ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে চিকিৎসায় অবহেলায় শিশু মৃত্যু- মামলা নিচ্ছে না পুলিশ

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২ জুলাই ২০১৮

 চট্টগ্রামে চিকিৎসায় অবহেলায় শিশু মৃত্যু- মামলা নিচ্ছে না পুলিশ

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে সাংবাদিকের মেয়ে রাইফা খানের (৩) মৃত্যুর ঘটনায় মামলা নিতে চায় না পুলিশ। দায়িত্বহীনতার মৃত্যুকে পুলিশ স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালিয়ে দিতে চায় বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ভুল চিকিৎসায় মেয়ের মৃত্যুর কারণ তদন্ত করতে নারাজ পুলিশ। বরং সমঝোতার কথা বলে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে আইনী বিষয় এড়িয়ে গেছে পুলিশ। নগরীর মেহেদীবাগের ম্যাক্স হাসপাতাল থেকে কর্তব্যরত চিকিৎসকসহ তিন জনকে আইনের কাছে সোপর্দ করায় মনক্ষুণ্ণ হয়েছেন চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অফিসার ইনচার্জ)। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকেও এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। এমনকি, তিনি ডাক্তারের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেছেন সাংবাদিক নেতারা জোর করে ম্যাক্স হাসপাতালের ডাক্তারসহ তিনজনকে পুলিশের গাড়িতে তুলে দিয়েছেন। এমনকি অসাধু ডাক্তারের পক্ষ নিয়ে ঘটনার দিন রাতে উল্টে ক্ষতিগ্রস্তদের শাসিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, ঘটনার ৩দিন পার হলেও পুলিশ এ ঘটনায় কোন মামলা বা জিডি না নেয়ার পেছনে কোন উৎকোচ লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে কিনা। মামলা না নেয়ার ঘটনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, চকবাজার থানার ওসি জনকণ্ঠকে বলেন, সাংবাদিকরা জোর করে ম্যাক্স হাসপাতালের ডাক্তারসহ তিন জনকে পুলিশের গাড়িতে তুলে দিয়েছেন। কোনভাবেই তাদের আটক করা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হলে আটক বলা যাবে না। দায়িত্বপালনকালে হাসপাতাল থেকে কোন ব্যক্তিকে থানায় নেয়ার নিয়ম নেই। রাইফা মৃত্যুর ঘটনায় দৈনিক সমকালের সাংবাদিক রুবেল খান জানান, একমাত্র শিশু রাইফার ঠান্ডা লেগে গলা ব্যথা শুরু হয়। গলা ব্যথার কারণে তাকে আর কোন কিছু খাওয়ানো যাচ্ছিল না। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে মেহেদীবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাতে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে এ্যান্টিবায়োটিক দিলে রাইফার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হয়। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়কে আনা হয়। পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ানোর পর উল্টো রাইফার খিচুনি শুরু হয়। এবার আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বিষয়টি হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তার দেবাশীষকে জানানো হয়। তিনি ডাক্তার বিধানের সঙ্গে রাইফার শারীরিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেন। সে অনুযায়ী খিচুনি কমাতে এবার রাইফার শরীরে সেডিল নামের একটি ইনজেকশন দেয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর খিচুনি বন্ধ হলে রাইফার দেহ নিথর হয়ে যায়। ডাক্তাররা ভুল চিকিৎসা ও অবহেলা করে আমার সন্তানকে হত্যা করেছে। এ বিষয়টি কয়েক সাংবাদিক ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নে জানানো হয়। ঘটনা জানানোর পরপরই ঘটনাস্থলে সাংবাদিকরা উপস্থিত হলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামলা করতে চাওয়া হলে চকবাজার থানার ওসি মামলা নিতে অস্বীকার করেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন চকবাজার থানায় পৌঁছে মামলা না নিতে ও চট্টগ্রামে চিকিৎসা ব্যবস্থা অচল করে দেয়ার হুমকি প্রদর্শন করে। শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন, একজন ডাক্তার ও একজন সাংবাদিককে সদস্য করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি পাঁচ দিনের মধ্যে তথা বুধবার তদন্ত রিপোর্ট জনা দেয়ার কথা রয়েছে। রবিবার কমিটির সদস্যরা নিহত রাইফার বাবা ও মায়ের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। ৩ সদস্যের কমিটি ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাফিদা খান রাইফা নামের আড়াই বছরের এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। শিশুটির মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চিকিৎসায় কোন অবহেলা ছিল কিনা তা সরেজমিনে দেখার জন্য এই কমিটি গঠন করা হয়। রবিবার পাঠানো স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। কমিটির প্রধান স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ( হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডাঃ কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ পবিত্র কুমার সরকার এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ শেখ মনজুর রহমান। কমিটি সাত দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দেবে। উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন মধ্যরাতে চট্টগ্রাম মহানগরীর মেহেদিবাগে অবস্থিত একটি বেসরকারী হাসপাতালে (ম্যাক্স হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভুল চিকিৎসায় শিশু রাফিদা খান রাইফার মৃত্যুর অভিযোগ করেন তার মাতা-পিতা। শিশু রাইফা খান দৈনিক সমকাল পত্রিকার চট্টগ্রাম অফিসের স্টাফ রিপোর্টার রুবেল খানের মেয়ে।
×