ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

আক্ষেপের আগুনে পোড়ানো হার

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৭ জুলাই ২০১৮

 আক্ষেপের  আগুনে  পোড়ানো  হার

মিথুন আশরাফ ॥ জয়ের এত সহজ সুযোগ কেউ হাতছাড়া করে! সবাই অবাক। সেই কাজটিই করল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গায়ানাতেই সিরিজ জয়ের সুযোগ ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩ রানে হারের আক্ষেপে পুড়ল বাংলাদেশ। তীরে এসে তরউ ডুবল বাংলাদেশের। জয়ের এত কাছে গিয়েও নাটকীয়ভাবে যেন তা ছ্ােয়া হলো না। তাতে করে সিরিজেও ১-১ সমতা এসে পড়ল। প্রথম ওয়ানডেতে ৪৮ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ। এখন শনিবার সেন্ট কিটসে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে যে দল জিতবে তারাই সিরিজ জিতে নেবে। টেস্ট সিরিজ হারের পর প্রথম ওয়ানডে জেতায় বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফুটে উঠেছিল। মনে করা হয়েছিল দ্বিতীয় ওয়ানডেও জয় হবে। গায়ানার প্রোভিডেন্স স্টেডিয়াম যে পয়া ভেন্যু। এই ভেন্যুতেই ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টেস্ট সিরিজে নাজেহাল হওয়ার পর প্রথম ওয়ানডেতে দুর্দান্তভাবে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। তাতে ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থাও চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২৭১ রানে যখন বেঁধে রাখল বাংলাদেশ তখন জেতার আশা জেগে যায়। শিমরন হেটমেয়ার যখন ১২৫ রানের ইনিংস খেলতে পারেন, বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরাও তো ঝলক দেখাবেন। তাই হলো। বিশেষ করে সিনিয়র ক্রিকেটাররা দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেন। এরপরও ২৬৮ রানের বেশি করা গেল না। তামিম ইকবাল ৫৪ রানের ইনিংস খেললেন। মুশফিকুর রহীম ৬৮ রানের ইনিংস খেললেন। সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে আসল ৫৬ রান। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ করলেন ৩৯ রান। সবই ঠিক চলছিল। তামিম-সাকিব মিলে দ্বিতীয় উইকেটে ৯৭ রানের জুটি গড়েন। মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ মিলে চতুর্থ উইকেটে ৮৭ রানের জুটি গড়েন। মুশফিক-সাব্বির মিলেও দুর্দান্তভাবে জয়ের একেবারে কাছে এগিয়ে যান। কিন্তু ২৬৪ রান পর্যন্ত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে থাকলেও এরপরই ঘটে অঘটন। ম্যাচ থেকে মুহূর্তেই ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। জিততে তখন ৭ বলে ৮ রান দরকার। ঠিক এমন সময়ই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচ জেতার চেষ্টা করে সাব্বির সাজঘরে ফেরেন। জিততে যখন ৬ বলে ৮ রান দরকার, মুশফিকও একই কাজ করেন। বরাবরের মতো শেষে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন মুশফিক। আর সেই খেসারত দিতে হয় দলকে। আতঙ্ক তৈরি হয়ে যায়। সেই আতঙ্কে এমনই অবস্থা হয় মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত যেন ব্যাটে বল লাগানোই ভুলে যান! শেষ পর্যন্ত শেষ ওভারে জিততে যে ৬ বলে ৮ রান দরকার হয়, মুশফিক প্রথম বলেই আউট হওয়াতে থাকে ৫ বলে ৮ রান দরকার। চার রানের বেশি নেওয়াই যায়নি। অথচ এই রান নেয়া কঠিন কিছু ছিল না। একটা সময়ে গিয়ে ৩০ বলে ৪০ রান দরকার ছিল। যে কোন দলের জন্যই এ মুহূর্ত থেকে জেতা সহজ। ১ রান, ২ রান করে নিলেও হয়। সেই কাজটিই বাংলাদেশ দল করতে পারল না। ভুল বোঝাবুঝিতে মাহমুদুল্লাহ যখন ২৩২ রানের সময় রান আউট হন, তখনই খেলা যেন একটু ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিকে ঝুঁকে যায়। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ পারল না বিধায় ৪৯.৩ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেখানে ২৭১ রান করতে পারল, সেখানে ৬ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৬৮ রান করতে পারল বাংলাদেশ। ৩ রানে হারের আক্ষেপ যুক্ত হলো। ২০১২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ফাইনালে, ২০১৬ সালে ভারতের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ফাইনালে, ২০১৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে এবং সর্বশেষ এ বছর নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ঠিক যেভাবে হার হয়েছে। এবারও সেই রকম কষ্টের হারই হলো। এবার যেন আক্ষেপ আরও বেশি জড়িয়ে থাকল। ম্যাচটি জিতলেই যে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে যেত। এমন সুযোগ কি আর শনিবার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে, সিরিজ ফয়সালার ম্যাচে মিলবে? শেষে না আবার ওয়ানডে সিরিজেও হেরে যায় বাংলাদেশ। সেই শঙ্কাও যুক্ত হয়ে থাকল। আক্ষেপের হারে যে ক্রিকেটারদের মানসিকতাতেও প্রভাব পড়ে যেতে পারে। আর সেই প্রভাব পড়লে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো সুযোগ কাজে লাগাতে চাইবে। সুযোগ এখন বাংলাদেশ দল না দিলেই হলো। প্রথম ওয়ানডের আত্মবিশ্বাস তৃতীয় ওয়ানডেতেও থাকলে হলো। তাহলে এমন আক্ষেপের হারের পরও সিরিজ জেতার সুখস্মৃতি মিলে যেতেও পারে।
×