ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের কেনাকাটা

জুতার চাহিদা বেড়েছে ডিজাইন, রং আকৃতিতে ভিন্নতা

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ২৮ মে ২০১৮

জুতার চাহিদা বেড়েছে ডিজাইন, রং আকৃতিতে ভিন্নতা

রহিম শেখ ॥ সারা বছর জুতার চাহিদা থাকলেও রোজার ঈদে তা কয়েকগুণ বাড়ে। আর এ চাহিদা মেটাতে রাজধানীর পুরান ঢাকার কারখানা ও গুলিস্তানের পাইকারি সব মার্কেটে চলছে জোর প্রস্তুতি। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জুতা কিনতে আসছেন পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। ঈদবাজার ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে রাত-দিন পরিশ্রম করে জুতা তৈরি করছেন কারিগররা। ক্রেতা আকর্ষণ এবং আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে এবার জুতার ডিজাইন, আকৃতি ও রংয়ে ভিন্নতা আনা হয়েছে। বিদেশী জুতার আধিপত্য এবং মার্কেটের সামনে মাল পরিবহনের জন্য কোন বিশেষ ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবসার পরিধি কমে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তান সংলগ্ন ফুলবাড়ীয়ায় রয়েছে বেশ কয়েকটি জুতার পাইকারি মার্কেট। এগুলো হচ্ছে- সিটি সুপার মার্কেট, জাকের সুপার মার্কেট, ঢাকা ট্রেড সেন্টার ও সিদ্দিক বাজার সমবায় মার্কেট। এসব মার্কেটে সর্বমোট ২ হাজার ৩শ’ পাইকারি জুতার দোকান আছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেটে পাইকারি ছাড়াও রয়েছে খুচরা দোকান। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এখানে আসছেন জুতো সংগ্রহ করতে। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, বসুন্ধরা সিটি গুলশান, ধানম-ি ও উত্তরার বড় বড় শপিংমল এবং ফ্যাশন হাউসে যেসব জুতো স্যান্ডেল শোভাবর্ধন করছে তার প্রায় ৬০ শতাংশের যোগান দেন এখানকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া ননলেদার ও প্লাস্টিকের অধিকাংশ জুতা আসে চীন, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে। তবে পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজার, মালিটোলা, নাজিরা বাজার, আলু বাজার, বংশাল, নবাবগঞ্জ ও ইসলামপুওে তৈরি দেশী জুতার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে অভ্যন্তরীণ বাজারে। পরিসংখ্যান বলছে, পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে জুতোর বাজার প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার। রবিবার জুতার বৃহত্তম বাজার ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, এ মার্কেটের এক থেকে সাত তলা পর্যন্তই জুতার শোরুম। রয়েছে কয়েক শ’ জুতার দোকান। এগুলোর মধ্যে আফজাল সুজ, তানিশা সুজ, সম্রাট সুজ, রংধনু সুজ, স্বদেশ সুজ, মাসুম সুজ, রুমান সুজ, ডিলাক্স সুজ, পদ্মা সুজ, যমুনা সুজ, কাজী সুজ, সিকদার সুজ, ঝর্ণা সুজ ও মিলন সুজসহ বিভিন্ন কোম্পানির দেশী জুতার দোকান। এর বাইরে এ মার্কেটে প্রায় অর্ধশত বিদেশী জুতার দোকান রয়েছে। তবে সিংহভাগ দোকানই দেশী জুতার। এসব দোকানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শবে বরাতের পর থেকেই জুতার পাইকারি বেচাকেনা চলছে। পুরো রমজান জুড়েই এ বেচাকেনা চলবে। কোন কোন দোকানে পাইকারি ক্রেতার সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। শিশু ও নারী-পুরুষের জন্য বাহারি ডিজাইনের জুতায় কানায় কানায় পরিপূর্ণ দোকানগুলো। রাজধানীসহ দেশের অন্য এলাকার খুচরা বিক্রেতারা এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ছুটছেন নতুন ডিজাইন ও সাশ্রয়ী দামের জুতার জন্য, যাতে ঈদবাজারে ভাল মুনাফা হয়। এবার বর্ষা মৌসুমে ঈদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জুতা আমদানি ও দেশী কারখানায় তৈরি জুতা শোরুমগুলোতে স্থান পেয়েছে। সিলেটের ব্যবসায়ী মজিদ মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, দেশী জুতার পাশাপাশি এখন বিদেশী জুতারও চাহিদা বেড়েছে। অন্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি বিক্রি হয় এই রোজার সময়। তাই বাড়তি চাহিদা শবে বরাতের পর থেকে এ পর্যন্ত তিন বার জুতা কিনতে এসেছি। সামনে আবারও আসাবেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান। এ দিকে পুরান ঢাকার পাদুকা পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের পাইকারি বাজার ধরতে বিরামহীন কাজ চলছে। ক্রেতাদের পছন্দসই নতুন নতুন ডিজাইনের জুতা তৈরি করছেন কারিগররা। ঈদবাজার ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে দিবারাত্রি পরিশ্রম করে জুতার কাজ করছেন তারা। শোরুমগুলোও বাহারি সব ডিজাইনের জুতার পসরা সাজিয়ে রেখেছে। ব্যবসায়ীর জানান, বিগত ঈদ মৌসুমে দোকানভেদে প্রতিদিন ২ থেকে ৫ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে। এবার ওই রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে ব্যবসায়ীরা আশা করছেন। জুতা আমদানির ক্ষেত্রে মূলত চীন ও থাইল্যান্ডের ওপর নির্ভর করে স্থানীয় আমদানিকারকরা। তবে বিদেশী জুতা দেশী জুতার বাজারে প্রভাব ফেলে না বলে মনে করেন জুতা ব্যবসায়ীরা। তবে বিদেশ থেকে যে জুতাগুলো আসে সেগুলোর মান যে খুব ভাল তা নয়। চীন, থাইল্যান্ড থেকে যে জুতা আসে সেগুলো ওইসব দেশের নিম্নমানের জুতা বলে জানান স্থানীয় জুতা প্রস্তুতকারকরা। এ সম্পর্কে লেদার টেকের স্বত্বাধিকারী মাসুদ আহমেদ বলেন, এটা স্বীকার করতে হবে চায়নার জুতার ডিজাইন আমাদের জুতা থেকে অনেক ভাল। আমরা যদি চায়নার ডিজাইনের সাহায্য নিয়ে দেশী ভাল মানের জুতা বানাতে পারি সে ক্ষেত্রে জুতার দামও কম হয়, ক্রেতার চাহিদাও বাড়ে।
×