ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যাসের নামে গ্রাহককে কি দিচ্ছে কর্ণফুলী- নানা প্রশ্ন

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ২০ জুন ২০১৮

 গ্যাসের নামে গ্রাহককে কি দিচ্ছে কর্ণফুলী- নানা প্রশ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্যাসের নামে চট্টগ্রাম এলাকার বিতরণ কোম্পানি কর্ণফুলী গ্রাহককে কি দিচ্ছে! প্রশ্ন উঠেছে গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানিটির হিসাব পর্যালোচনায়। বিতরণ কোম্পানিটি ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রায় ছয় থেকে ১১ ভাগের ওপরে সিস্টেম গেইনের কথা নিজেরাই বলছে। নিরীক্ষিত হিসেবে দেখানো হয়েছে কোম্পানি পেট্রোবাংলা থেকে যে পরিমাণ গ্যাস কিনছে তার থেকে বেশি বিক্রি করছে। তাহলে বাড়তি গ্যাস তারা পাচ্ছে কোথায়। গ্যাসের বদলে বাতাস দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির বিতরণ মার্জিন এবং ভোক্তা পর্যায়ে দাম বৃদ্ধি নিয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ওই শুনানিতে কর্ণফুলী বলছে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ সিস্টেম গেইন হয়েছে। এর পরের দুই বছরেও সিস্টেম গেইনের পরিমাণ আরও বেড়েছে যথাক্রমে ২০১৫-১৬ সালে এসে তা দাঁড়ায় ৮ দমিক ৬৯ ভাগ আর ২০১৬-১৭ সালে যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ১৬ শতাংশে। গ্রাহককে ফাঁকি থেকে রক্ষা করতে শিল্প গ্রাহককে ইভিসি এবং আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটার দেয়ার নির্দেশ দেয় এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ২০১৫ সালের দেয়া আদেশের এখনও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করেনি কোন কোম্পানি। বিতরণ কোম্পানি কর্ণফুলীর অবস্থাও অনেকটা অন্য কোম্পানির মতোই। গণশুনানিতে ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করে আসা অধ্যাপক শামসুল আলমের এক প্রশ্নের জবাবে কর্ণফুলী বিতরণ কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা এখনও পর্যন্ত তাদের এলাকায় ৭৮০টি মিটারের চাহিদার বদলে ৩১০টি স্থাপন করেছে। যা অর্ধেকেরও কম। অন্যদিকে ছয় লাখ আবাসিক চুলার সংযোগের বিপরীতে ৩০ হাজার মিটার বসিয়েছে। ফলে বিপুল পরিমাণ গ্রাহক সঠিক সেবা না পেয়ে অতিরিক্ত বিল দেন। আর গ্রাহক ঠকানোর এই পথেই সিস্টেম গেইন করে কোম্পানি। বিতরণ কোম্পানিটি দাবি করছে বাস্তবে প্রতি গ্রাহকের আবাসিক সংযোগে ৮৮ ঘনমিটার গ্যাসের হিসেবে ধরে বিল করা হলেও তারা প্রিপেইড মিটারে দেখেছে গ্রাহক ৬৮ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করছে। কিন্তু কনজ্যুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বলছে বাস্তবে গ্রাহকের চুলায় গ্যাস না থাকায় ২০ ঘনমিটারের বেশি গ্যাস ব্যবহার করা হয় না। রাজধানী ঢাকায় যেসব এলাকায় গ্যাসের সরবরাহ বেশি ওই সব এলাকার গ্রাহক প্রিপেইড মিটারে গ্যাস পান। যেখানে গ্যাসের সংকট তাদের কাউকেই প্রিপেইড মিটারে গ্যাস দেয়া হয় না। তবে কর্ণফুলী বিতরণ কোম্পানি বলছে তারা এমনটা করছেন না। শুনানিতে বিতরণ কোম্পানিটি জানায়, বর্তমানে গৃহস্থালির সংযোগ বন্ধ থাকলেও শিল্পে গ্যাস সংযোগ দেয়ার জন্য ৬৭৬টি চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। এই চাহিদার বিপরীতে ৩৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে ২০১৯-২০ পর্যন্ত এলএনজি এলেও অতিরিক্ত ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের অতিরিক্ত সরবরাহ পাওয়া যাবে। অধ্যাপক শামসুল আলম শুনানিতে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বাস্তবে সংকট সামাল দেয়ার কথা বলা হলেও এলএনজি আসার শুরুতেই বেশি চাহিদা তৈরি করা হচ্ছে। এতে করে সংকট কমার পরিবর্তে বৃদ্ধি পেতে পারে। যা কোনভাবেই সকলের জন্য শুভ হবে না। বিতরণ কোম্পানিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে কমিশনের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি বলছে এলএনজি মিশ্রিত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম হবে ৮ দশমিক ৩৭৯০ টাকা। এখন যে দাম রয়েছে ৩ দশমিক ৪৪৯৩ টাকা। বিতরণ কোম্পানিটি প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১১ দশমিক ৭১২৩ টাকা করার প্রস্তাব করেছিল। অর্থাৎ কমিশনের কারিগরি কমিটি ১৪২ ভাগ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। তিতাসের জন্য এই বৃদ্ধির সুপারিশ ছিল ১৪৩ ভাগ। কোম্পানিটি শুনানিতে ঘনমিটারে এক দশমিক ০৫ টাকা গ্যাসের বিতরণ মার্জিন বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেন। যদিও শুনানিতে তারা স্বীকার করেছে তারা ৬৭৫ কোটি টাকা বিভিন্ন কোম্পানিকে ঋণ দিয়েছে। এছাড়া আরো এক হাজার কোটি টাকার ওপরে বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর করা রয়েছে। প্রসঙ্গত শুনানিতে জানানো হয় তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি গড়ে শুধুমাত্র গ্যাসের দাম ৭৫ ভাগ বৃদ্ধির জন্য গত ২০ মার্চ কমিশনের কাছে একটি আবেদন করে। এর সঙ্গে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল, সঞ্চালন ব্যয়, বিতরণ ব্যয় ধরে এই বৃদ্ধির হার দাঁড় করিয়েছে কমিশনের কারিগরি কমিটি। শুনানিতে কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য রহমান মুর্শেদ, মাহমুদ উল হক ভুইয়া, মোঃ আব্দুল আজিজ খান, মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
×