বিশ্বের সবচেয়ে ছোট কুকুরের ৪৯ ক্লোন

কাগজের ফটোকপি তো আমরা হরহামেশাই করি। কিন্তু প্রাণীর ফটোকপি? আমাদের পক্ষে সম্ভব না হলেও বিজ্ঞানীদের পক্ষে সম্ভব। বিজ্ঞানের ভাষায় তা ফটোকপির পরিবর্তে ‘ক্লোন’ হিসেবে পরিচিত। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকৃতির কুকুরটির নাম ‘মিরাকল মিলি’। জন্মের সময় মিলির ওজন ছিল এক আউন্সেরও কম এবং সে সময় এটিকে একটি চা চামচের মধ্যেই রাখা যেত; তাই ধারণা করা হয়েছিল এই ক্ষুদ্র কুকুরটি হয়ত বাঁচবে না। অথচ মিলির বর্তমান বয়স ৭ বছর এবং চিহুহুয়া প্রজাতির ক্ষুদ্রাকৃতির কুকুরটির আরও ৪৯টি ফটোকপি অর্থাৎ ‘ক্লোন’ তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকৃতির এই কুকুরের জিন থেকে অভিন্ন আরও ৪৯টি কুকুর তৈরি করে চমক সৃষ্টি করেছেন বিজ্ঞানীরা। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যকবার ‘ক্লোন’ হওয়া কুকুরের রেকর্ড গড়েছে মিলি। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কিসিমমির বাসিন্দা ভেনেসা সেমলার নামক ৩৮ বছর বয়সী মহিলার বাড়িতে জন্ম নিয়েছিল কুকুরটি। অতি ক্ষুদ্র কুকুরছানাটির জন্মের পর ভেনেসা দুই ঘণ্টা আই ড্রপার দিয়ে এটিকে খাওয়ান। ২০১২ সালে মিলিকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকৃতির জীবিত কুকুর হিসেবে গিনেজ বুক অব রেকর্ডসে ভূষিত করা হয়। এটির ওজন ১ পাউন্ডের সামান্য বেশি এবং লম্বায় মাত্র ১০ সেন্টিমিটার (৩.৮ ইঞ্চি); বলা যায় একটি আপেলের আকৃতির সমান। ফলে পুরো বিশ্বের নজর কাড়ে কুকুরটি। এত ক্ষুদ্রাকৃতির কারণ জানার জন্য কুকুরটির ‘ক্লোন’ তৈরি করতে কোরিয়ার সোয়াম বায়োটেক রিসার্স ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞানীরা ভেনেসাকে প্ররোচিত করেন। এটির বিশেষ জেনেটিক কোষ ব্যবহার করে হুবহু একই ধরনের আরও কুকুর তৈরি করার জন্য বিজ্ঞানীরা একটি ডোনার কুকুরের ডিম্বকোষে স্থাপন করেন। সেখান থেকে উন্নয়নশীল ভ্রুণ একটি সারোগেট কুকুরের গর্ভে স্থাপন করা হয়। গত বছরের আগস্ট মাসে মিলির প্রথম ক্লোনের জন্ম হয়। বর্তমানে ভেনেসার পরিবারে রয়েছে মিলির ১২টি ক্লোন কুকুর। এদের নাম রাখা হয়েছে- মলি, মালি, মেলি, মলি, মুমু, মিলা, মেরি, মিমি, মনি, মিনি, মেলা এবং মুলান। ভেনেসা পরিবারের মতে, ক্লোন কুকুরছানাগুলো মিলির মতো একই ব্যক্তিত্বের এবং দেখতেও একই রকম। তবে মিলির চেয়ে আকৃতিতে সামান্য বড়। গত মাসে ভেনেসা পরিবারকে ‘সর্বাধিক ক্লোন্ড কুকুর’র পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে দ্য এ্যাকাডেমি অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস। ভেনেসার স্বামী সেমলার কর্মরত রয়েছেন চিহুহুয়া প্রজাতির কুকুরের পালক হিসেবে। তিনি বলেন, ২০১২ সাল থেকে এখন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকৃতির কুকুরের বিশ্ব রেকর্ডের অধিকারী মিলি এবং বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ক্লোন হওয়া কুকুরও, যার ৪৯টি ক্লোন তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, শুরুতে সিদ্ধান্ত ছিল ১০টি ক্লোন তৈরি করা হবে। গবেষণার জন্য ৯টি এবং আমাদের জন্য ১টি। কিন্তু পরবর্তীতে আরও ক্লোন তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিশ্বের সবচেয়ে ছোট কুকুর হওয়ায় মিলিকে গবেষণার জন্য নির্বাচন করা হয়। বিজ্ঞানীরা দেখতে চেয়েছিলেন কেন সে এত ছোট এবং তারপর সেই জিনগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে, যা তাকে এত ছোট করে তুলেছে। সেমলার আরও বলেন, এটা খুব চমকপ্রদ যে, আমাদের পরিবারে মিলির ১২টি ক্লোন রয়েছে। তারা মিলির মতোই স্মার্ট, খেলাধুলায় ভাল এবং একই ব্যক্তিত্বের। আমরা তাদের ভালবাসি, তারা সবাই আমাদের পরিবারের শিশু। তিনি বলেন, ক্লোনগুলো মিলির মতো দেখতে হলেও আকারে কিছুটা ভিন্ন। তারা মিষ্টি এবং প্রেমময়। কিন্তু মিলি অনন্য। তারা দেখতে যদিও একই রকম। কিন্তু আমার মতে মিলির পুনরুৎপাদন কখনই করা যাবে না। ২০১১ সালে পুয়ের্তোরিকোর ডোরাডোতে মিলি যখন জন্মগ্রহণ করে তখন অস্বাভাবিক ক্ষুদ্রাকৃতির কারণে ধারণা করা হয়েছিল মিলি বেশিদিন বাঁচবে না। কিন্তু তার বেঁচে থাকাটা সত্যিই মিরাকল। মিরাকল মিলির বর্তমান ওজন ১.২ পাউন্ড এবং উচ্চতা ৩.৮ ইঞ্চি। -ডেইলি মেইল