ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবসা গুটিয়ে ফেলছেন ছোট খামারিরা, বেড়েই চলেছে ডিম ও মুরগির দাম

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৬ জুলাই ২০১৮

ব্যবসা গুটিয়ে ফেলছেন ছোট খামারিরা, বেড়েই চলেছে ডিম ও মুরগির দাম

এম শাহজাহান ॥ পোল্ট্রি ফিডের দাম বাড়ায় পুঁজি হারিয়ে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলছেন ছোট ছোট খামারিরা। লোকসানের মুখে খামার বন্ধ হওয়ার কারণে উৎপাদন কমে গেছে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির। এতে দাম বেড়ে যাচ্ছে ডিমের। খুচরা পর্যায়ে প্রতিহালি লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৪০ টাকায়। আমিষের প্রধান উৎস ডিমের দাম বাড়ায় স্বল্প আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন। ডিমের পাশাপাশি বেড়ে যাচ্ছে সব ধরনের ব্রয়লার ফার্মের মুরগির দামও। জানা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে ডিমের দাম প্রায় দ্বিগুণ হতে যাচ্ছে। রোজার ঈদের আগে পাইকারি পর্যায়ে প্রতিহালি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৮-২০ টাকা। খুচরায় সেই ডিম ভোক্তারা ২৪-২৫ টাকায় কিনতে পেরেছেন। এখন বাজারভেদে খুচরা পর্যায়ে প্রতিহালি ডিম ৩৮-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারী বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, প্রতিহালি ডিমের দাম ৩২-৩৬ টাকা। একমাস আগে এই ডিম ২২-২৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক্ষেত্রে একমাসের ব্যবধানে দাম বৃদ্ধির হার প্রায় ৪২ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিমের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব না হলে দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কয়েক বছর আগে দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে সেই সময় সাময়িকভাবে সরকার ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু সেই সময় আমদানিকৃত ডিম নিয়ে দেশে বহু বিতর্ক তৈরি হয়। আমদানিতে বার্ড ফ্লুসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। স্বাস্থ্যগত এসব ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে তাই সহসাই ডিম আমদানির অনুমতিও দেয়া হয় না। এসব কারণে ডিম ও ব্রয়লার মুরগি আমদানি প্রক্রিয়াটিও দেশে বেশ জটিল। তাই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খামারিদের নীতিগত সহায়তা দিয়ে ডিমের উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রতিবছর ডিমের চাহিদা রয়েছে ১ হাজার ৬৯৪ কোটি ১৬ লাখ পিসের। প্রতিবছর ডিম উৎপাদন হয় ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ৩১ লাখ পিস। এ হিসাবে বছরে চাহিদার তুলনায় ২শ’ কোটি ৮৫ লাখ পিস ডিমের ঘাটতি রয়েছে। এই অধিদফতরের হিসাবে, দেশে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৬ কোটি ডিম উৎপাদিত হয়। যা গত আট বছর আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছিল ৫৭৪ কোটি। ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে, ২০০৯ সালে প্রতিহালি ডিমের গড় দাম ছিল ২৮ টাকা। ২০১৬ সালে এ দাম দাঁড়ায় ৩৪ টাকায়। ২০১৭ সালে আবার তা কমে ৩২ টাকায় নেমে আসে। সর্বশেষ গত জুন মাসের প্রথম দিকেও গড়ে প্রতিহালি ডিমের খুচরা দাম ছিল ২৪-২৫ টাকা। দাম কমে যাওয়ায় চলতি বছরের শুরু থেকেই খামার মালিকরা ন্যায্যদামের দাবিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে মার্চ মাসে প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় ডিম ভেঙ্গে ও মুরগি ছেড়ে দিয়ে প্রতিবাদও করেন ব্যবসায়ীরা। পোল্ট্রি ফিড, ওষুধের দাম কমানো, ব্যাংক ঋণের সুদ কমানো ও খামার মালিকদের প্রণোদনা দেয়ার দাবিও জানানো হয় সেই সময়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের এসব দাবি উপেক্ষিত হওয়ায় গত রোজার ঈদের পর থেকে একে একে বন্ধ হতে থাকে খামারগুলো।
×