ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আগামীকাল বিশ্ব মানব পাচার বিরোধী দিবস

মানব পাচারের ৪১৫২ মামলা হলেও শাস্তি প্রায় নেই

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৯ জুলাই ২০১৮

মানব পাচারের ৪১৫২ মামলা হলেও শাস্তি প্রায় নেই

ফিরোজ মান্না ॥ মানব পাচারের ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। ২০১২ সালে মানব পাচার আইন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চার হাজার ১৫২ মামলা হলেও শাস্তির ঘটনা খুব বেশি ঘটেনি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এসব মামলার অধিকাংশেরই এখন পর্যন্ত বিচার কার্যক্রমই শুরু হয়নি। পাচার রোধে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেয়ায় এ বছরও যুক্তরাষ্ট্রের মানবপাচার বিষয়ক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে টায়ার-২ ওয়াচ লিস্টে রাখা হয়েছে। আগামীকাল ৩০ জুলাই বিশ্ব মানব পাচারবিরোধী দিবস হিসেবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে, অনিয়মিত অভিবাসনও বাংলাদেশের জন্য একটা বড় সমস্যা। ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান দফতর ইউরোস্ট্যাট-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি বাংলাদেশী ইউরোপের দেশগুলোতে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন। এ বছরের শুরুতে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ দাবি করেছে। প্রতি বছর ভারতে বাংলাদশ থেকে গড়ে ৫০ হাজার নারী পাচার হয়। বছর তিনেক আগেও সাগর পথ দিয়ে হাজারো মানুষের মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে আলোচনা ছিল। আবারও মিয়ানমারের বিপুল সংখ্যক নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ফলে পাচারের ঝুঁকি থাকছেই। ছাত্র ও পর্যটক সাজিয়ে বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোসহ নানা উপায়ে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা থেমে নেই। বাংলাদেশ যখন মধ্যম আয়ের দেশের দিকে যাচ্ছে এবং নিরাপদ অভিবাসন প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে তখন এইসব ঘটনা উদ্বেগজনক। আগামীকাল ৩০ জুলাই পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানব পাচারবিরোধী দিবস। ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এক প্রস্তাবের মাধ্যমে প্রতি বছর ৩০ জুলাই দিনটিকে বিশ্ব মানব পাচারবিরোধী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। মানব পাচার ও অভিবাসন নিয়ে কাজ করেন এমন কয়েকটি সংগঠন বলেছে, বেশির ভাগ মানব পাচার হয় মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তানসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে। এক শ্রেণীর দালালের মাধমে তারা বেশি বেতনের চাকরির লোভে বিদেশ যাচ্ছে। এতে বৈধ শ্রমবাজারের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এখান থেকে উত্তরণ না ঘটাতে পারলে দেশের বহু মানুষ নিস্ব সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বে। সরকার মানব পাচার প্রতিরোধ আইন করলেও তার প্রয়োগ হচ্ছে না বলেই চলে। ‘ন্যাশনাল লেভেল শেয়ারিং ফর এডাপশন অব কমপ্রিহেনসিভ ল’ এগেইনস্ট ট্রাফিকিং ও রিফিউজি এ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) জানিয়েছে, অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে না পারলে বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজার হারাতে হতে পারে। সমুদ্রপথে টেকনাফ থেকে মালয়েশিয়ায় অনিয়মিত অভিবাসন দেশের সার্বিক অভিবাসনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ভারত ও পাকিস্তানে বেশিরভাগ পাচার হচ্ছে নারী। এদের জীবন সবচেয়ে দুর্বিষহ। পাচারকারীরা সংশ্লিষ্ট দেশের দালালদের কাছে তাদের বিক্রি করে দেয়। দালালদের হাতে পড়ার পর তাদের জায়গা হয় যৌন পল্লীতে। অথবা অন্য কোন স্থানে আটকে রেখে তাদের ওপর চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। এখন শুরু হয়েছে লিবিয়াতে পাচার। লোভ দেখানো হচ্ছে-লিবিয়া থেকে সাগর পথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চাকরির। লোভে পড়ে মানুষ দালালদের ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে দিয়ে অনিশ্চিত জীবনে চলে যাচ্ছে। কেউ হয় তো লক্ষ্যে পৌছতে পারে। তবে বেশির ভাগই ঠাঁই হয় বিভিন্ন দেশের জেলখানায়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, মানব পাচার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে বহু মানুষের জীবনহানি ঘটবে। সমাজে একটা ভীতিকর পরিস্থিতির জন্ম নেবে। এখন থেকে বের হতেই হবে। তা না হলে জনশক্তির বাজারও হারাতে হবে। প্রতি বছর পাচার হওয়া নারী পুরুষের প্রকৃত সংখ্যা কত তা সরকারী বেসরকারী কোন সংস্থার কাছে নেই। সরকারী বেসরকারী সংস্থাগুলো সংবাদ মাধ্যম থেকে যে সংখ্যা পাওয়া যায় তারই হিসাব রাখা হয়। এর বাইরে আর কোন কাজ হচ্ছে না। দেশে লোকসংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে এ বিষয় নিয়ে সরকারের খুব একটা মাথাব্যথা নেই। বেসরকারী সংস্থাগুলো মাঝে মধ্যে মানব পাচার প্রতিরোধ নিয়ে বছরে দু’চারটি সেমিনার করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করছে। পাচার হওয়া পরিবারের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না। এভাবেই বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার নারী পুরুষ পাচার হয়ে যাচ্ছে। এদিকে, দিবসটি পালন উপলক্ষ আজ ২৯ জুলাই মানব পাচার ও অনিয়মিত অভিবাসন পরিস্থিতি নিয়ে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করেছে ব্র্যাক। ৭৫ মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারের সম্মেলন কক্ষে সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে অনুষ্ঠানটি শুরু হবে। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচীর প্রধান শরিফুল হাসান জানান, অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
×