ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে মাদক কারবারি ও জঙ্গী গ্রেফতারে অভিযান জোরদার হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৪ জুন ২০১৮

 ঈদে মাদক কারবারি ও জঙ্গী গ্রেফতারে অভিযান জোরদার হচ্ছে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ সারাদেশে চলমান মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে পুরোপুরি মাদক নির্মূল হয়নি। তবে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। আগের মতো আর হরহামেশাই মাদক মিলছে না। তারপরেও মাদক নির্মূল হয়নি। এজন্য ঈদের সময় মাদক ব্যবসায়ী ও জঙ্গীদের গ্রেফতারে অভিযান আরও জোরদার করা হচ্ছে। তাদের দেশে প্রবেশ ও দেশত্যাগ ঠেকাতে সীমান্তে রেডএলার্ট জারি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে, জঙ্গীদের গ্রেফতারে ঈদের আগে-পরে টানা বাংলাদেশ ও ভারতে যার যার দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী অভিযান চালাবে। অভিযানের বিষয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে তথ্য আদানের কাজ শেষ হয়েছে। ঈদের সময় অধিকাংশ অপরাধীরাই নাড়িরটানে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করে। সুযোগটিকে এবার কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বুধবার সরেজমিনে ঢাকায় মাদকের আতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত উর্দুভাষী, অবাঙালীদের এবং মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে গিয়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। আগের মতো আর মাদক বিক্রির জন্য হাঁক-ডাক নেই। রাস্তা-ঘাটে হরহামেশাই মাদক পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ক্যাম্পের অনেকের সঙ্গেই কথা বলে জানা গেছে, আগের মতো আর মাদকের আগ্রাসন নেই। অনেক কমে গেছে। মাদক ব্যবসায়ীদেরও আর দাপট দেখা যাচ্ছে না। অধিকাংশ মাদক ব্যবসায়ীদের আর ক্যাম্পে দেখা যাচ্ছে না। তারা আত্মগোপনে চলে গেছে। তবে মাদক পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। অত্যন্ত গোপনে চলছে স্বল্প পরিসরে চলছে মাদক ব্যবসা। তারা হুট করে ক্যাম্পে ঢুকে হয়ত আগ থেকেই যোগাযোগ থাকা ব্যক্তির কাছ থেকে মাদক নিয়েই চলে যাচ্ছে। ক্যাম্পবাসীরা জানান, গত ২৬ মে র‌্যাব স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মাদকবিরোধী অভিযান চালায় জেনেভা ক্যাম্পে। টানা ছয় ঘণ্টার সেই অভিযানে অন্তত দুই শতাধিক জনকে ধরা হয়েছিল। এদের মধ্যে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক কারবারি হিসেবে শনাক্ত হওয়া ১৫৩ জনকে গ্রেফতার করে। এরপর থেকে ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা একেবারেই কমে গেছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ব্যবসায়ী সাঈদের দুই ভাই সাজু ও রাজু এবং তার ছেলে কামরানও রয়েছে। অভিযানে সাঈদও আটক হয়েছিল। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা করার কোন অভিযোগ না থাকায় তাকে ছেড়ে দেয় র‌্যাব। সাঈদ বলছেন, তার ছেলে ও দুই ভাই পরিস্থিতির শিকার হতে পারে। তারা যদি সত্যিই মাদক ব্যবসায়ী হয়ে থাকে, সেটি তার অজান্তে হয়েছে। বিষয়টি তার জানা ছিল না। যদি জানা থাকত তাহলে তিনিই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলতেন। এছাড়া তাদের পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে দেয়াও বিচিত্র নয়। সাঈদের সঙ্গে পারিবারিক শত্রুতা থাকা সালাউদ্দিনকেও আটক করেছিল র‌্যাব। তার বিরুদ্ধেও কোন অভিযোগ না থাকায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সালাহউদ্দিন ও তার ছেলে রানার ভাষ্য তার পিতাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। ক্যাম্পবাসীরা বলছেন, র‌্যাবের অভিযানের পর প্রায় ১৭ দিন হয়ে গেলেও সেই অভিযানের রেশ ধরে এখনও ব্যক্তিগত শত্রুতা মেটাতে অনেকে অনেককেই ফাঁসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। যা ক্যাম্পের ভেতরে এক ধরনের বাড়তি উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। নিরীহ ক্যাম্পবাসীর মধ্যে এ নিয়ে রীতিমত আতঙ্ক বিরাজ করছে। শুধু সাঈদ বা সালাহউদ্দিনের ক্ষেত্রে এমন ঘটছে তা নয়। অনেকেই মাদকবিরোধী অভিযানকে পুঁজি করে যার যার শত্রুকে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। যা রীতিমত তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে তারা খুবই আতঙ্কিত। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগে ৪৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৬ হাজার ইয়াবা, প্রায় দেড় কেজি হেরোইনসহ নানা ধরনের মাদক। তিনি আরও জানান, মাদকবিরোধী অভিযানকে কেন্দ্র করে অনেকেই ব্যক্তিগত শত্রুতা হাসিলের যে চেষ্টা করে যাচ্ছে, সে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি ইউনিটকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×