ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষ্য অর্জনে ২০ লাখ তথ্য প্রযুক্তিবিদ তৈরি করতে চাইছে

’২১ সালের মধ্যে আইসিটি খাতে ৫ বিলিয়ন ডলার আয় চায় সরকার

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২০ জুন ২০১৮

  ’২১ সালের মধ্যে আইসিটি খাতে ৫ বিলিয়ন ডলার আয় চায় সরকার

ফিরোজ মান্না ॥ তৈরি পোশাক খাতের পরেই তথ্যপ্রযুক্তি হবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত। এই খাত থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। একই সময়ে ২০ লাখের বেশি তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী তৈরি করা হবে। এই ২০ লাখ পেশাজীবী জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ জন্য সারাদেশে কানেক্টিভিটি তৈরি করা হচ্ছে। দেশের গ্রামাঞ্চল থেকেও যেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা কাজ করতে পারেন এমন অবকাঠামো গড়ে তোলার কাজ চলছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, কানেক্টিভিটি বা যোগাযোগের ব্যবস্থা স্থাপন করতে না পারলে সরকারের ভিশন ’২১ বাস্তবায়ন হবে না বলে মনে করেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাঈদ আহমেদ পলক। কানেক্টিভিটি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। যাতে শহরের সঙ্গে গ্রামের কোন পার্থক্য না থাকে। সমহারে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার সব ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে দেশের অনেক অঞ্চলে কানেক্টিভিটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। ভবিষ্যতে দেশের সকল ইউনিয়ন কানেক্টিভিটির আওতায় আসবে। এর বাইরে বেসরকারী উদ্যোগেও আইসিটি উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে আইসিটি বিষয়ও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে একজন শিক্ষার্থী গ্রাজুয়েশন শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি যেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ হিসাবে বের হবেন। ইনফো-৩ প্রকল্পের আওতায় দুই লাখ প্রান্তিক পর্যায়ের দপ্তর প্রতিষ্ঠানে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ প্রদান, ১৫ হাজার প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, ডিসি ও ইউএনও অফিসে কম্পিউটার ল্যাব, ইমার্জেন্সি সার্ভিস সেন্টার, ১০ হাজার গ্রোথ সেন্টারে পয়েন্ট অব প্রেজেন্স ও রেগুলেটরি ল্যাব, সাইবার সিকিউরিটি ল্যাব ও ভিএলএস ল্যাব স্থাপনসহ গ্রাম পর্যায়ে ই-কমার্স চালু করা হবে। প্রতিটি ডিজিটাল সেন্টারে একটি করে পয়েন্ট অব প্রেজেন্স প্রতিষ্ঠা করা হলে গ্রামের মানুষ নিজ বাড়িতে বসেই ব্যবসা-বাণিজ্য, নাগরিক সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এতে গ্রামীণ জনপদের মানুষের দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও ডিজিটাল বৈষম্য রোধ সম্ভব হবে। ১ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের মধ্যে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। সূত্র মতে, চীনের আর্থিক সহযোগিতায় স্টাবলিশিং ডিজিটাল কানেক্টিভিটি নামে নতুন একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কালিয়াকৈর, যশোর, সিলেট, রাজশাহী, নাটোরসহ বিভিন্ন স্থানে আইটি পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এসব পার্কে ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মাণের কাজ চলছে। আইটি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দেশী আইসিটি শিল্পের প্রসারে এসব পার্ক ও সেন্টার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তথ্য ও সেবা প্রদানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। সরকারি কার্যক্রম ও সেবা প্রদান পদ্ধতির ডিজিটাইজড করা হয়েছে। মানুষ এখন সহজেই সেবা পাচ্ছে। গত আট বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ অভিযাত্রায় তথ্যপ্রযুক্তির অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ ঘটেছে। এখন তৃণমূল পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তির সেবা পৌঁছে গেছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে শহরের সঙ্গে গ্রামের মানুষের পার্থক্য কমিয়ে আনা। দেশের সরকারী ১৮ হাজার ৫শ’ অফিসে কানেক্টিভিটি তৈরি করা হয়েছে। যে কেউ যে কোন সময় এসব অফিসের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারবে। শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ৫ হাজার ২৭৫ ডিজিটাল ইউনিয়ন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রতি মাসে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে সেবা পাচ্ছেন। আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে নতুন একটি নতুন খাত হচ্ছে এ্যাকাউন্টিং বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও)। এটাকেই এখন থেকে বেশি করে ফোকাস করা হচ্ছে। এটা যত বেশি প্রচার পাবে তরুণরা তত উৎসাহিত হবে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, ফ্রিল্যান্সিং তথ্যপ্রযুক্তির খাতে আয়ের অন্যতম উৎস। ঘরে বসেই এই খাত থেকে বড় অংকের টাকা আয় করা সম্ভব। সরকার এ জন্য দেশে ৫৫ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরি উদ্যোগ নিয়েছে। দক্ষ ফ্রিল্যান্সার গড়ে উঠলে ভিশন ’২১ মধ্যে দেশ কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌছবে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নকে এগিয়ে নিতে আইসিটি অবকাঠামো উন্নয়নসহ ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে সরকার।
×