মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠকে করেছেন। গণমাধ্যমগুলোতে এ বৈঠককে ঐতিহাসিক বলা হচ্ছে। দুদেশের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে এটাই প্রথম বৈঠক। তবে বৈঠক থেকে ঐতিহাসিক ফল অর্জিত হবে কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ওয়াশিংটন পোস্ট।
উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী বন্ধ করা এর উদ্দেশ্য ছিল। এ বিষয়ে দুনেতা কিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। উত্তর কোরিয়া নিরস্ত্রীকরণ করবে কি না তা অদূর ভবিষ্যতেই জানা যাবে। আন্তর্জাতিক বিধি নিষেধ ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পিয়ংইয়ং পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী চালিয়ে গেছে। উত্তর কোরিয়ার হাতে যে ক্ষেপণাস্ত্র আছে তা যুক্তরাষ্ট্রের মূলখ-ে আঘাত হানতে সক্ষম বলে ধারণা করা হয়। মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরে বহু প্রত্যাশিত এ বৈঠকে যাবেন না বলেও ট্রাম্প কয়েক মাস আগে বলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত দুই নেতা বৈঠকে বসেন। সাধারণত দুদেশের মধ্যে শীর্ষ পর্যায় বৈঠকের আগে নিচের দিকে কর্মকর্তা পর্যায়ে প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু হয়। পরে শীর্ষ পর্যায়ে গিয়ে সম্মেলনটি হয়। ট্রাম্প-উন বৈঠকের প্রক্রিয়া ছিল উল্টো। এ ক্ষেত্রে শীর্ষ পর্যায়ে প্রথমে উদ্যোগ নেয়ার পর কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা করে বৈঠকের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ব্যক্তিগত উদ্যেগে চেষ্টা চালিয়ে ট্রাম্প উনকে অস্ত্র কর্মসূচী থেকে ফিরিয়ে আনতে অনেকটাই সফল হয়েছেন। তিনি উনকে এটা বোঝাতে পেরেছেন যে পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী বাদ দিলে যুক্তরাষ্ট্র তার দেশের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেবে। এই কাজে সফল হওয়ার জন্য যে ধরনের দক্ষতা ও কৌশল প্রয়োজন দেড় বছর ক্ষমতায় থাকা ট্রাম্পের প্রশাসন পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে সেরকম কোন উদাহরণ তৈরি করতে পারেনি। উনের সঙ্গে বৈঠককে ট্রাম্প এতটাই গুরুত্বের সঙ্গে নেন যে, মিত্র জি-৭ জোটের সম্মেলন থেকে তড়িঘড়ি বেরিয়ে এসে সিঙ্গাপুর যাত্রা শুরু করেন। পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী একনায়ক উনের সঙ্গে সাক্ষাত করতে ট্রাম্প অর্ধেক পৃথিবীর সমান পথ উড়াল দেন। ট্রাম্প কিংবা উন কাউকে এ সময় খুব আবেগপ্রবণ মনে হয়নি। প্রথম একসঙ্গে ছবি তোলার সময় দুজনের কাউকে হাসতেও দেখা যায়নি। তবে একটু পর পোর্টিকোর নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দুজনকে বেশ স্বাভাবিক মনে হয়েছে। তারা এ সময় কিছুটা উচ্চস্বরেই হাসেন। সিটে বসার পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন ‘আমাদের মধ্যে কিছুটা জটিল সম্পর্ক রয়েছে।’
ইতিহাসে দেখা যায় বৈরী দেশের সরকার প্রধানরা যখন একসঙ্গে বৈঠকে বসেন তার ফল কখন দ্রুত কখনও দেরিতে এসেছে। ট্র্রাম্পের বর্তমান সফরকে অনেকে ১৯৭২ সালের তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের চীন সফরের সঙ্গে তুলনা করছেন। ওই সফরে নিক্সন চীনা নেতা মাও জেদংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং দুই দশকের বৈরিতা কাটিয়ে উভয় দেশ সামনে এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প ব্যক্ত করেছিল। এবারের বৈঠকের ফল কি হতে পারে সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পেতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। নিক্সনের ওই সফর নিয়ে বই লিখেছেন ইতিহাসবিদ মার্গারেট ম্যাকমিলান। তিনি মনে করেন নিক্সনের সফরের সঙ্গে ট্রাম্পের বর্তমান সফরের প্রেক্ষাপট এক নয়। নিক্সনের এতটা অনিশ্চয়তা নিয়ে চীনে যাননি, ট্রাম্পের সফর ফলপ্রসূ হওয়া সে তুলনায় অনেক বেশি অনিশ্চিত। নিক্সনের সফরের আগে দুদেশের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া সফরের লক্ষ্যও বিশাল কিছু ছিল না। কেবলমাত্র দুদেশের মধ্যে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনই ছিল উদ্দেশ্য। মার্গারেট বলেছেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেয়ে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ অনেক জটিল প্রক্রিয়া এবং তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। উনের সঙ্গে এবারের বৈঠককে তাই দেখা হচ্ছে অপ্রথাগত উপায়ে কূটনৈতিক সাফল্য অর্জনের চেষ্টা হিসেবে।