ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সোনা চোরাচালানের নিরাপদ রুট বেনাপোল সীমান্ত

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১১ আগস্ট ২০১৮

   সোনা চোরাচালানের নিরাপদ রুট বেনাপোল সীমান্ত

স্টাফ রিপোর্টার, বেনাপোল ॥ দিন দিন স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুট হয়ে উঠছে বেনাপোল সীমান্ত। ২৪ ঘণ্টায় এ সীমান্ত থেকে ৭৫ কেজি স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মহিলাসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এসব স্বর্ণের আনুমানিক মূল্য ৩৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণেই এ রুটে স্বর্ণ চোরাচালান বেড়েছে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা। আর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলেন, সুষ্ঠু অভিযান পরিচালনায় জনবল বৃদ্ধি ও স্থানীয়ভাবে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ থাকলে পাচার রোধ সফলতা মিলবে। বেনাপোল সীমান্ত থেকে কলকাতার দূরত্ব প্রায় ৮৪ কিলোমিটার। সেখানে সোনার দাম বেশি। অন্যদিকে যাতায়াত ব্যবস্তা ভাল। এ সুযোগে চোরাচালানীরা প্রতিদিন সোনাপাচার অব্যাহত রেখেছে। মাঝে মধ্যে দু’একটি চালান আটক হলেও রাঘব-বোয়ালেরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এ পর্যন্ত শত শত মামলা হলেও একটি মামলায়ও ওই রাঘব-বোয়ালদের সাজা হয়নি। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনা। বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালে বিশেষ অভিযানে ৭৫ কেজি স্বর্ণ জব্দ ও ৩ চোরাচালানীকে আটক করে বিজিবি’র সদস্যরা। ৪৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আরিফুল হক জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাত সাড়ে নয়টার দিকে শিকারপুর বিওপিতে কর্মরত হাবিলদার মোঃ মুকুল হোসেন প্রামাণিকের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা অভিযানে যান। তারা সীমান্তের মেইন পিলার ২৯ থেকে প্রায় ৩০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নারিকেলবাড়িয়া এলাকায় মোঃ মহিউদ্দিন (৩৫) নামে একজনকে আটক করে। মহিউদ্দিন শার্শা শিকারপুর গ্রামের মোঃ তোজাম্মেলের ছেলে। তার কাছ থেকে ৭২ কেজি ৭৫৯ গ্রাম ওজনের ৬২৪টি সোনার বার এবং একটি রাম দা উদ্ধার হয়। উদ্ধার হওয়া স্বর্ণের বাজার মূল্য প্রায় ৩৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। লে. কর্নেল মোহাম্মদ আরিফুল হক বলেন, বিপুল পরিমাণ সোনার বার বেনাপোল বাজার দিয়ে ভারতে পাচার হচ্ছেÑ এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবির একটি টহল দল শুক্রবার সকালে বেনাপোল বাজারে অভিযান চালিয়ে ২ সোনা চোরাচালানীকে আটক করে। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে ২ কেজি ওজনের ১১টি সোনার বার জব্দ করা হয়। এর মধ্যে একটি বারের ওজন ১ কেজি ও বাকি ১০টির ওজন ১ কেজি। জব্দকৃত সোনার মূল্য ৯৮ লাখ টাকা। আটক পাচারকারীদের মধ্যে রয়েছে বেনাপোল ভবেরবেড় গ্রামের ইব্রাহিম হোসেনের ছেলে ইশ্রাফিল এবং বেনাপোল দৌলতপুর গ্রামের আবুল কাসেমের স্ত্রী সফুরা বেগম। জব্দকৃত সোনাগুলো বেনাপোল কাস্টম হাউসে জমা দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে বেনাপোল পোর্ট থানায় একটি মামলা হয়েছে। গত ২০ জুলাই বেনোপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের সময় আমড়াখালী বিজিবি চেকপোস্ট এলাকা থেকে ৪৫০ গ্রাম স্বর্ণ ও ২ হাজার ৬৩০ রুপীসহ ভারতীয় দুই নাগরিককে আটক করে বিজিবি সদস্যরা। ১৮ জুলাই বেনাপোলের বাহাদুরপুর বাজার মোড় থেকে দুইটি স্বর্ণের বারসহ মিলন হোসেন নামে এক পাচারকারীকে আটক করে বিজিবি সদস্যরা। মিলন বেনাপোলের পুড়াবাড়ি গ্রামের মশিয়ার রহমানের ছেলে। কাস্টমস পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে শুধু বেনাপোল কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের অধীনস্থ এলাকা দিয়ে ভারতে পাচারের সময় ১৮ কেজি ১০৯ গ্রাম স্বর্ণের বার জব্দ হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় নয় কোটি ১০ লাখ টাকা। এ সময় চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২৫ জন বিভিন্ন দেশের নাগরিককেও আটক করা হয়। তবে স্বর্ণ বহনকারীরা আটক হলেও গডফাদাররা থাকছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বিজিবি ও কাস্টমস সদস্যরা বিভিন্ন সময় স্বর্ণ পাচারকারীদের আটকের পর তাদের পুলিশে সোপার্দ করছেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাদের পুলিশ রিমান্ডে আনলেও রহস্যজনক কারণে গডফাদারদের নাম তালিকা আসছে না। ফলে কোনভাবে রোধ করা সম্ভাব হচ্ছে না পাচার কার্যক্রম। বেনাপোল কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা অফিসের উপ-পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, স্বর্ণ পাচারকারীরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে স্বর্ণ পাচার করছে। তবে সতর্ক থেকে প্রতিরোধের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। আর অভিযান পরিচালনার স্বার্থে তাদের জনবল বৃদ্ধি ও স্থানীয়ভাবে উন্নত এক্সরে মেশিন সরবরাহ থাকলে পাচাররোধে আরও সফলতা আসত বলে জানান তিনি। একটি সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে ট্রেন অথবা বাসে একটি গ্রুপ স্বর্ণ নিয়ে বেনাপোলে আসে। পরিবহন কাউন্টার কিংবা তাদের নির্ধারিত স্থানে স্বর্ণের চালানটি বদল হয় স্থানীয় এজেন্টদের হাতে। স্থানীয় এজেন্টের বহনকারীরা স্বর্ণের চালানটি নিয়ে চলে যায় গাতীপাড়া, পুটখালি, দৌলতপুর, ঘিবা, পাচভুলোট সীমান্তের কোন বাড়িতে। সেখান থেকে হাত বদল হয় শুধু সীমান্ত পার করে ভারতীয় এজেন্টের হাতে পৌঁছানোর পর্যন্ত। তাই যে সকল পাচারকারী আটক হয় তারা স্থানীয় এলাকার বসবাসকারী। ৪৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আরিফুল হক বলেন, স্বর্ণের চাহিদা বেশি থাকায় আন্তর্জাতিক স্বর্ণ পাচারকারী চক্রের সদস্যরা এখন ভারতে পাচার করছে। স্বর্ণ, আগ্নেয়াস্ত্র, হুন্ডি, মাদকদ্রব্যসহ অন্যান্য চোরাচালান পাচারকারীদের বিষয়ে বিজিবি সব সময় সতর্ক আছেন।
×