ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যর্থ লাতিন আমেরিকা, অল ইউরোপিয়ান লড়াই

এবার সেমিফাইনালের যুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৯ জুলাই ২০১৮

এবার সেমিফাইনালের যুদ্ধ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ কোয়ার্টার ফাইনাল শেষ। ৪ দল ছিটকে গেছে, টিকে গেছে বাকি চার। স্বপ্নের বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালের দুয়ারে এখন টোকা দিচ্ছে ফ্রান্স-বেলজিয়াম ও ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া। ছন্দময়, শৈল্পিক ‘লাতিন ফুটবল’ তবে কি হারিয়ে যেতে বসেছে? ইউরোপিয়ানদের জয় জয়কার এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে। কারণ বিশ্বের সব অঞ্চল থেকে আসা মোট ৩২ দলের মধ্যে শুধু ইউরোপের চারটি দলই টিকে আছে বিশাল রাশিয়ার বিশ্বকাপ মঞ্চে। সেমিফাইনালের ‘অল ইউরোপিয়ানে’ সেমির মোকাবেলা শুরু হবে ১০ জুলাই মঙ্গলবার। সেন্ট পিটার্সবার্গের ক্রেস্টোভস্কি স্টেডিয়ামে রাত ১২টায় ফ্রান্স-বেলজিয়াম এবং বুধবার একই সময়ে মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি হবে স্বপ্নের ফাইনালে ওঠার জন্য। লাতিন ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বে কুঠারাঘাত করে এগিয়ে গেল আরেকবার ইউরোপিয়ান দলগুলো। এর মধ্যে শুধু বেলজিয়াম দ্বিতীয়বার সেমিফাইনাল খেলবে। বাকি তিন দলের মধ্যে ক্রোয়েশিয়া ১ বার (১৯৯৮), ইংল্যান্ড দুইবার (১৯৬৬, ১৯৯০) এবং ফ্রান্স সর্বাধিক ৫বার (১৯৫৮, ১৯৮২, ১৯৮৬, ১৯৯৮ ও ২০০৬) শেষ চারে খেলেছে। তবে এবার চারটি দলই শিরোপা জিততে আত্মবিশ্বাসী। ১৯৩০ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ ফুটবল আসর অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সেই আসরেই ‘অল লাতিন’ ফাইনাল হয়েছিল উরুগুয়ে-আর্জেন্টিনার মধ্যে। পরের বছরই ‘অল ইউরোপিয়ান’ ফাইনালই শুধু নয়, ইউরোপের চারটি দল খেলেছিল সেমিফাইনাল। তবে লাতিন ফুটবল সবসময়ই ইউরোপীয় ফুটবলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। তবে ইউরোপিয়ানরা বিশ্বকাপ সাফল্যে এগিয়ে। এবার ২১তম বিশ্বকাপ আসর। এর মধ্যে ইউরোপের চারটি দলই শেষ চারে এর আগে পর্যন্ত খেলেছে ৪ বার। ১৯৩৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ আসরে প্রথমবার সেমিতে ওঠে চারটি ইউরোপিয়ান দল। এছাড়া ১৯৬৬, ১৯৮২ ও ২০০৬ সালে একই ঘটনা দেখা গেছে। ১২ বছর পর আবারও ইউরোপের চার দল খেলবে সেমিফাইনালে। তবে একই সঙ্গে চারটি লাতিন দল কখনই বিশ্বকাপের শেষ চারে উঠতে পারেনি। এমনকি দুটি লাতিন দলের মধ্যে ফাইনাল শুধু ১৯৩০ (উরুগুয়ে-আর্জেন্টিনা) ও ১৯৫০ (উরুগুয়ে-ব্রাজিল) সালেই দেখা গেছে। কিন্তু দুটি ইউরোপিয়ান দলের মধ্যে ফাইনাল হয়েছে ৮টি (১৯৩৪, ১৯৩৮, ১৯৫৪, ১৯৬৬, ১৯৭৪, ১৯৮২, ২০০৬ ও ২০১০। এ কারণেই শিরোপা জেতার দিক থেকে ইউরোপীয় দলই এগিয়ে। লাতিন দেশগুলো শিরোপা জিতেছে ৯ বার, আর ইউরোপিয়ান দেশগুলোর দখলে আছে ১১ শিরোপা। এবার সেই ব্যবধান নিশ্চিতভাবেই বাড়বে। এবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই লাতিন দেশগুলোর বিশ্বকাপ যাত্রায় সমাপ্তি এসেছে। এ থেকে একটি ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, ফুটবল শক্তিতে লাতিন আমেরিকার চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে ইউরোপ। প্রায় প্রতি বিশ্বকাপেই একটি করে নতুন শক্তির উত্থান ঘটছে ইউরোপ থেকে, তেমনটা দেখা যাচ্ছে না লাতিন অঞ্চলে। শুধু ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইউরোপের সঙ্গে ফুটবল শ্রেষ্ঠত্ব দখলের জন্য। এবার নতুন পরাশক্তি হিসেবে যোগ হয়েছে বেলজিয়াম। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে সেরা সাফল্য হিসেবে তারা দ্বিতীয়বার উঠে এসেছে সেমিতে। কোয়ার্টারে তারা অন্যতম হট ফেবারিট ব্রাজিলকে বিদায় করে দিয়েছে। এবার তাই দলের কোচ রবার্তো মার্টিনেজ দারুণ আশাবাদী তার দল নিয়ে, ‘এই ছেলেরা এখন বেলজিয়ামের নায়ক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। কৌশলগত প্রয়োগের ক্ষেত্রে তারা অসাধারণ ছিল। এটা খুবই বিশেষ এক ধরনের অনুভূতি এবং আমরা কোনভাবেই বেলজিয়ামের মানুষকে নিরাশ করতে পারি না।’ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে একবার ফাইনাল খেলে রানার্সআপ হয়েছিল বেলজিকরা ১৯৮০ সালে, আর ১৯৮৬ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলেছিল। দেশের ফুটবল ইতিহাসে এ দুটিই বড় সাফল্য তাদের। এবার সেটিকে পেরিয়ে যেতে চায় বেলজিকরা। আর ক্রোয়েশিয়া ১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলেই সেমিতে ওঠে, শেষ পর্যন্ত তৃতীয় হয়ে বিদায় নেয়। এবার দলের অন্যতম খেলোয়াড় ইভান রাকিটিচ বলছেন, ‘আমরা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি এবং সেমি পেরিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা নিজেদের সর্বোচ্চটাই দেব। আমি মনে করি ক্রোয়েশিয়ার মতো দেশের জন্য এটা খুবই ঈর্ষণীয় ব্যাপার এবং আমরা এমনটা চালিয়ে যেতে চাই অনেকদূর পর্যন্ত। আমরা ১৯৯৮ সালে কি ঘটেছিল সেটা নিয়ে ভেবে বাড়তি চাপে পড়তে চাই না।’ আর ফ্রান্সের জন্য এটি ষষ্ঠবার শেষ চারের লড়াই। সেদিক থেকে অভিজ্ঞতম দল তারা সেমিতে। একবারই মাত্র ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জেতা দলের সদস্য দিদিয়ের দেশম এখন কোচ হিসেবেও স্বপ্ন দেখছেন শিরোপা জেতার। সেটা তিনি করতেই পারেন। কারণ দুই লাতিন পরাশক্তি আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়েকে যথাক্রমে দ্বিতীয় রাউন্ড ও কোয়ার্টার ফাইনালে বিদায় করে দিয়েছে ফরাসীরা। দেশম বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য শিরোপা জয়। এ জন্য আমাদের দুটি ম্যাচ উতরে যেতে হবে। তাই ঐ দুটি ম্যাচই আমাদের কাছে ফাইনাল।’ ১৯৬৬ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ২৮ বছর পর সেমিতে আবার শেষ চারে উঠেছে। কোচ গ্যারেথ সাউথগেট তাই দারুণ সন্তুষ্ট। আনন্দ-অনুভূতিতে ভাসছেন গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ডও। বেশ কিছু গোলও বাঁচিয়েছেন তিনি শেষ আটের লড়াইয়ে। সেই পিকফোর্ড জানিয়েছেন, ‘ইংল্যান্ড শেষবার যখন সেমিফাইনাল খেলেছিল তখন আমার জন্মই হয়নি। তবে আমরা সবসময়ই বলে এসেছি একটি কথা। একটি খেলাই একটি নির্দিষ্ট সময়ে খেলব। একই সঙ্গে নিজেদের ইতিহাসও গড়ে ফেলব।’
×