ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

কোরবানির প্রস্তুতি শুরু

ঈদ পণ্যের পসরা, বাড়ি ফেরার তোড়জোড়

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৮ আগস্ট ২০১৮

ঈদ পণ্যের পসরা, বাড়ি ফেরার তোড়জোড়

মোরসালিন মিজান ॥ ঈদ-উল আজহার এখনও কয়েকদিন বাকি। প্রাথমিক তারিখটি ২২ আগস্ট। চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে এদিন অনুষ্ঠিত হতে পারে কোরবানির ঈদ। আর কোরবানির ঈদ মানেই, গরু খোঁজা। একটু আগেভাগেই মাঠে নেমে যেতে হয়। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনও পশুর হাট বসানোর লক্ষ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। কত গরু আসবে? চামড়ার দাম কমবে? নাকি বাড়বে? আলোচনা করছেন ব্যবসায়ীরা। এ ঈদে প্রচুর পেঁয়াজ মরিচ মসলা চাই। কিনে রাখার তাগাদা দিচ্ছেন গৃহিণীরা। অনেকে আবার বাড়ি যাবেন। গ্রামের বাড়ি। সেখানেই ঈদ। তারা বাস ট্রেন ও লঞ্চের অগ্রিম টিকেট সংগ্রহে ব্যস্ত। এভাবে ঈদের আগের ছবিটা মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আবহ তৈরি হয়ে গেছে একটা। এর আগে গত কয়েকদিন নানা ঝক্কির মধ্য দিয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের হঠাৎ আন্দোলনে দূরপাল্লার যানবাহন চলবে কিনা, কবে নাগাদ চলবেÑ সন্দেহ দেখা দিয়েছিল। তবে এখন শান্ত ঢাকা। শহরবাসী ঈদ নিয়ে ভাবার সুযোগ পেয়েছেন। যারা গ্রামের বাড়িতে যাবেন তাদের ছোটাছুটিটা এখন বিশেষ চোখে পড়ছে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা, ঘোরঘাট, ভাদুরিয়া, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর, ডিমলা, চিলাহাটী, ভাইলাগঞ্জ, ঝাড়বাড়ী, চিরিরবন্দর, জয়পুরহাট, হিলি, নাটোর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকার টিকেট সংগ্রহ করছেন যাত্রীরা। প্রথম দিন টার্মিনাল ঘুরে মনে হচ্ছিল, ঈদ বুঝি দু-একদিন দূরে! কোন কোন টিকেট কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইন। অপেক্ষা যেন শেষ হয় না। হানিফ পরিবহনের কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আল আমিন নামের এক যুবক বললেন, আমরা সব সময়ই গ্রামের বাড়িতে ঈদ করি। এবার কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। তাই প্রথম দিনই টিকেট সংগ্রহ করতে চলে এসেছি। এর কিছু সময় পর হাসিমুখে তিনি জানান, টিকেট পেয়েছেন। ঈদে ট্রেনভ্রমণের চাহিদাই বেশি। আজ বুধবার থেকে ঈদের অগ্রিম টিকেট বিক্রি করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টিকেট সংগ্রহ করা যাবে। কমলাপুর স্টেশনে ২৬টি কাউন্টার খোলা হবে। ২টি কাউন্টার সংরক্ষিত থাকবে নারী যাত্রীদের জন্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, আজ ভোর হতে না হতেই হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হবেন স্টেশনে। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে নিজ নিজ গন্তব্যের টিকেট সংগ্রহ করবেন। ছবিটি দেখারও প্রয়োজন হয় না। চিরচেনা এই ছবি ঈদের বার্তা ছড়িয়ে দেয়। ছড়িয়ে দেবে। যাত্রীদের মতো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও ব্যস্ত। বিপুল চাপ সামলাতে কাজ করছেন তারা। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার ঈদে ৯ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। ঈদের দিন মেইল এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। কোরবানির ঈদে রান্না-বান্নার বড় একটি ব্যাপার আছে। গৃহিণীদের বিপুল প্রস্তুতি নিতে হয়। তাদের নানা চাওয়ার মধ্যে মসলা অন্যতম। এ সময় বহু পদের মসলার প্রয়োজন হয়। এই যেমনÑ আদা পেঁয়াজ রসুন মরিচ হলুদ দারচিনি লং এলাচি আরও কত কী! আর কয়েকদিন পর দাম অনেক বেড়ে যাবে। তাই গৃহিণীরা গৃহকর্তাকে তাগাদা দিতে শুরু করেছেন। ঢাকার দোকানিরাও প্রস্তুত। মঙ্গলবার মতিঝিল এলাকা ঘুরে দেখা গেল, একাধিক ফুটপাথে পসরা সাজিয়েছেন মসলা বিক্রেতারা। সব ধরনের মসলাই আছে তাদের কাছে। তবে ঈদে প্রয়োজন হবে এমন মসলাগুলো আলাদা ঝুড়িতে নিয়ে দেখানো হচ্ছে। খাইরুদ্দিন নামের এক বিক্রেতা বললেন, যত ধরনের মসলা পাওয়া যায় সবই আছে আমার কাছে। ক্রেতাও পাচ্ছি ভাল। অফিস থেকে ফেরার পথে মহিলা পুরুষ সবাই সময় দিচ্ছেন বলে জানান তিনি। কিন্তু এত আগে কেন? জানতে চাইলে হিরামনি নামের এক ক্রেতা বলেন, এখন কিনছি তাতেই দাম বেশি নিচ্ছে। পরে কিনলে আরও বাড়িয়ে দেবে। মসলা অনেক লাগে জানিয়ে তিনি বলেন, খরচ কমাতে আগে কিনে রাখছি। কোরবানির ঈদ যেহেতু, পশুর হাট বড় আলোচনা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাবতলীর হাট নতুন করে সাজানো হচ্ছে। তোলা হচ্ছে গরুও। প্রয়োজনে এখনই কেনা যাবে। এর বাইরে শহরের প্রতি প্রান্তেই বসবে অস্থায়ী হাট। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১২টি পশুর হাট ইজারা দেয়া হয়েছে। উত্তর সিটিতেও বসতে পারে ৮টি হাট। উভয় সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। কোরবানির পশুর চামড়া নিয়েও বড় ব্যবসা হয়। কাঁচা চামড়ার সবচেয়ে বড় মোকাম পুরান ঢাকার পোস্তায়। চামড়ার মূল ক্রেতারা অবশ্য স্থানান্তরিত হয়েছেন সাভারের নির্ধারিত ট্যানারি পল্লীতে। দুই জায়গাতেই চলছে চামড়া কেনাবেচার প্রস্তুতি। আড়ত ধোয়ামোছার কাজ শেষ করা হয়েছে। কাঁচা চামড়ার জন্য বাড়তি লবণও কিনে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে ঈদের আগে এক ধরনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। ক্রমে দৃশ্যমান হবে ঈদ-উল আজহা। এ ঈদেও খাওয়া হবে। বেড়ানো হবে। তবে মনে রাখা জরুরী যে, আত্মোৎসর্গ করা সেকরিফাইস করার শিক্ষা দেয় ঈদ-উল আজহা। এই শিক্ষাটি গ্রহণ করতে হবে। বনের পশু কোরবানি দেয়ার আগে মনের পশু কোরবানি দেয়া চাই। এই যে মহান শিক্ষা, শিক্ষাটি নিতে হবে। এর জন্যও নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। আমরা নিচ্ছি সে প্রস্তুতি?
×