ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

চিনিকলের প্রেসমাড থেকে সিএনজি গ্যাস উৎপাদন

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ১৩ জুন ২০১৮

চিনিকলের প্রেসমাড থেকে সিএনজি গ্যাস উৎপাদন

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ চিনিকলের ফেলে দেয়া প্রেসমাড বা গাদ প্রক্রিয়াজাত করে বায়ো গ্যাস উদ্ভাবন করছেন রাজশাহীর এক তরুণ উদ্যোক্তা। উৎপাদিত বায়ো গ্যাস পরিশোধনের মাধ্যেমে বাসা-বাড়ির জ্বালানি ও গাড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া গ্যাস উৎপাদনের পর কাঁচামালের যে উচ্ছিষ্ট থাকছে তা থেকে তৈরি হচ্ছে বায়ো সার। এই সার ব্যবহারে কৃষকদের উৎপাদন খরচ ৬০ ভাগে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সরকারী বিভিন্ন দফতরে জটিলতার কারণে থমকে আছে গ্যাস ও সারের বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া। সরকারী সহযোগিতা পেলে এই বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করে দেশের তরুণরাও নিজ উদ্যোগে স্বাবলম্বী হওয়ার সক্ষমতা রাখে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ উদ্যোক্তার নাম তরিকুল ইসলাম। তিনি রাজশাহী নগরের রাজারহাতা এলাকার চিকিৎসক রফিকুল ইসলামের ছেলে। তফিকুল ইসলাম যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার পাশাপশি একটি বায়োগ্যাস কোম্পানিতে চাকরি করতেন। যুক্তরাজ্যে লিভারপুল জন মরেস বিশ^বিদ্যালয় ও ইউনিভারসিটি অব ওয়েলস এ লেখাপড়ার পাশাপাশি বায়োগ্যাস কোম্পানি ‘ফাইডন এনার্জি’ এ দুই বছর চাকরি করেন। সেখানে থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরে নগরের বসুয়া এলাকায় নিজেই নির্মাণ করেন ইফাত ব্যায়ো সিএনজি প্লান্ট লিমিটেড। যেখানে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে চিনিকলের প্রেসমাড বা আখের রস পরিশোধনের উচ্ছিষ্ট গাদ। তফিকুল ইসলাম জানান, রাজশাহী নগরের রাজপাড়া থানার বসুয়া এলাকায় চার কাঠা জমির ওপর এই বায়ো গ্যাস প্লান্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা। তিনি বলেন, রাজশাহী সুপার মিল থেকে প্রেসমাড নেয়া হচ্ছে। ড্রাম ট্রাকের মাধ্যমে এগুলো নিয়ে যাওয়া হয়। এক টন প্রেসমাডের জন্য চিনিকল কর্তপক্ষকে মূল্য দিতে হয় ১০৫০ টাকা। তফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বায়োগ্যাস প্লান্ট দেশীয় গতানুগতিক বায়ো গ্যাস প্লান্ট থেকে আলাদা। প্লান্টটি সম্পন্নভাবে মাটির ওপরে তৈরি। আমাদের কাঁচামাল ও পানি মিশ্রণের জন্য স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ পরিমাণ বায়োগ্যাস উৎপাদন ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করার জন্য হিটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। ডাইজেস্টারে স্লো মিক্সিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয় সর্বোচ্চ পরিমাণ বায়ো গ্যাস উৎপাদনের জন্য। এর পর বায়ো গ্যাস পিউরিফিকেশনের (পরিশোধন) জন্য আধুনিক পিএসএ পদ্ধতি ব্যবহার করে কমপ্রেশনের মাধ্যমে বোতলজাত করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতিতে যে সব কমপোস্ট সার উৎপাদন করা হয় তা পরিবেশবান্ধব নয়। কারণ ব্যবহারকৃত কাঁচামাল বা ফিডস্টক থেকে কোনরূপ নবায়নযোগ্য জ্বালানি তৈরি হয় না। কিন্তু তাদের প্লান্ট থেকে উৎপাদিত সার পরিবেশবান্ধব। উন্নত প্রযুক্তির স্লারি ডিওয়াটারিং মেশিনের মাধ্যমে জৈবসার এবং পানি পৃথক করা হয়। আবার পানি পুনরায় বায়ো গ্যাস উৎপাদনে ব্যবহার করা যায়। তফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে আমরা প্রতিদিন দুই টন প্রেসমাড বায়ো গ্যাস প্লান্টের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করছি। এতে প্রতিদিন ৩০০ কিউবিক মিটার বায়ো গ্যাস উৎপাদন হয়। একই সঙ্গে প্রতিদিন জৈব সার উৎপাদান হয় ১.৫ টন। তিনি বলেন, ‘এই বায়ো গ্যাস ও বায়ো সার উৎপাদন বেশি হওয়ায় খরচও কম হয়। ফলে সাশ্রয়ী মূল্যে এই গ্যাস ও সার বাজারজাত করা সম্ভব হবে। বাসা বাড়ি ও গাড়িতে এই গ্যাস ব্যবহার করলে প্রায় ৪০ ভাগ (প্রতি সিলিন্ডার ৬০০ টাকা) এবং বায়ো সার ব্যবহারে কৃষকদের উৎপাদন খরচ ৬০ ভাগে কমিয়ে আনা সম্ভব। সরকারী সহযোগতিা পেলে আরও বড় আকারে প্লান্ট করে গ্যাস এ গ্যাস বিদ্যুত উৎপাদন কাজেও ব্যবহার করা যাবে।
×