ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

এক জেলা এক পণ্যের ভিত্তিতে ৬৪ জেলাকে ব্র্যান্ডিং করার উদ্যোগ

দশ বছরের সাফল্য তুলে ধরতে অক্টোবরে সারাদেশে উন্নয়ন মেলা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৮ আগস্ট ২০১৮

দশ বছরের সাফল্য তুলে ধরতে অক্টোবরে সারাদেশে উন্নয়ন মেলা

এম শাহজাহান ॥ এক জেলা এক পণ্যের ভিত্তিতে এবার দেশের ৬৪টি জেলাকে ব্র্যান্ডিং করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের টানা দশ বছরের অর্জন, অগ্রগতি ও আগামীতে সরকার গঠন করলে কি কর্মসূচী থাকবে তা দেশের প্রতিটি মানুষকে জানাতে চায় সরকার। এজন্য বর্তমান সরকারের মেয়াদ পূর্তির আগে আগামী অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে সারাদেশে একযোগে উন্নয়ন মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে চতুর্থবারের মতো এই মেলা দেশের গ-ি ছাড়িয়ে এবার বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতেও অনুষ্ঠিত হবে। এতে করে বিদেশীরাও বাংলাদেশের অর্জন ও অগ্রগতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারবেন। জানা গেছে, এক জেলা এক পণ্যের ভিত্তিতে দেশের ৬৪ জেলা থেকে ৬৪টি পণ্য বাছাই করে জেলাগুলোকে ব্র্যান্ডিং করার কৌশল নেয়া হয়েছে। তবে প্রতিটি জেলা থেকে সুনির্দিষ্ট একটি পণ্য বের করা কষ্টসাধ্য, সময়সাপেক্ষ ব্যাপার বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া ৬৪টি পণ্যের অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে কি না সে বিষয়টিও যাচাই-বাছাই করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত ১৫টি পণ্য বাছাই করতে সক্ষম হয়েছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। আশা করা হচ্ছে আরও কয়েকটি পণ্য উন্নয়নমেলার আগে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। এসব পণ্য চিহ্নিত করার পাশাপাশি রফতানি করার উদ্যোগ নেয়া হবে। জানা গেছে, আগামী বত্রিশ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। এ লক্ষ্যে রূপকল্প ২০২১ এবং ২০৪১ প্রস্তুত করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দশ বছরের সাফল্য তুলে ধরতে সারাদেশে তিন দিনব্যাপী উন্নয়ন মেলা করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এর আগের মেলাগুলো বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস সামনে রেখে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। কিন্তু এবার বর্তমান সরকারের মেয়াদ পূর্তি ও নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে রেখে আগামী ৪-৬ অক্টোবর সারাদেশে উন্নয়ন মেলার আয়োজন করা হবে। পুরো বিষয়টি তদারকি করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। দেশের ৬৪টি জেলা এবং প্রতিটি থানায় যাতে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি নিতে নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। শীঘ্রই মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে উন্নয়ন মেলা অনুষ্ঠানের বিষয়টি অনুমোদন দেয়া হবে। এবারের উন্নয়ন মেলায় প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পৃথকভাবে তাদের উন্নয়ন কর্মকা- জনগণের সামনে তুলে ধরবে। এদিকে বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার নয় বছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। প্রায় চারগুণ বেড়ে ৩৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে রফতানি আয়। সাড়ে তিনগুণ বেড়েছে প্রবাস আয়। প্রায় দশগুণ বৃদ্ধি পেয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৩ বিলিয়ন ডলারে। একইভাবে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ, বিদ্যুত উৎপাদন বাড়ানো, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়নে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের বিস্ময়। দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ অর্জনে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের সাফল্যগাথা জনগণের সামনে তুলে ধরাই এই মেলার মূল লক্ষ্য। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগেই উন্নয়নমেলা অনুষ্ঠিত হবে। জেলায় জেলা প্রশাসক এবং থানায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেলার আয়োজন করবেন। এতে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ আলাদা আলাদা ভাবে তাদের উন্নয়ন কর্মকা- জনগণের সামনে তুলে ধরবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১০টি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের ঘোষণার মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এই ১০টি বিশেষ উদ্যোগ হচ্ছে- একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, আশ্রয়ণ প্রকল্প, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচী, নারীর ক্ষমতায়ন কর্মসূচী, সকলের জন্য বিদ্যুত, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী, কমিউনিটি ক্লিনিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, বিনিয়োগ বিকাশ ও পরিবেশ সংরক্ষণ। এবারের ঢাকার মেলায় দেশের সব মন্ত্রণালয়, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, আনসার, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পৃথক পৃথক স্টল থাকবে। সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছেÑ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সম্পূর্ণরূপে দারিদ্র্য বিমোচন। এছাড়া রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের মর্যাদায় বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে কাজ করছে সরকার। এই লক্ষ্য সামনে রেখে বাজেটে প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন এবং সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার দিকে সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুও দেশের দায়িত্ব গ্রহণের পর দারিদ্র্য বিমোচনসহ অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দেশের অর্থনীতি আর স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারেনি। পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নের কৌশলগত দলিল হিসেবে পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১) প্রণয়ন করে। জানা গেছে, জঙ্গীবাদ-বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতি এবং নানা প্রতিবন্ধকতার মুখেও বর্তমান সরকার উন্নয়নের পথে হাঁটছে। আগামী ২০২১ সালে এ উন্নয়ন কর্মকা-ের প্রাথমিক ধাপ শেষ হবে। কিন্তু ২০৪১ উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য মধ্যমেয়াদে যেসব বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে তা হলো বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প গ্রহণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কর্মসৃজন, দক্ষ উৎপদানশীলতা, সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বৃদ্ধি, পরিকল্পিত নগরায়ন এবং টেকসই পরিবেশবান্ধব নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ। এসব বিষয় উন্নয়ন মেলার মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। এক জেলা এক পণ্য ॥ রফতানি বাড়াতে ‘এক জেলা এক পণ্য’ কর্মসূচীতে জোর দেয়া হচ্ছে। এই কর্মসূচী এগিয়ে নিতে দেশের ৪১ জেলায় রফতানি সম্ভাবনাময় ১৫ পণ্য নির্বাচন করেছে সরকার। একই সঙ্গে মাথার চুল, চালের কুড়া, কুইচ্যা এবং কাঁকড়ার মতো অপ্রচলিত পণ্য রফতানি বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। দেশের প্রত্যেকটি জেলা থেকে অন্তত একটি পণ্য রফতানি করা হবে। মাত্র ছয়টি পণ্যের রফতানি বাজার পাঁচটি দেশে সীমাবদ্ধ আছে। নিটওয়্যার-ওভেন, হিমায়িত মৎস্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষিজাত পণ্য, হোমটেক্সটাইল এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যÑ এ ছয়টি খাতের ওপরই বাংলাদেশের রফতানি আয়ের ৯৪ ভাগ নির্ভরশীল। এসব পণ্য রফতানি হচ্ছে আবার যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও স্পেনে। রফতানি বাণিজ্যের এই চিত্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। আর তাই এবার রফতানি বাড়াতে পণ্য বহুমুখীকরণ ও এক জেলা এক পণ্য কর্মসূচী প্রোগ্রাম এগিয়ে নেয়া হবে।
×