ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন ও সড়ক উন্নয়নে দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০২:৫৬, ৭ জুলাই ২০১৮

খুলনা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন ও সড়ক উন্নয়নে  দেড় হাজার কোটি  টাকার প্রকল্প

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন ও সড়ক উন্নয়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার দুটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। মঙ্গলবার (৩ জুলাই) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ যাচাই-বাছাই কমিটির সভায় প্রকল্প দুটি অনুমোদন দেয়া হয়। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বেই তালুকদার আব্দুল খালেকের চেষ্টায় প্রকল্প দুটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছে। এখন তা পরিকল্পনা কমিশনে যাবে। সেখানে যাচাই-বাছাই শেষে একনেকের বৈঠকে উঠবে। আশা করা হচ্ছে শীঘ্রই প্রকল্প দুটি একনেক সভায় অনুমোদন লাভ করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৫ মে অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক তার নির্বাচনী ইশতেহারে নগরবাসীকে কথা দিয়েছিলেন মেয়র নির্বাচিত হলে নগরীর অন্যতম সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসন ও সড়কের উন্নয়ন করবেন। তারই অংশ হিসেবে কেসিসির নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বেই খুলনাবাসীকে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য তৎপর হয়েছেন। তার (মেয়র) সার্বিক দিক নির্দেশনায় সম্প্রতি খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) কর্তৃক ৮৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কেসিসির জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প’ এবং ৬০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘খুলনা সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও ধ্বংসপ্রাপ্ত রাস্তা মেরামত ও উন্নয়ন’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। গত ২৭ জুন প্রকল্প দুটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। এ সময় নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক উপস্থিত ছিলেন। মেয়রের হস্তক্ষেপেই প্রকল্প জমা দেয়ার মাত্র ৬ দিন পর অভ্যন্তরীণ যাচাই-বাছাই কমিটির সভা আহ্বান করা হয় এবং কোন ধরনের কাটাছেঁড়া ছাড়াই প্রকল্প দুটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কেসিসির ইতিহাসে এ দুটিই সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এর আগে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছিল। সেটিও ইতোপূর্বে তালুকদার আব্দুল খালেক মেয়র থাকাকালে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন পাওয়া প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার বলছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা। সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন পাওয়া কেসিসির সড়ক মেরামত প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের ৫১৩টি এবং কেন্দ্রীয়ভাবে ৬০টিসহ মোট ৫৭৩টি সড়ক মেরামত করা হবে। আর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় ময়ূর নদীসহ গুরুত্বপূর্ণ ৯টি খাল খনন করে পাড় বাঁধাই করা হবে। নগরীর পানি নিষ্কাশনের জন্য ৮টি সøুইস গেট পুনর্নির্মাণ করা হবে। এছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৯টি প্রধান সড়কের দুপাশে ৬২ কিলোমিটার বড় ড্রেন এবং ১২৮ কিলোমিটার এলাকায় ছোট ড্রেন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ময়ূর নদীর ওপর ৩টি ঝুলন্ত সেতু নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে। এ ব্যাপারে নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, খুলনাবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করব। জলাবদ্ধতা থেকে খুলনাবাসীকে মুক্ত করব। এই প্রকল্প তারই একটি অংশ। আশা করি একনেকেও এ প্রকল্প পাস হবে। তিনি বলেন, খুলনা অঞ্চলের উন্নয়নে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই আন্তরিক। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় খুলনাবাসীর সমস্যা দূরীকরণ ও উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করতে তিনি সক্ষম হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এদিকে নগরবাসীর প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসন এবং ভাঙ্গাচোরা রাস্তা মেরামত ও উন্নয়নে কেসিসির সর্ববৃহৎ দুটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন পাওয়ায় খুলনাবাসী সন্তোষ প্রকাশ করেছে। নাগরিক নেতা বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের আগেই নবনির্বাচিত মেয়রের তৎপরতা খুবই প্রশংসিত। বিশাল অঙেঙ্কর দুই প্রকল্প অতি অল্প সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন করিয়ে আনা প্রত্যাশার চেয়ে বড় প্রাপ্তি। প্রকল্প দুটি একনেক সভায়ও অনুমোদন লাভ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে এই নাগরিক নেতা বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি খুলনাসহ এতদাঞ্চলের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি রয়েছে। আশা করছি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের সহযোগিতা নিয়ে নগরীর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং নাগরিক জীবনের নানা সমস্যা ধাপে ধাপে নিরসন করতে সক্ষম হবেন। উল্লেখ্য, গত ১৫ মে অনুষ্ঠিত কেসিসি নির্বাচনে তালুকদার আব্দুল খালেক বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হন। বৃহস্পতিবার তিনি মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান। এদিকে বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্বে আছেন। এর পর তালুকদার আব্দুল খালেক মেয়রের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন।
×