ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সন্তোষ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৩১ জুলাই ২০১৮

নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সন্তোষ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে অনুষ্ঠিত রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটি বলেছে, ‘দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তিন সিটির নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। এক্ষেত্রে বিএনপির অভিযোগ পূর্ব নির্ধারিত। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করেছেন। নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে একটা ষড়যন্ত্র করার পাঁয়তারা করছে। আর তিন সিটিতে বিএনপি নির্বাচনের জন্য অংশ নেয়নি। তাদের উদ্দেশ্যই ছিল নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বহির্বিশ্বে সরকারের ইমেজ নষ্ট করা। বিএনপি তিন সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার নামে অভিনয় করেছে। তারা আগেই ঠিক করে রেখেছে, সকালে কী বলবে, বিকেলে কী বলবে। তিন সিটি কর্পোরেশেনের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে সোমবার বিকেলে ধানম-িস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। একই সঙ্গে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের বিজয়ের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, তিন সিটির জনগণ উন্নয়নের পক্ষে রায় দেবে। রাজশাহী ও বরিশালে ইভিএম রেজাল্টে আমরা এগিয়ে। সিলেটে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছি, তাতে এখন পর্যন্ত আমরা তিন সিটিতেই জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, বিএনপির লক্ষ্য ছিল একটাই, এ নির্বাচনকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করা। কিন্তু তাদের এই অপচেষ্টা সফল করতে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে ভোটারদের ভোটদানের ইতিবাচক প্রবণতা সবাই লক্ষ্য করেছেন। কিন্তু বিএনপি তাদের অভিযোগের পুরাতন রেকর্ড বাজিয়েই চলেছে। দলটি নীলনক্সার নির্বাচনের যে অভিযোগ করেছে, তার জবাবে আমি বলব, বিএনপি এতে অংশ নিয়েছে নির্বাচনকে জনগণ ও বিদেশীদের কাছে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে। এটি তাদেরই নীলনক্সা। এ সময় বিএনপি অনিয়মের যে অভিযোগগুলো করছে, সেগুলো তারা আগে থেকেই লিখে রেখেছিল বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। বিএনপির দিকে অভিযোগের তীর ছুড়ে দিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতারা নয়াপল্টনে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগকালে বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার ছড়িয়েছেন। মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে উস্কানি দেয়ার অপচেষ্টা করেছেন তিনটি সিটি কর্পোরেশনে বিএনপির প্রার্থীরা। এমনকি নিজেদের লোক দিয়ে গ-গোল সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত করাই ছিল বিএনপির মূল টার্গেট। আজকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে যা দিবালোকের মতো পরিষ্কার। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য ছিল অভিযোগ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, কেউ যদি প্রতিযোগিতা ভেস্তে দিতে মাঠে নামে, তাহলে কি কিছু করার থাকে? কেউ যদি স্রেফ অভিযোগের পসরা সাজিয়ে মিথ্যাচার শুরু করে, পরাজয়ের জন্য নিজের ক্ষেত্র তৈরি করতে মরিয়া থাকে এবং মিডিয়ার ফাঁদে ফেলে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়, তাহলে কি করার আছে?’ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন রাজশাহীতে বিএনপির প্রার্থী ভোট না দিয়ে সারাদিন নাটক করেছেন। বরিশালে বিএনপির প্রার্থী মজিবুর রহমান সরোয়ার তার বাড়ির সামনে গত রাত থেকে সকাল পর্যন্ত যেসব কর্মকা- করেছেন, তা দেখে বোঝা যায়, তিনি নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। তার যে অভিযোগগুলো, সেগুলো আগেই তিনি লিখে রেখেছিলেন। তারা আগেই নির্ধারণ করেছিলেন, সকালে কী বলবেন, দুপুরে কী বলবেন এবং নির্বাচন শেষ হলে কী বলবেন!’ ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইতিবাচক উন্নয়নের রাজনীতির সোনালি ফসল নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা ঘরে তুলছি। আমাদের নেত্রীর নেতৃত্বের প্রতি দেশের জনগণের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। দেশের জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্ব গ্রহণ করেছে এবং আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে অন্য কেউ আওয়ামী লীগকে হারাতে পারে না। নারায়ণগঞ্জ, খুলনা ও গাজীপুরে সেটা প্রমাণিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য রাশেদুল আলম, সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, একেএম এনামুল হক শামীম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুর নাহার চাঁপা প্রমুখ। উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে ॥ এর আগে ধানম-িস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দুই দফায় দলের পক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এই তিন সিটিতে উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি মিথ্যাচার করছে। বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অথচ পরাজয়ের আশঙ্কা থেকে বিএনপি মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সুষ্ঠু পরিবেশের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ায় প্রমাণ হয়েছে যে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তিন সিটির নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অভিযোগের জবাবে হানিফ বলেন, বিএনপি যখনই পরাজয়ের আশঙ্কা করে তখনই জনগণকে বিভ্রান্ত করতে মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে থাকে। কিভাবে নির্বাচন হচ্ছে তা গণমাধ্যমসহ সবাই প্রত্যক্ষ করেছে। বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে ঢালাওভাবে অভিযোগ না করে কোথাও সুস্পষ্ট অনিয়ম হয়েছে তা জানাতে হবে। অন্যথায় জনগণকে বিভ্রান্ত করে মিথ্যাচার করা উচিত নয়। ভোট কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করা নিয়ে মিথ্যাচার বিএনপির পুরনো অভ্যাস। মাহবুব-উল আলম হানিফ অভিযোগ করে বলেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডে সৈয়দ মজিদুল ইসলাম কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থী আওয়ামী লীগের এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। পরে অভিয়োগের ভিত্তিতে আবারও তাদের প্রবেশ করানো হয়। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী নৌকা মার্কার এজেন্টকে বের করে দিয়েছে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে আমাদের এজেন্ট বের করে দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। সিলেটেও বিএনপি বিশৃঙ্খলা করেছে দাবি করে তিনি বলেন, সিলেটের জালাল উদ্দিন স্কুল ও মিরাবাজার কেন্দ্রে ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে তারা। বরিশালে বিএনপি প্রার্থীর ভোট বর্জনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই তারা এমন করছে। সেখানে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি, যার জন্য নির্বাচন বর্জন করতে হবে। আওয়ামী লীগ সব সময় প্রত্যেকটি নির্বাচন আবাধ সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে পরিচালনা করতে বদ্ধপরিকর। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এ কে এম এনামুল হক শামীম, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সকাল থেকে ধানম-িস্থ কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
×