ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

মীরসরাই ট্র্যাজেডির ৭ বছর আজ

এখনও কাঁদে সন্তানহারা বাবা-মা

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ১১ জুলাই ২০১৮

এখনও কাঁদে সন্তানহারা বাবা-মা

নিজস্ব সংবাদদাতা, মীরসরাই, চট্টগ্রাম, ১০ জুলাই ॥ পুত্রহারা পিতা-মাতার আর্তনাদ এখনও কানে বাজে। চোখের জল শুকিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছে অকালে সন্তানহারা স্বজনদের। গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে আদরের সন্তানকে খুঁজে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন অভাগিনী মা। ভেসে আসে কান্নার রোল। দেখতে দেখতে ৭ বছর পূর্ণ করল মীরসরাই ট্র্যাজেডি। এখনও ৪৫ ছাত্রের স্বজনের বুকফাটা আহজারিতে আবুতোরাবের আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠে। স্মৃতি বলতে শুধু ছবির ফ্রেমই রয়েছে। পুত্রহারা পিতা-মাতারা সেই ছবি নিয়ে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে আহজারি করতে থাকেন। আবার কখনও কখনও নীরব নিস্তব্ধ হয়ে একেবারেই নির্বাক। ট্র্যাজেডিতে নিহতদের বাড়িতে এক হৃদয়বিদায়ক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। আদরের সন্তানের স্মৃতি যেন কিছুতেই ভুলতে পারছেন না তারা। সান্ত¡না দিতে ছুটে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দৌজা চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, তৎকালীন এমপি বর্তমান গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনসহ বিদেশী প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। ১১ জুলাই মীরসরাই ট্র্যাজেডির ৭ বছর পূর্তি। সন্তান জন্ম নেয়ার পর অনেক বাবা-মা তাদের আদরের সন্তানের জন্মদিন পালন করে থাকেন। কাটা হয় কেক। আয়োজন করা হয়ে থাকে রকমারি খাবারের। কিন্তু কোন মা-বাবা কি আদরের সন্তানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে পারে? ২০১১ সালের ১১ জুলাই মীরসরাইয়ে ঘটেছিল তেমনি একটি ঝড়। যে ঝড় কেড়ে নেয় ৪৫টি তাজা প্রাণ। ঝড়ের কবলে পড়ে পিতার কাঁধে উঠেছিল আদরের সন্তানের লাশ। ট্র্যাজেডিতে নিহতদের বাড়িতে স্বজনদের খোঁজখবর নিতে গিয়ে এক হৃদয়বিদায়ক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। আদরের সন্তানের স্মৃতি যেন কিছুতেই ভুলতে পারছেন না তারা। ট্র্যাজেডিতে নিহত আনন্দ দাস, সাইদুল, নয়নশীল, ইফতেখার, কামরুলের হতভাগিনী মায়েরা সন্তানের ছবি বুকে নিয়ে এখনও পথ চেয়ে থাকেন, ছেলে বাড়ি ফিরবে মা বলে ডাকবে এ আশায়। মীরসরাই ট্র্যাজেডির ৭ বছরের পূর্ণ হওয়ায় স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক জাফর সাদেক বলেন, দুর্ঘটনায় আমাদের স্কুলের ৩৪ ছাত্র মারা গেছে। তাদের শূন্যতা কখনও পূরণ হবার নয়। এখনও মনে হচ্ছে তারা আমার আশেপাশে ঘুরাফেরা করছে। বিশেষ করে আবু সুফিয়ান, ধ্রুব নাথ ও কাজল নাথকে আমার খুব বেশি মনে পড়ছে। এরা তিনজনই খুব মিধাবী ছিল। সেদিন যা ঘটেছিল ॥ ১১ জুলাই ২০১১, সোমবার : মীরসরাই স্টেডিয়াম থেকে ফিরছিল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল ফাইনাল খেলা শেষে একটি মিনিট্রাকে বিজয়ী এবং বিজিত উভয় দলের খেলোয়াড় ও সমর্থকরা আবুতোরাব এলাকায় যাচ্ছিল। বড়তাকিয়া-আবুতোরাব সড়কের সৈদালী এলাকায় ৬০-৭০ শিক্ষার্থী নিয়ে ডোবায় উল্টে যায় মিনিট্রাকটি। ডোবার জল থেকে একে একে উঠে আসে লাশ আর লাশ। পরে সে লাশের রথ গিয়ে থামে পঁয়তাল্লিশে। অপরদিকে ছেলের মৃত্যু হয়েছে ভেবে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেলেন এক বাবা হরনাথ। সর্বশেষ ২০১১ সালের ২৪ নবেম্বর রাত ৯ টায় নয়নশীলের প্রয়াণ পর্যন্ত ৪৫টি মৃত্যু গুনতে হয়। সব মিলিয়ে ৪৫ জনের প্রাণের বিনিময়ে রচিত হয় মীরসরাই ট্র্যাজেডি। আবুতোরাব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৩ শিক্ষার্থী মীরসরাই ট্র্যজেডিতে প্রাণ হারায়। এ ছাড়া আবুতোরাব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩, প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজের ২, আবুতোরাব ফাজিল মাদ্রাসার ২ এবং আবুতোরাব এস এম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২ শিক্ষার্থী মারা যায় এই দুর্ঘটনায়। ৪৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ৮ ডিসেম্বর চালক মোঃ মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ উদ্দিনকে দুটি ধারায় মোট ৫ বছরের সশ্রম কারাদ- দিয়েছে আদালত। পরে সাজা ভোগ করে মুক্তি পায় সে। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মৃতিস্তম্ভ আবেগ ও অন্তিমে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান।
×