ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় চেয়ারম্যানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ৪ আগস্ট ২০১৮

  নওগাঁয় চেয়ারম্যানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ৩ আগস্ট ॥ নওগাঁর মান্দা উপজেলার কাঁশোপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে নজরুল ইসলাম (২৮) নামে এক যুবককে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার নজরুল ইসলামের চাচা আজাহার আলী বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে মান্দা থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলার পর অভিযান চালিয়ে যুবকের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কাঁশোপাড়া ইউনিয়নের নাপিতপাড়া গ্রামে। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, গ্রামপুলিশের নির্যাতনে নজরুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ২৫ জুলাই নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। হাসপাতাল থেকে ২৮ জুলাই ছাড়পত্র দেয়া হলে বাড়িতে এনে ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী চিকিৎসা চলছিল। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকালে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, প্রতিবেশীর স্ত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গত ২৩ জুলাই সন্ধ্যায় গ্রামের আমিন মৃধার বাড়িতে সালিশের আয়োজন করা হয়। সালিশে সভাপতিত্ব করেন কাঁশোপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুল কুদ্দুস। সালিশে সাবেক ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম, মাতবর ইসমাইল হোসেন, জেহের আলী, আবদুল মোমিন, আলম হোসেন, রেজাউল ইসলামসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয়রা আরও জানান, সালিশের এক পর্যায়ে মাতবর ইসমাইল হোসেনকে প্রধান করে একটি বোর্ড গঠন করা হয়। গঠিত বোর্ড নজরুল ইসলামের ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা করে রায় ঘোষণা করে। এ রায়কে অমানবিক দাবি করে তা প্রত্যাখ্যান করে নজরুল ইসলামের পরিবার। ভুক্তভোগী নজরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পরদিন ২৪ জুলাই রাত ১০ টার দিকে গ্রামপুলিশ দিয়ে নজরুল ইসলামকে ইউনিয়ন পরিষদে ধরে নিয়ে যান চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান। পরে পরিষদের হলরুমে আটকে রেখে জরিমানার ৬৫ হাজার টাকা আদায়ের জন্য তার ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। এ সময় সালিশের মাতবররা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। টাকা দিতে অস্বীকার করায় চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানের হুকুমে গ্রামপুলিশ সামসুদ্দীন কবিরাজ লাঠি দিয়ে নজরুল ইসলামকে অমানুষিক নির্যাতন করে। পরে ওই রাতেই তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি কাঁশোপাড়া গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে জয়নালের কাছে বিক্রি করে জরিমানার টাকা আদায় করা হয়েছে বলেও তাদের অভিযোগ। গ্রামপুলিশ সামসুদ্দীন কবিরাজ জানান, আমি হুকুমের গোলাম। চেয়ারম্যান হুকুম দিয়েছে তাই পিটিয়েছি। এতে ন্যায় হয়েছে, না অন্যায় হয়েছে জানি না। চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সালিশ বৈঠক ও যুবককে মারধরের বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে মোটরসাইকেল বিক্রি করে জরিমানা আদায়ের অভিযোগটি অস্বীকার করেন তিনি। সালিশের সভাপতি ইউপি সদস্য আবদুল কুদ্দুস জানান, গৃহবধূকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে নজরুল ইসলামের ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে অভিযুক্ত পরিবার আপীল করায় ৬৫ হাজারের পরিবর্তে ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরে মোটরসাইকেল বিক্রি করে সেই টাকা আদায় করেছেন চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান। থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুব আলম জানান, ঘটনায় নজরুল ইসলামের চাচা আজাহার আলী বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। পরে অভিযান চালিয়ে নজরুল ইসলামের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে।
×