ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ॥ বিস্ফোরক আইনে মামলার রায় শীঘ্রই

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২ জুলাই ২০১৮

  ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ॥ বিস্ফোরক আইনে মামলার রায় শীঘ্রই

বিকাশ দত্ত ॥ স্পর্শকাতর ও বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শীঘ্রই শেষ হবে বলে আশা করছেন রাষ্ট্রপক্ষের চীফ প্রসিকিউটর। মামলাটি এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আসামিপক্ষে যুক্তিতর্কের জন্য পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হযেছে আগামী ৩, ৪ ও ৫ জুলাই। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষ ২৫ দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন, আর আসামিপক্ষ ৯০ দিন। এখনও তাদের যুক্তিতর্ক চলছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেছেন , মামলাটি প্রায় শেষের দিকে। রাষ্ট্রপক্ষ ২২৫ সাক্ষী দিয়েছে। সাক্ষীরা আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন। আশাকরি শীঘ্রই এ মামলার রায় হতে পারে। আসামিপক্ষ এ মামলায় আইনে প্রদত্ত সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন। তবে আসামিপক্ষ ন্যায়বিচারকে বিলম্বিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিচারপ্রার্থী মানুষ এবং দেশের জনগণ অধিক সময় অধীর আগ্রহে দিন কাটাচ্ছেন সেটা অচিরেই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে পরিসমাপ্তি ঘটবে। অপরদিকে আসামিপক্ষে আইনজীবী এ্যাডভোকেট আবদুস সোবহান তরফদার জনকণ্ঠকে বলেন, এখন যুক্তিতর্ক চলছে। এই মামলাটি ট্রায়ালে থাকা অবস্থায় কিছু বলতে পারব না। রাষ্ট্রপক্ষের সময়ক্ষেপণের বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, আসামিপক্ষের কথা বলতে গিয়ে যদি সময়ক্ষেপণ হয় তা হলে বলার কিছু নেই। ১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক শেষ করেন। ওই দিন চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তিতর্কে বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হতাহতের ঘটনায় আনা মামলার তারেক-বাবরসহ ৪৯ আসামির সর্বোচ্চ সাজা দাবি করা হয়েছে। চীফ প্রসিকিউটর আদালতে বলেন, মামলার সকল আসামির বিরুদ্ধে আনীত অপরাধ স্বতন্ত্র, নিঃস্বার্থ, দালিলিক ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষীদের দ্বারা দেয়া সাক্ষ্যে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। ‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিচারপ্রার্থী মানুষের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে আইনের বিধানের আলোকে আসামিদের প্রত্যেককে সর্বোচ্চ সাজা প্রার্থনা করছি। রাষ্ট্রপক্ষে থেকে জানা গেছে, আসামিপক্ষের আইনজীবীগণ পর্যাপ্ত জেরা করেছে। কোন কোন সময় অপ্রয়োজনীয় অপ্রাসঙ্গিক জেরাও করেছে। আসামিপক্ষ ৫ বার হাইকোর্টে গিয়েছে। সেখানে ২৯২ কার্যদিবস ব্যয় হয়েছি। এই মামলায় আসামি সংখ্যা বেশি সাক্ষীদের সংখ্যাও বেশি। অন্যান্য সমসাময়িক চাঞ্চল্যকর মামলায় আসামিদের অনেকেই সম্পৃক্ত ছিল ফলে তারা কোন সময় কেউ কেউ সিলেটে হয়রত শাহজালাল (র) মাজারে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপরে গ্রেনেড হামলা মামলায় আসামি গিয়েছে। চট্টগ্রাম ১০ ট্রাক অস্ত্র চালান মামলা, গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রচেষ্টা মামলা, রমনা বোমা হামলা মামলা, সিপিবি সমাবেশে বোমা হামলা ও আইসিটি মামলার আসামি। তখন এই দুটি মামলায় (হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের ২৯/১১ হত্যা), ও ৩০/১১ (বিস্ফোরক) ) এতে সময় ব্যয় হয়েছে। আলোচিত এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। মামলাটি এরপর যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)। ২০০৮ সালের ১১ জুন মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে এই মামলাটির তদন্ত ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠে, যা পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে। ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। মামলাটি তদন্তের ভার পান সিআইডির পুলিশ সুপার আব্দুল কাহ্হার আখন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন। তবে মামলায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গী নেতা মুফতি হান্নান ও জেএমবির সদস্য শহিদুল আলম বিপুলের মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ায় তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। এখন আসামির সংখ্যা ৪৯, যাদের মধ্যে তারেক রহমানসহ পলাতক রয়েছেন ১৮ জন। এছাড়া জামিনে রয়েছেন আটজন ও কারাগারে ২৩ জন। বাকি ১৮ পলাতক আসামির অনুপস্থিতিতেই বিচার কাজ চলছে।
×