ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্প কি নাফতা থেকেও বেরিয়ে আসবেন

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ৩০ মে ২০১৮

ট্রাম্প কি নাফতা থেকেও বেরিয়ে আসবেন

নির্বাচনের আগে ভোটারদের কাছে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি ছিল তিনি যে শুধু ইরান পরমাণু চুক্তি বাতিল করবেন তা নয়, নর্থ আমেরিকান ট্রেড এগ্রিমেন্ট বা নাফতার ব্যাপারেও একটা হেস্তনেস্ত করে ছাড়বেন। অথচ নয় মাস ধরে আলোচনার পরও নাফতাকে নতুন করে কিভাবে কাজ করানো বা রক্ষা করা যায় তা নিয়ে মার্কিন, মেক্সিকান ও কানাডীয় আলোচকরা অচলাবস্থায় আটকা পড়ে আছেন। এখন এ ব্যাপারে নতুন করে জরুরী তাগিদ সৃষ্টি হয়েছে এ জন্য যে ১৯৯৮ সাল থেকে যে চুক্তি বলে এই তিন দেশের মধ্যে সীমান্ত বাণিজ্য পরিচালিত হয়ে আসছে সেটাকে রক্ষা করার মতো চুক্তিতে পৌঁছানোর সময়টা ফুরিয়ে যাচ্ছে। মে মাসের মধ্যে কোন চুক্তি না হতে পারলে পরিস্থিতি অনেক বেশি জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তিনটি পক্ষ যদি মে মাসের মধ্যে একটা চুক্তিতে পৌঁছতে পারেও বা তার পরেও ট্রাম্পের পক্ষে সেটাকে সই দিয়ে আইনে পরিণত করতে পারার উপায় নেই। আমেরিকার সংবিধানে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষমতা প্রেসিডেন্টকে নয়, কংগ্রেসের হাতে দেয়া হয়েছে। বিধি অনুযায়ী বাণিজ্য বিষয়ক কোন চুক্তিতে সই করার অভিপ্রায় থাকলে প্রেসিডেন্টকে তা ৯০ দিনের মধ্যেই কংগ্রেসকে জানাতে হবে। এরপর চুক্তির ওপর কংগ্রেস সদস্যরা ভোট দিতে পারার আগে মার্কিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনকে এই চুক্তির সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে কংগ্রেসের কাছে রিপোর্ট করতে হবে। তার জন্য আরও সময় লাগবে। তারপর কংগ্রেসকে ৯০টি সেশন দিবসের মধ্যে চুক্তি সম্পর্কে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলে দিতে হবে। প্রতিনিধি পরিষদের স্পীকার পল রায়ান হিসাব করে দেখেছিলেন যে এ বছর নাফতা প্রশ্নে ভোট দিতে হলে আইন প্রণেতাদের ১৭ মের মধ্যে চুক্তিটি দেখতে হতো। কেন এই তাড়াহুড়ো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো? কারণ রাজনৈতিক আবহটাই এই চুক্তির অনুকূলে নয়! সেটা যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বেলায় তাই নয়, কানাডা ও মেক্সিকোর বেলাওয় প্রযোজ্য। কানাডার ফেডারেল নির্বাচন ২০১৯ সালের আগে হচ্ছে না। সেখানকার লিবারেল ও রক্ষণশীল দুটো দলই নাফতার পক্ষে। তবে মেক্সিকোর পরিস্থিতি অধিকতর জটিল। মেক্সিকোয় ১ জুলাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নির্বাচনের মাঠে পুরো ভাগে আছেন বিশিষ্ট বামপন্থী আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ও ব্রাডর নীতিগতভাবে তিনি নাফতা নিয়ে নতুন করে আলোচনার বিরোধী নন। কারণ নাফতা না থাকলে মেক্সিকোর অর্থনীতির ক্ষতি হবে যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডার চেয়ে অনেক বেশি। তবে তিনি জিততে পারলে এবং ডিসেম্বরে দায়িত্ব গ্রহণের সময়ের মধ্যে নতুন কোন চুক্তি না হলে তিনি নিশ্চিতভাবে মেক্সিকোর গোটা আলোচক দলকে বদলে ফেলে গোটা প্রক্রিয়াকে আগের স্তরে নিয়ে যাবেন। এরপর আছে আমেরিকায় রাজনীতি জটিল হিসাব নিকাষ। কংগ্রেসের যেসব সদস্য ৬ নবেম্বর পুনর্নির্বাচনের সম্মুখীন তাদের অনেকে এই বিতর্কিত বাণিজ্য চুক্তির ওপর ভোট দিতে অত উৎসাহী নন। তারপর আছে মধ্যবর্তী নির্বাচন। সে নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা যদি কংগ্রেসে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে তাহলে নাফতার পরিণতির ওপর তা সরাসরি প্রভাব রাখবে বলে মনে করা যায়। কারণ চুক্তির নতুন শর্তাবলীর অনেক যদি তাদের পছন্দ হওয়া তথাপি তারা ট্রাম্পের হাতে কোন রাজনৈতিক বিজয় তুলে দিতে চাইবে না। তারা তখন চুক্তিতে আরও পরিবর্তন আনার জন্য চাপ দিতে পারে। তাদের দেখাদেখি মেক্সিকোর লোপেজ ও ব্রাডর ও তার নিজস্ব কিছু সংশোধনীর জন্য চাপ প্রয়োগের সুযোগ নেবেন। তবে এসব কিছুর ওপর সবচেয়ে বড় প্রভাব থাকবে স্বয়ং ট্রাম্পের সমঝোতা হতে যত বিলম্ব ঘটবে, তত বেশি সেটার চুক্তিতে পরিণত হওয়ার সময় লাগবে এবং সেক্ষেত্রে এমন সম্ভাবনাই বেশি যে ইরান চুক্তির মতো ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত নাফতা থেকে একেবারেই বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে বসবেন। সূত্র : টাইম
×