ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের সিরিজ বাঁচানোর লড়াই

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ৫ জুন ২০১৮

বাংলাদেশের সিরিজ বাঁচানোর লড়াই

মোঃ মামুন রশীদ ॥ খুব বেশি বিস্মিত কেউ হয়নি, তবে এরপরও চরম হতাশা এবং আক্ষেপ সঙ্গী হয়েছে। ক্রিকেট পরিম-লে আফগানিস্তান অনেক পরে পরিচিতি পেয়েছে বাংলাদেশের চেয়ে। তবে উন্নতির গতিটা এতই দ্রুত যে এর মধ্যেই টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়ে গেছে আফগানরা। সেই এগিয়ে থাকার জন্যই এবার ৩ ম্যাচের টি২০ সিরিজে আফগানদেরই ফেবারিট ধরা হয়েছিল। সেদিক থেকে রবিবার রাতে ভারতের নতুন ভেন্যু দেরাদুনে আফগানিস্তানের কাছে ৪৫ রানের হারটা ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোন থেকে স্বাভাবিকভাবে নেয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশ দলের জন্য নিশ্চিতভাবেই এভাবে পরাজয় লজ্জাজনক। ম্যাচে বাংলাদেশের যে অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে সেটা বারবারই মনে করিয়ে দিয়েছে পুরনো সময়ে ক্রিকেট পরাশক্তিদের কাছে নিজেরা কত দুর্বল ছিল সেসব নির্মম অতীতকে। আজ সিরিজের দ্বিতীয় টি২০-তে তাই সাকিব আল হাসানদের লড়াই বড় লজ্জা থেকে বাঁচার। সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার জন্য আজ জিততে হবে। আর আফগানিস্তান জিতে গেলে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ নিজেদের দখলে নেবে, সেটাও আবার এক ম্যাচ বাকি থাকতেই। দেরাদুনের রাজিব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে খেলা নিয়ে শুরু থেকেই সংশয় কাজ করেছিল। কারণ, এর আগে এই ভেন্যুতে কোন ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি। বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টি২০ ম্যাচ দিয়েই আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে। প্রচ- গরমের সঙ্গে স্পিনবান্ধব উইকেটে ভীতি ছিল আফগানদের ভয়ানক ঘূর্ণি আক্রমণকে। তাদের বোলিং বিভাগে বর্তমান বিশ্বের এক নম্বর টি২০ বোলার রশিদ খানের সঙ্গে অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবি ছাড়াও যোগ হয়েছেন এবার তরুণ উদীয়মান মুজিব-উর-রেহমান। আর তাদের কাছেই নতি স্বীকার করেছে বাংলাদেশ দল। অথচ এর আগে কিংবদন্তি সব বোলারদের বিপক্ষে মোকাবেলা করার সামর্থ্য দেখিয়েছে দেশের ব্যাটসম্যানরা। রশিদ আর মুজিব যেন ছিল ভয়ানক কোন এক ভাইরাস! সেই ‘জুজু’-তে আক্রান্ত হয়ে এই তিন বোলারের জন্যই প্রথম ম্যাচটিতে অসহায়ভাবে হেরেছে বাংলাদেশ দল। অথচ সিরিজ জয়ের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেই দেরাদুন গিয়েছিল জাতীয় দল। আফগানদের বিপক্ষে জয় পাওয়টাকে ‘ছেলের হাতের মোয়া’ হিসেবে নেয়ার খেসারত দিয়েছে খুব বেশি হাল্কা করে দেখে। ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষাতেই দেশের ক্রিকেট ভক্তরা হয়েছেন মারাত্মকভাবে বিস্মিত, বিরক্ত। বাংলাদেশের এই দলটি গত মার্চেই শ্রীলঙ্কার মাটিতে ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছিল। স্বাগতিক লঙ্কানদের পেছনে ফেলে উঠে গিয়েছিল ফাইনালে। আফগানিস্তান টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকলেও সার্বিকভাবে ক্রিকেটের মঞ্চে বড় দল এখন বাংলাদেশ। সে কারণে আফগানদের কাছে পরাজয়টা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য লজ্জাজনক ব্যাপারই। এরপরও যদি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে খেলতেন ক্রিকেটাররা সেটাও হয়তো মেনে নেয়া যেত। দীর্ঘ সময় পর ওপেনার তামিম ইকবাল খেলতে নেমেছিলেন ইনজুরি কাটিয়ে। ইনজুরির কবলে দল থেকে ছিটকে গেছেন পেস স্তম্ভ মুস্তাফিজুর রহমান। তাই মাত্র এক টি২০ খেলা অনভিজ্ঞ আবু জায়েদ রাহী দিয়ে বোলিং আক্রমণ শুরু করতে হয়েছে। দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা পেসার আবুল হাসান রাজুকে মনে হয়েছে অলি-গলির বোলার। আর সে কারণেই ম্যাচে ব্যাটিং-বোলিং এ দুই বিভাগেই পুরোপুরি পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ দল প্রতিপক্ষের চেয়ে। কোন ব্যাটসম্যানের মনোভাব দেখে মনে হয়নি তারা রশিদ-মুজিব কিংবা নবিদের মোকাবেলা করার সামর্থ্য রাখেন কিংবা সাহস বুকে ধারণ করেন। বলা হচ্ছিল স্পিনবান্ধব উইকেট। কিন্তু বাংলাদেশ দল আগে ফিল্ডিং নিয়ে স্পিনারদের বেশি ব্যবহার না করে পেসারদেরই পুরোপুরি ব্যবহার করেছে। রুবেল হোসেন ছাড়া বাকি দুই পেসার রাহী কিংবা রাজু দু’জনই আন্তর্জাতিক পরিসরে আহামরি কোন বোলার নয়। এমন একটি উইকেটে তিন পেসারকে নিয়ে দল সাজানোর বিষয়টিও কিছুটা আশ্চর্য ব্যাপারই। তিন পেসার রাহী ৩ ওভারে ৩৪, রাজু ৩ ওভারে ৪০, রুবেল ৪ ওভারে ৩২- মোট ১০ ওভারে ১০৬ রান দিয়েছেন। আর দলে সাকিবসহ, নাজমুল ইসলাম অপু, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত- এই চার স্পিনার থাকলেও পুরোপুরি ব্যবহার করা হয়নি। যেখানে সাকিব ৪ ওভারে মাত্র ১৯ এবং মাহমুদুল্লাহ ১ ওভারে ১ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন, সেখানে স্পিন আক্রমণের পুরো সুবিধাটা নেয়া হয়নি। স্পিনাররা ১০ ওভারে মাত্র ৬১ দিয়েছেন। আজ এই ভুলগুলো শুধরে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। একই ভেন্যু, হয়তো রবিবার যে উইকেটে খেলা হয়েছে তার পাশের উইকেটে ম্যাচ হবে। কিন্তু সেই স্পিনবান্ধব উইকেটই থাকবে এমনটাই বলা হয়েছে। আফগানদের যেমন স্পিন আক্রমণ সমৃদ্ধ, বাংলাদেশ দলও সেদিক থেকে পিছিয়ে নেই। সুবিধাটা উপযুক্ত সদ্ব্যবহার করে সাফল্য বের করে আনতে পারবে বাংলাদেশ? পারতেই হবে সাকিবদের, নয়তো সিরিজ হারের চরম লজ্জা বরণ করতে হবে।
×