ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ৭ জুলাই ২০১৮

 শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ

সময়টা এখন বর্ষাকাল। সাধারণত এ সময়ে কৃষকের হাতে তেমন কোন কাজ থাকে না। ইরি-বোরো আবাদের পর এখন সব জমিই পানির নিচে। কৃষকের হাতে তেমন কোন কাজ নেই। কিন্তু তাই বলে কি বসে বসে খেলে চলবে? জমানো টাকা পয়সা বসে বসে খেয়ে শেষ করে ফেললে ভবিষ্যতের কি অবস্থা হবে? এরকম চিন্তা চেতনা থেকে শাপলা বিক্রি করে এখন জীবিকা নির্বাহ করছে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শতাধিক পরিবার। কৃষি জমি পানির নিচে থাকায় এ মৌসুমে কৃষকের তেমন কোন কাজ নেই। তাই এলাকার অনেক কৃষক বর্তমানে এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। এ পেশায় কোন পুঁজির প্রয়োজন না হওয়ায় বিভিন্ন বয়সের লোক এ পেশায় অংশ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। শাপলা সাধারণত তরকারি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর সিরাজদিখানের এই শাপলাকে কেন্দ্র করে এখানে এখন গড়ে উঠেছে শাপলা বিক্রির পাইকারি আড়ৎ। জাতীয় ফুল শাপলা। এটি দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি তরকারি হিসেবে খেতেও সুস্বাধু। কেউ খায় সখ করে, আবার কেউ খায় অভাবে পড়ে। অভাবগ্রস্ত বা নিতান্ত গরিব লোকজন এ বর্ষা মৌসুমে জমি থেকে শাপলা তুলে তা দিয়ে ভাজি বা ভর্তা তৈরি করে আহার করে থাকেন। আর শহরে লোকজন শখের বসে এ মৌসুমে অন্তত ২-৪ দিন শাপলা তরকারি বা ভাজি খেয়ে থাকেন। এ বর্ষায় সিরাজদিখান উপজেলার ডুবে যাওয়া বিভিন্ন ইরি, আমন ধান ও পাট ক্ষেতে শাপলা ব্যাপকভাবে জন্মিয়েছে। এছাড়াও এলাকার ইছামতি খালের বিলের পানিতেও শাপলা ফুল ফুটেছে সৌন্দর্য আর নয়নাভিরাম দৃশ্য নিয়ে। শাপলা ফুল সাধারণত আষাঢ় মাস থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। তবে মৌসুমের শেষ অর্থাৎ কার্তিক মাসে তেমন বেশি পাওয়া যায় না। এ সময় এলাকার শাপলা সংগ্রহকারী কৃষকেরা ভোর বেলা থেকে নৌকা নিয়ে ডুবে যাওয়া জমিতে ও বিলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে শাপলা সংগ্রহ করতে শুরু করে এবং শেষ করে দুপুরের দিকে। শুধু কৃষকই নয়, বাবা-মায়ের সঙ্গে অল্প বয়সী সন্তানরা আসে এ শাপলা কুড়াতে। এতে বাবা মার আয়টা একটু হলেও বেশি হয়। নদী থেকে শাপলা সংগ্রহকারী মোশারফ হোসেন জানান, এ সময়ে একেক জনে কমপক্ষে ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ মোঠা (৭০ থেকে ৮০পিছ শাপলায় ১ মোঠা ধরা হয়) শাপলা সংগ্রহ করতে পারে। পাইকাররা আবার সংগ্রহকারীর কাছ থেকে এসব শাপলা সংগ্রহ করে একত্রে করে। সিরাজদিখানের রসুনিয়া, ইমামগঞ্জ ও তালতলায় শাপলার পাইকারি ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। পাইকাররা এখান থেকে শাপলা ক্রয় করে নিয়ে পরে রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারে বিক্রি করে থাকে। উপজেলার রসুনিয়া ইউনিয়নের আরিয়ান অনিক জানান, শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার আটি বা মোঠা শাপলা ক্রয় করে থাকে পাইকাররা। সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে এক আটি (১৫ থেকে ২০টি আটি) শাপলা ১০ টাকা দরে ক্রয় করে। তারপর গাড়ি ভাড়া গড়ে ৩ টাকা, লেবার ১ টাকা, আড়তদাড়ি খরচ ২ টাকাসহ মোট ১৭ থেকে ১৮ টাকা খরচ পড়ে। যাত্রাবাড়ী আড়তে এ শাপলা বিক্রি করে ২৫ থেকে ২৭ টাকা করে আটি বা মোঠা। শাপলা তরকারি হিসেবে খুবই মজাদার একটি খাদ্য। গত কয়েক বছর যাবত এ ব্যবসাটি এলাকায় বেশ প্রসার লাভ করেছে। এ থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে এখন অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে সংসার চালাচ্ছেন। -মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ থেকে
×