ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর জন্ম দিনে আনন্দ আয়োজন

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৪ জুন ২০১৮

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর জন্ম দিনে আনন্দ আয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুমাত্রিক পরিচয়ের এক কীর্তিমান মানুষ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। একাধারে শিক্ষাবিদ, লেখক, প্রাবন্ধিক, সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ও সমাজ-চিন্তক। এ ছাড়াও বাক্স্বাধীনতা, মানবিক অধিকার, পরিবেশ সুরক্ষা, দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার বিষয়ক আন্দোলনেও রয়েছে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা। শনিবার ছিল বরেণ্য এই ব্যক্তিত্বের ৮২তম জন্মবার্ষিকী ও ৮৩তম জন্মদিন। শুভাকাক্সক্ষীদের ভালবাসায় আনন্দ আয়োজনে উদ্্যাপিত হলো সকলের প্রিয় মানুষটির জন্মদিন। জন্মদিনের এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সমাজ-রূপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্র। বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন উচ্চতর মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বিশেষ আগ্রহের বিষয় ‘সমাজ পরিবর্তনে আমরা কী করতে পারি’ শিরোনামে জন্মদিন উপলক্ষে ছিল মতবিনিময় অনুষ্ঠান। এ বিষয়ে কথা বলেন প্রাবন্ধিক-সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ, ডাঃ জাফরউল্লাহ চৌধুরী, নিউ এইজ সম্পাদক নুরুল কবীর, বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সমকালের উপ-সম্পাদক আবু সাঈদ খান, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আবদুল মান্নান চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি প্রমুখ। এ ছাড়া জন্মদিনে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে ভালবাসা জানিয়েছেন তার দীর্ঘদিনের বন্ধু, সহকর্মী, ছাত্রছাত্রী, রাজনীতিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গন, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ও সংগঠন। তাকে নিয়ে আলাপনে বক্তারা বলেন, ক্ষয়ে যাওয়া একটি সমাজে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী একক অনন্য মানুষ। তিনি তার লেখনী ও দর্শন দিয়ে সমাজ পরিবর্তনের রূপরেখা উপস্থাপন করেছেন। আর তিনি নিজে জন্মদিনে সবাইকে পুঁজিবাদের বৃত্তকে ভাঙ্গার আহ্বান জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই চারণ সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীদের কণ্ঠে হয় দুইটি গান। জন্মদিনের অনুভূতি ব্যক্ত করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা একটা বৃত্তের মধ্যে রয়েছি। এ বৃত্ত পুঁজিবাদের বৃত্ত। এ বৃত্তকে ভাঙতে হবে। এতদিন ভেবেছিলাম, এ বৃত্তকে অতিক্রম করতে হবে। আসলে ভুল ভেবেছিলাম। এই ভূমিতে দাঁড়িয়ে আমরা মুক্তিসংগ্রাম করেছি। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পর ভেবেছিলাম, আমাদের মুক্তি এসে গেছে। আসলে আসেনি। আমরা পুরনো রাষ্ট্র ভেঙ্গে নতুন রাষ্ট্র গড়েছি। কিন্তু পুরনো রাষ্ট্রের আইন, নীতি ও বাহিনী সবাই রয়ে গেল। তাদের সংস্কৃতি আমাদের ওপরে আধিপত্য করছে। বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি আসেনি। এসেছে পুঁজিবাদের মুক্তি। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, আমাদের কাছ থেকে লুণ্ঠন করে ইউরোপে শিল্প বিপ্লব হয়েছে। পাকিস্তান আমাদেরকে লুণ্ঠন করেছে। আমরা হতদরিদ্র হয়েছি। এই সময়েও লুণ্ঠন চলছে। একাত্তরে গণধর্ষণ করেছে হানাদার বাহিনী, এখন করছে বাংলাদেশের সন্ত্রাসী ও দুর্বত্তরা। হানাদার বাহিনী শিশুদের ধর্ষণ করেনি, এখন শিশুরাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের এখন উচিত ব্যক্তি মালিকাধীনদের হটিয়ে সামাজিক মালিকাধীন পৃথিবী আনতে হবে। আমরা যারা সমাজ বদলাতে চাই, তাদের জ্ঞান ও নৈতিকতার ক্ষেত্রে অগ্রসর হতে হবে। অন্যায় ব্যবস্থা ভাঙতে হলে জ্ঞান ছাড়া সম্ভব নয়। সেই জ্ঞান হচ্ছে, পৃথিবীকে বোঝা ও প্রয়োগের জ্ঞান। এই জ্ঞান বুর্জোয়াদের থেকে উন্নত হতে হবে। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী একজন মানুষ। যার চিন্তাধারা, আদর্শ আমাদের সমাজ ও জাতিকে গত ৬০ বছর ধরে পথ দেখিয়ে আসছে। তার অনেক পরিচয়ের উর্ধে শিক্ষক পরিচয়টি অনেক বড়। তিনি জাতীয় অধ্যাপক না হলেও, তিনি জাতির শিক্ষক। তিনি একজন রাষ্ট্রগুরু। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে ‘জীবিত আরজ আলী মাতব্বর’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে জাফরউল্লাহ চৌধুরী বলেন, তাকে সক্রেটিসও বলা যায়। তার জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও সাহস, তা আমাদের সকলের জন্য অনুসরণীয়। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সরাসরি ছাত্র নুরুল কবীর বলেন, তিনি শিক্ষক ছিলেন, দোকানদার ছিলেন না! শিক্ষাকে তিনি পণ্য মনে করতেন না। তিনি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থীদের শিক্ষক নন, তিনি এর বাইরেও অনেকের শিক্ষক। প্রবন্ধের ধারাকে আড়ষ্টতা থেকে বের করে এনেছেন। তিনি যে শতাধিক গ্রন্থ লিখেছেন, সেগুলো যদি কেউ মস্তিষ্কে ধারণ করে, তাহলে সমাজ পাঠের ও সমাজ পরিবর্তনের সকল দিক উন্মোচিত হবে। আবু সাঈদ খান বলেন, সমাজকে যারা পরিবর্তন করতে চায়, তিনি তাদেরকে পথ দেখিয়েছেন তার কর্মকা- ও নিরলস লেখনীর মধ্য দিয়ে। তিনি রাজপথেও নেমে এসেছেন এবং নেতৃত্ব দিয়েছেন। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানায় সিপিবি, বাসদ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, দৈনিক সমকালের পক্ষে উপ-সম্পাদক আবু সাঈদ খান ও অজয় দাশগুপ্ত, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, প্রকাশনা সংস্থা বাতিঘর, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণসংহতি আন্দোলন, প্রগতি লেখক সংঘ, সাপ্তাহিক একতা, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ছাত্র ঐক্য ফোরাম, ছাত্র ফেডারেশনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। চারুকলায় বাহারি বনসাই প্রদর্শনী ॥ ছোট্ট একটি গাছ। সবুজ পাতার ফাঁক গলে উঁকি দিচ্ছে লালচে করমচা। একই আকারের আরেকটি ছোট গাছে ঝুলে রঙ্গন ফুল। আকারে ছোট অথচ বয়সে পরিণত বৃক্ষগুলো দারুণ নজরকাড়া। এমন রকমারি ফুল, ফুল ও পাতা বাহার গাছ শোভা পাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে। এখানে চলছে লায়লা আহ্মেদের একক বনসাই প্রদর্শনী । শনিবার বৃষ্টিঝরা সকালে মায়াবী বনসাইয়ের আয়োজনে সপ্তাহব্যাপী এই প্রদর্শনীর সূচনা হয়। প্রদর্শনীর উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় অতিথিদের কথনে উঠে আসে শিল্পের ভুবনে বৃক্ষপ্রেমের কথা। সংক্ষিপ্ত আলোচনায় নিসর্গবিদ বিপ্রদাশ বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য, সমকালের নির্বাহী সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি ও সাংবাদিক প্রভাষ আমিন। আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন তরুপল্লবের সাধারণ সম্পাদক মোকাররম হোসেন। বিপ্রদাশ বড়ুয়া বলেন, মানুষ সবকিছুকে জয় করতে চায়। সেজন্য ছুটে গেছে অন্তরীক্ষেও। তেমনিভাবে বিশালাকৃতির গাছকে বনসাইয়ে রূপান্তরিত করে ঘরের টেবিলেও নিয়ে এসেছে। শিল্পী লায়লা আহ্মেদ ছাদে বাগান করতে করতে বনসাই শিল্পী হয়েছেন। সমর্থনের পাশাপাশি তাকে সাহস জোগাতে হবে, যাতে আরও অনেকে এগিয়ে আসেন। শিশির ভট্টাচার্য বলেন, যারা বৃক্ষকে ভালবাসেন, তারা জীবনকে ভালবাসেন। যে বড় বৃক্ষই হোক, আর বনসাই হোক। এ ধরনের আয়োজনের জন্য শিল্পীকে ধন্যবাদ। কারণ, তার কাছ থেকে অনেকেই অনুপ্রেরণা পাবেন। মুস্তাফিজ শফি বলেন, বনসাই নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু সেটি ছাপিয়ে বনসাই এখন জনপ্রিয় হয়েছে। বিশাল গাছের ডালপালাকে কলমে রূপান্তর করেও বনসাই করা সম্ভব। অনেক গাছকেই প্রাকৃতিকভাবে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন, সেগুলোকে বনসাই করে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। এ সময় তিনি জোর করে বনসাই না করার জন্য বনসাইশিল্পীদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে বাহারি গড়ন ও প্রজাতির শতাধিক বনসাই। চাইলেই বৃক্ষপ্রেমীরা সংগ্রহ করতে পারবেন এসব বনসাই। মাত্র এক হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে নয়নজুড়ানো গাছগুলো। গ্যালারি জুড়ে ছড়িয়ে আছে কামিনী, রঙ্গন, অশ্বথ, বট, চায়না বট, পাকুর, চেরি, তেঁতুল, হিজল, করমচা, শেওড়া, ফাইকাস, ফুকেনটি, জুনিপার, সাফেলারা, জবা, এরালিয়া, থাই ফার্ন, ঝাউ, পাতাবাহার, কাটা মেহেদী, নীল ঘণ্টা, সিলভার ডাস্ট, বরুণ, নিমানিয়া, মালফুজিয়া, তমাল, ছিটকি, সাফেলরাসহ দেশী-বিদেশী নানা গাছ। সপ্তাহব্যাপী প্রদর্শনীটি শেষ হবে ২৯ জুন। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×