরিণত হয়েছিল। এভাবেই সংগ্রাম ও আন্দোলনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পাকিস্তানিদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু জাতিকে স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত করে একটি সংগ্রামমুখী সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের ইতিহাসের প্রথম বাঙালী যার অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় ঐক্য, বাঙালী জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাষ্ট্রীয় অবয়বে। তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন আগে অনেকেই দেখেছেন কিন্তু বাস্তবায়ন ঘটেছে বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী নেতৃত্বে। বিশ্বব্যবস্থার বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের অভিবাসনের ইতিহাস আমরা জানি। একই ভাষাভাষীর মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাস করে। বাঙালীরও একটি বৃহৎ অংশ এখন ভারত রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও অনেক বাঙালীর বসবাস। বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে। বঙ্গবন্ধু এ কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছেন বলেই তিনি বাঙালী জাতিরাষ্ট্রের জনক। একক বক্তা বলেন, সংগ্রাম ও আন্দোলনের সুদীর্ঘ যাত্রায় বাঙালী বঙ্গবন্ধুকে আপন করে নিয়েছিল তাদের একজন হিসেবে, বাঙালীর ইতিহাসের প্রধান নায়ক হিসেবে। বাঙালীর জাগরণের চূড়ান্তপর্বে জাতি ও তাঁর নাম সমার্থক হয়ে উঠেছিল। আজও বাঙালী এবং তাঁর পরিচয় সমার্থক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ আমাদের প্রাত্যহিকতায় মিশে আছেনÑ মিশে থাকবেন জাতির অগ্রযাত্রার প্রতিটি অনুভবে- সাহস, শক্তি ও অনুপ্রেরণা হিসেবে। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি এবং জয়লাভ করেছি। যত চেষ্টাই হোক না কেন বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। বস্তুত বঙ্গবন্ধুর জীবন ও বাংলাদেশ একাকার হয়ে গেছে। জীবদ্দশায় তিনি যেমন আমাদের সংগ্রাম ও সংকল্পে প্রতীক ছিলেন, মৃত্যুর এত বছর পরও তিনি তাঁর সেই স্থানেই স্বমহিমায় বিরাজিত রয়েছেন। মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ অবিচ্ছেদ্য ও সমার্থক শব্দ-প্রায়। আজও তাঁরই প্রেরণায় আমরা এগিয়ে চলেছি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে। ‘বঙ্গবন্ধু এবং স্বপ্নের বাংলাদেশ’ প্রদর্শনীর উদ্বোধন ॥ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ উপলক্ষে গত মার্চে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করেছিল ‘৭ মার্চের ভাষণ : বাঙালির স্বাধীনতার মাইলফলক’। অন্যদিকে শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে গত ৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় ‘বঙ্গবন্ধু এবং স্বপ্নের বাংলাদেশ’ শীর্ষক আর্টিস্ট ক্যাম্প। এ দুই আর্ট ক্যাম্পে শিল্পীদের আঁকা শিল্পকর্ম নিয়ে রবিবার থেকে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় শুরু হলো সপ্তাহব্যাপী বিশেষ প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে শিল্পীদের আঁকা ছবিতে উঠে এসেছে নানা অভিব্যক্তিময় জাতির জনকের প্রতিকৃতি। বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক আশরাফুল আলম পপলু। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন পরিপূর্ণ মানুষ। কারণ তিনি শুধু রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন না। মানুষের প্রতি ভালবাসাকে তিনি ধারণ করেছেন। এ ভালবাসার টানে তিনি স্বাধীন বাংলার স্বপ্নকে ধারণ করেছিলেন। বাঙালীর মুখে হাসি ফোটানো ছিল জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ বেঁচে থাকলে দুটো জিনিস হতো না। বাহির থেকে পোকা ঢুকতে পারত না এবং বাংলাদেশকে সোনার বাংলা, সবুজ বাংলা গড়ে তুলতেন। তার কারণেই বেঁচে আছি, থাকব। তিনি থাকলে পৃথিবীটা অন্যরকম হতো। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন হাশেম খান, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন, মনিরুল ইসলাম, ফরিদা জামান, জামাল আহমেদ, আব্দুল মান্নান, রণজিৎ দাস, সিদ্ধার্থ তালুকদার, রোকেয়া সুলতানা, আফরোজা জামিল কঙ্কা, কনক চাঁপা চাকমা, কীরিটি রঞ্জন বিশ্বাস, রফি হক, দেওয়ান মিজান, আলপ্তগীন তুষার, আনিসুজ্জামান, দুলাল চন্দ্র গাইন, নাসিমা খানম কুইনি, আব্দুস সাত্তার তৌফিক, সুমন ওয়াহিদ, অনুকূল চন্দ্র মজুমদার, সর্ব্বরী রায় চৌধুরী, এম এম ময়েজউদ্দীন, সুশান্ত অধিকারী, মোঃ কামালুদ্দিন, বিশ্বজিৎ গোস্বামী, সুনীল কুমার পথিক, নাজির হোসেন খান, সোহাগ পারভেজ, সহিদ কাজী, আসমিতা আলম শাম্মী, গুপু ত্রিবেদী, সুমন কুমার বৈদ্য, হারুন অর রশীদ টুটুল, রাশেদ সুখন, মানিক বণিক, শাহানুর মামুন, শাহানুর মামুন, সঞ্জীব দাস অপু, মঞ্জুর রশিদ, সুরভী স্মৃতি, ফারজানা আহমেদ, শহিদুজ্জামান শিল্পী, প্রদীপ সাহা, আতিয়া ইসলাম এ্যানি, সিদ্ধার্থ দে, আল মঞ্জুর এলাহী, ফারহানা ইয়াসমিন যুথি, দিদারুল হোসাইন লিমন, আশরাফুল আলম পপলু প্রমুখ। আগামী ১৮ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থদের উন্মুক্ত থাকবে। বঙ্গবন্ধুর ৪৩ ফুট উচ্চতার প্রতিকৃতি অঙ্কন করবে চারুশিল্পী সংসদ ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ বঙ্গবন্ধুর ৪৩ ফুট উচ্চতার প্রতিকৃতি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। চারতলা বাড়ির উচ্চতার এ প্রতিকৃতিটি স্থাপন করা হবে টিএসসির মিলন চত্বরের পাশে। চারুকলা সংসদের দাবি, এটি বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় প্রতিকৃতি হতে যাচ্ছে। ১৪ আগস্ট সন্ধ্যার মধ্যে স্থাপন করা হবে প্রতিকৃতিটি। এরপর ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রদর্শিত হবে চিত্রকর্মটি। রবিবার শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা প্লাজার সেমিনার কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান চারুশিল্পী সংসদের সভাপতি অধ্যাপক জামাল আহমেদ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদের সহ-সভাপতি নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী প্রমুখ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সদস্য তৈমুর হাসান। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রতিকৃতি অঙ্কনে অংশ নিচ্ছেন প্রায় দেড় শতাধিক চিত্রশিল্পী। প্রতিকৃতির ছবি নির্বাচন, লে আউট তৈরি, ক্যানভাস প্রস্তুতসহ কারিগরি কাজ শুরু হয়েছে পহেলা আগস্ট। বর্তমানে টিএসসির মিলনায়তন ও সুইমিংপুল চত্বরে চলছে ক্যানভাসে লাইন ড্রয়িংয়ের কাজ। ক্যানভাসের ওপর এ্যাক্রেলিক কালারে আঁকা হবে মূল ছবি। কোন তুলি বা অন্য কোন মাধ্যম নয়, ফ্রেমের শরীরে রং লাগবে হাতের আঁচড়ে। এরপর অনেক টুকরো ফ্রেমের ক্যানভাসে স্বতন্ত্র ভাবে একেকটি অংশ আঁকবেন ভিন্ন ভিন্ন শিল্পীরা। পরে টুকরোগুলোকে একত্রে জুড়ে দিয়ে তৈরি হবে মূল পূর্ণাঙ্গ প্রতিকৃতি।
×