ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে এনসিসিসির পরবর্তী সভায়

জেএসসি জেডিসি পরীক্ষায় ‘নম্বর ও বিষয়’ হ্রাসের আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়নি

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ২৮ মে ২০১৮

  জেএসসি জেডিসি পরীক্ষায় ‘নম্বর ও বিষয়’ হ্রাসের আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আলোচনা হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় নম্বর ও বিষয় কমানো নিয়ে আয়োজিত ন্যাশনাল কারিকুলাম কো-অর্ডিনেশন কমিটির (এনসিসিসি) সভা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আগের ঘোষণা অনুসারে এ সভায় নম্বর ও বিষয় কমানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। আগামী ৩১ মে এনসিসিসির পরবর্তী সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে এবারের পরীক্ষায় থাকছে মাল্টিপল চয়েস কোয়েশ্চন (এমসিকিউ)। এর আগে গত ২০ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জানানো হয়েছিল, শিক্ষার্থীদের চাপ কমাতে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় নম্বর ও বিষয় কমানোর বিষয়ে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানদের দেয়া প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এনসিসিসির ২৭ মের সভায়। ঘোষণা অনুসারে রবিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় আগের মতোই শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানদের দেয়া প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন এনসিসিসি‘র সদস্যরা। সভায় সকলেই মত দিয়েছেন নম্বর কমানো হলে অবশ্যই সিলেবাসের আকারও কমাতে হবে। একই সঙ্গে অধিকাংশ সদস্য এবারের পরীক্ষায় এমসিকিউ রাখার পক্ষে মত দিয়ে বলেছেন, সকল বিষয়ে আগামী বৈঠকে আরও আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলে ভাল হয়। এরপরই সভা শেষ হয়। পদাধিকার বলে শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেইন এ কমিটির সভাপতি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্য (শিক্ষাক্রম) এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং সকল শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় অংশ নেন। পাঠ্যবই, কারিকুলাম ও সিলেবাস এবং পাবলিক পরীক্ষায় যে কোন পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার এনসিসিসির। সভা শেষে জানানো হয়, চলতি বছরের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় এমসিকিউ থাকছে। তবে, কয়েকটি বিষয় কমানো এবং প্রশ্নের মান বণ্টনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ৩১ মে আরও একটি সভা করবে এনসিসিসি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন বলেন, বিষয় ও নম্বর বণ্টনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরেকটি বৈঠক হবে। জেএসসি-জেডিসিতে এমসিকিউর বিষয়ে আগের সিদ্ধান্তই বহাল। এসএসসি ও এইচএসসিতে এমসিকিউ বন্ধ করতে হলে নানাদিক চিন্তা করতে হবে। এটা একান্তই আমার নিজস্ব মতামত। আন্তঃ শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ জিয়াউল হক জানিয়েছেন, শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানদের দেয়া প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে কমিটি। আলোচনা হয়েছে নানা বিষয়ে। কি করলে সবচেয়ে ভাল হয় তা নিয়ে মত এসেছে। এছাড়া সকলেই একমত যে, নম্বর কমানো হলে সিলেবাসের আকার কমানো হবে। তবে আগামী বৈঠকে এসব বিষয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের চাপ কমাতে কিছু বিষয় কমানো দরকার। তাই চলতি বছর থেকে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় ৬৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বছরের পরীক্ষাতেই বিষয় ও নম্বর কমবে। আর মাদ্রাসার জেডিসিতে আগেও মোট নম্বর বেশি ছিল জেএসসির তুলনায়। এখন সেখানেও নম্বর কমবে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম ছায়েফ উল্লাহ বলেন, কিছু বিষয় কমানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আমাদের জেডিসিতে আরবি দুই পত্রে ১০০ নম্বর করার প্রস্তাব আছে। এ ছাড়া উর্দু ও ফারসি বিষয়ে শিক্ষার্থী একেবারে নেই বললেই চলে। এ বিষয় দুটি রাখা হবে কি না, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে। গত ৮ মে শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরা এই দুই পরীক্ষায় নম্বর ও বিষয় কমানোর প্রস্তাব করেছিলেন। আন্তঃ শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ জিয়াউল হক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব অনুসারে চতুর্থ বিষয় ছাড়া পরীক্ষা দিতে হবে না কৃষি শিক্ষা ও গার্হস্থ্যবিজ্ঞান বিষয়ের। রবিবারের সভা শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শাখার কর্মকর্তারা বলেছেন, এমসিকিউ পুরোপুরি তুলে দিতে হলে আগে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে বসতে হবে। এর বিকল্প কী হবে তা ঠিক করতে হবে। এখন মে মাস চলছে। নভেম্বরে পরীক্ষা। মাত্র পাঁচ মাস আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দিলে সমস্যা হতে পারে। এ জন্য চলতি বছরের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় এমসিকিউ বাদ দেয়ার কোন পরিকল্পনা নেই। বোর্ড চেয়ারম্যানদের প্রস্তাবের বিষয়ে জানা গেছে, গত বছর বাংলা ও ইংরেজী প্রতিটি বিষয়ে ১৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। এবার থেকে দুই পত্রে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র এবং ইংরেজী প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের জন্য (উভয় পত্র মিলে) ১০০ করে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। গণিত, বিজ্ঞান, ধর্ম, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের জন্য ১০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তথ্য-প্রযুক্তির পরীক্ষা হবে ৫০ নম্বরের। গত বছর কৃষি ও গার্হস্থ্যবিজ্ঞান বিষয় থাকলেও এবার থেকে তা বাদ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেডিসি পরীক্ষায় আরবি দুই পত্রের ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। উর্দু ও ফারসি বিষয়ে ছাত্র কম থাকায় তা তুলে দেয়া যায় কি না সেটাও বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে। জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় মোট সাতটি বিষয়ে ৬৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়া হবে। ২০১৬ সালের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় চারু ও কারুকলা, শারীরিক শিক্ষা ও কর্মমুখী শিক্ষা থাকলেও ২০১৭ সালের পরীক্ষায় তা বাদ দেয়া হয়েছিল। এবার বাদ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে কৃষি শিক্ষা ও গার্হস্থ্যবিজ্ঞান। তবে এই বিষয়ের ধারাবাহিক মূল্যায়ন করবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
×